নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপিতে

  21-03-2018 08:21AM



পিএনএস ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন দেড় মাস ধরে। তার দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি। তবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাওয়াও বিএনপির লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সারা দেশের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো জোরদার করা অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন এবং নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে ফের ৩৭টি টিম গঠন করা হয়েছে। দল নেতারা খুব দ্রুত জেলা সফরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করবেন।

জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা উপস্থিত থাকবেন।

জানা যায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে উপজেলা পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ আন্দোলন সফলে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠ নেতাদের বার্তা দিতে তৃণমূল সফর শুরু করবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে আগামী জুলাই-আগস্ট নাগাদ চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চান। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের দাবি আদায় হবে।

এ দিকে তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো জোরদার করা অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন এবং নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে ফের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ৩৭টি টিম গঠন করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক ২২ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দলনেতাদের জেলা ও মহানগর সফর শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং যুগ্ম মহাসচিবদের টিম লিডার করা হয়েছে। এসব টিমের নেতারা দেশব্যাপী ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবেন। এর আগে কাল বৃহস্পতিবার দলনেতাদের যৌথসভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দল নেতারা জেলা সফরে যাবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ৩৭টি টিম গঠন করেছি। তারা খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকা সফর করে কর্মিসভা করবেন। জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে সারা দেশের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতারা আগামী মাসের শুরুর দিকে জেলা সফরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করবেন। তবে আগামী নির্বাচনে যারাই দলের প্রার্থী হবেন তাদের নিজ নিজ এলাকায় যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। অতীতে যারা একাধিকবার নির্বাচন করে কোনো একবার পরাজিত হয়েছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রথমবারের মতো নির্বাচন করেছেন এবং আগামী নির্বাচনে যারা নতুন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তাদের সবাইকে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে ঠিক কী কারণে আবারো প্রার্থী হিসেবে নিজেকে যোগ্য মনে করেন তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

যারা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন তাদের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড খোঁজখবর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কেননা আগামী নির্বাচনে শুধু বিএনপি থেকেই নয়, বিশদলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দল থেকেও আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। যে কারণেই উল্লিখিত বিষয়গুলো সামনে রেখে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সমাবেশের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ আন্দোলন সফলে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের সাজায় কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, গণঅনশন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির জনসভাও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামে সমাবেশ হয়েছে। আগামী ২৯ মার্চ ঢাকা, ৩১ মার্চ রাজশাহী এবং ৭ এপ্রিল বরিশালে সমাবেশের তারিখ রয়েছে। বাকি বিভাগীয় শহরগুলোতেও পর্যায়ক্রমে সমাবেশ হবে। এরপর ১৯টি বৃহত্তর জেলাসহ পর্যায়ক্রমে সব জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। সবশেষে উপজেলা পর্যায়েও সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশে গণজোয়ার সৃষ্টি করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় বিএনপির লক্ষ্য।

তৃণমূলের এসব সমাবেশে বিএনপি নেতারা দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবিও তুলে ধরছেন। একই সাথে সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুঃশাসন ও দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এ অবস্থান অব্যাহত রাখবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাবো। এই দুই দাবি আদায়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায় পর্যন্ত সমাবেশ করব। সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা চলছে। বিভাগীয় শহরে সমাবেশ শেষে প্রথমে বৃহত্তর জেলাগুলোতে সমাবেশ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে সব জেলায় সমাবেশ হবে। সবশেষে উপজেলাপর্যায়েও আমরা সমাবেশ করব।

জনগণকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করা হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন