জাতীয় পার্টি নিয়ে সংসদে একি বললেন কাজী ফিরোজ

  20-06-2018 03:53AM

পিএনএস ডেস্ক : জাতীয় পার্টি ‘খারাপ’ হলেও সামরিক আইন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ‘মধুর’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন তার প্রথম বাজেট দেন, তখন দেশে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সামরিক আইন চলছে। তিনি সামরিক সরকারের বাজেট দিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টির না। আমরা জাতীয় পার্টির কথা ভুলে বলে ফেলি। যখন বলা হয় উনি জাতীয় পার্টির আমলে দু’টি বাজেট দিয়েছেন, উনি ক্ষেপে যান। উনি জাতীয় পার্টির বাজেট দেন নাই। জাতীয় পার্টি উনার কাছে খারাপ কিন্তু সামরিক আইন উনার কাছে খুবই মধুর।’

মঙ্গলবার (১৯ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে সোয়া ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রশাসনে এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে প্রশাসনে কাউকে পাওয়া যাবে না। এরা কোথায় ছিল? কে তাদের আওয়ামী লীগ বানাইল? প্রশাসনে আওয়ামী লীগ হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত বড় আওয়ামী লীগ এটার জন্য গবেষণা চলছে। কার নানার বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ছিল, কার চাচার সাথে কার বিয়ে হয়েছিল— এসব দিয়ে আওয়ামী লীগ বের করার চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগের বাইরে কাউকে পাওয়া যায় না। আসল আওয়ামী লীগ আর নকল আওয়ামী লীগ বেছে নেওয়া কঠিন হবে। তাদের দাপট এত বেশি বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষকে তারা তোয়াক্কা করে না। তারা ধরাকে সরা মনে করে, তারা তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছে— এগুলো ভালো লক্ষণ না। এখন রাস্তায় হাঁটতে গেলে গায়ে ধাক্কা লাগলে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। এটা ভালো লক্ষণ না। এসব তেলবাজ, তোষামোদি বন্ধ না করলে সরকার সামনে বড় বিপদে পড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন ফিরোজ রশিদ। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিক দর্শন নেই, রাজনৈতিক দর্শন নেই। তাই এই বাজেটকে বাজেট বলা যায় না। অর্থমন্ত্রী যে দলের পক্ষ থেকে বাজেট দিয়েছেন, সেই দলের নীতি-আদর্শ-দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই বাজেট। এতে বিষ আর মধু একসাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দেশের জনগণ তো বিষ আর মধু একসাথে খায় না।

জাতীয় পার্টির এই সিনিয়র সংসদ সদস্য আরো বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তান আমলে ২২ ধনিক শ্রেণির পরিবর্তে এখন ১২২ ধনিক পরিবার তৈরি হয়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৮০ ভাগ ১২২ পরিবারের হাতে জিম্মি, আর বাকি ২০ ভাগের মালিক অন্যরা। অর্থমন্ত্রী এই ধনিক শ্রেণির জন্যই বাজেট দিয়েছেন। যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন, তাদের সুবিধা দিতেই এই বাজেট। উনি ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিয়ে বাজেট দিয়েছেন— এটা হতে পারে না। উনি বাজেটের দর্শনই নষ্ট করে দিয়েছেন। আমরা এটা মানতে পারি না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তো কোনোদিন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের কাছে মাথা নত করেননি। আপনি কোন লুটেরাদের কাছে মাথা নত করবেন? ব্যাংকে লুটপাট অর্থ মন্ত্রণালয় নীরব, বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব, অর্থ বিভাগ নীরব। সবাই নীরব, আর নিচের দিকে ব্যাংকগুলোতে চলে লুটপাট। ব্যাংকের ওপর মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। কারণ ব্যাংক এখন একটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। পারিবারিক ব্যাংক করে অবাধে লুটপাট চলছে।

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ টানা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলে অহংকারও বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে এখন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অহংকার।’ এরশাদ সরকারের আমলেও বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; কিন্তু সবাই মিলে হরতাল দিয়ে সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন