অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা ভিপি নুরের!

  25-09-2020 03:18PM

পিএনএস ডেস্ক:ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ছাত্রীর সঙ্গে নীলক্ষেত্রে দেখা করে মীমাংসার প্রস্তাব ও হুমকির যে তথ্য বা অভিযোগ, সেটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।

বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ডাকসুর সাবেক ভিপি তার বিরুদ্ধে আসা ছাত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘোষণা দেন।

এর আগে গত রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ধর্ষণের অভিযোগে মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে ভিপি নুরসহ অপর ৫ আসামিকে ধর্ষণে সহযোগিতাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর অভিযোগ, চলতি বছরের ২৪ জুন নুরসহ কয়েকজন তার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করেন বিষয়টি সমাধারে জন্য। তবে ফেসবুক লাইভে সে কথা অস্বীকার করেছেন নুর।

লাইভে ভিপি নুর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের আশপাশে কিংবা নীলক্ষেত এলাকায় সিটি টিভির ফুটেজ রয়েছে। পাশে নিউমার্কেট থানা রয়েছে। তো, এই একটা তথ্য যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি নীলক্ষেত্রে ২৪ জুন ওই মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছি বা বিষয়টি মীমাংসার ব্যাপারে কথা বলেছি, তাহলে আমি সমস্ত অভিযোগ মাথা পেতে নেবো। আমি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবো এবং নিজেকে অপরাধী বলেই মনে করবো ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও বলবো।’

তিনি বলেন, ‘ওই মেয়েকে যারা চেনেন বা সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক আছেন, তারা একটি বিষয় খালি প্রমাণ করুক যে, মেয়েটির সঙ্গে আমরা ২৪ তারিখ মীমাংসার জন্য নীলক্ষেত্রে বসেছি এবং সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম কিংবা সেখানে আমরা তাকে হুমকি দিয়েছি। এটা যদি প্রমাণ করতে পারেন, দ্যাটস এনাফ। আর কোনও কিছুর দরকার হবে না। আমি অপরাধ মাথা পেতে নেবো।’

‘মেয়েটি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে, পুলিশ এজাহারভুক্ত করেছে। আমি জানি না, পুলিশ আসলে কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটাকে এজাহারভুক্ত করলো? প্রশ্ন রাখেন নুর।

ফেসবুক লাইভে তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো জানি, আমি অপরাধী কিনা। এখনও সত্য কথা বলছি, নিজের বুকে জোর আছে। এই মেয়ের সঙ্গে আমার এ ধরনের কোনও কথাবার্তা হয়নি। আমি তাকে হুমকিও দিইনি। আমি কোনও অপরাধ করিনি।’

এদিকে গেল সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহায়তা ও হেয়প্রতিপন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে একই ব্যক্তিদের আসামি করে ডিএমপির কতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করেন ওই ঢাবি ছাত্রী।

লালবাগ থানায় করা মামলায় ভিপি নুর ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন (২৮), যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮), একই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল কাফি (২৩)।

কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় নাজমুল হাসান সোহাগ ১ নম্বর ও হাসান আল মামুনকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। দুটি মামলাতেই নুরকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এরইমধ্যে মামলার প্রধান আসামি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে গেল বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

লালবাগ থানায় করা মামলার এহাজারে বাদী উল্লেখ করেন, ‘আসামি হাসান আল মামুন ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সুবাধে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়।’

এহাজারে আরও বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ২৯ জুলাই আসামি আমার বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে আসামির সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এর ধারাবাহিকতায় আসামির সঙ্গে আমার বিভিন্ন সময়ে ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আসামি আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি গত ৩ জানুয়ারি আনুমানিক দুপুর ২টায় তার বাসা নাবাবগঞ্জ বড় মসজিদ এলাকায় যেতে বলে এবং আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ধর্ষণ করে।’

ভুক্তভোগী বিবাদী এজাহারে আরও বলেন, ‘ঘটনার পর গত ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা হতে দেয়নি। এর আগে মামুন বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে।’

‘এরপর উপায়ান্তার না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে, মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে একটা সুব্যবস্থা করে দেবো। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেত্রে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেয়া হয়। নুর আরও জানায়, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’

মামলার এজাহারে ওই ছাত্র আরও বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।’

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন