‘জার্মান’ দুই ভাইয়ের বাংলাদেশ জয়ের চ্যালেঞ্জ

  31-07-2018 09:15PM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার জন্য ট্রায়াল দিতে এসেছেন জার্মান প্রবাসী দুই ভাই সামির ও জিব্রাইল। দারুণ ফুটবলার এই দুজন।

দেশের ফুটবলে ভালো খেলোয়াড়ের সংকটের মধ্যে জামাল ভূঁইয়া আশ্চর্য এক ব্যতিক্রম। এক সময়ে ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলারকে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে সুযোগ দিয়েছিলেন সে সময়ের ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। গত পাঁচটি বছর এই জামাল জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণ করে পরিণত হয়েছেন দলের অন্যতম সেরা ভরসায়। জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড এই মুহূর্তে তাঁরই হাতে। জাতীয় ফুটবল দল এখন নতুন কয়েকজন ‘জামাল ভূঁইয়া’কে খুঁজে পেতে মরিয়া। সে কারণেই জার্মানি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ভাই জেস সামির শামসুল ও জিব্রাইল লুইস শামসুলকে।

জামাল ছাড়াও আরও কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার এর আগে ট্রায়াল দিয়েছেন। জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন—এমন বেশ কয়েকটি দেশ থেকেই। কিন্তু তাদের কাউকেই যোগ্য মনে করেনি বাফুফে বা জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্ট। তবে এবার জার্মানি থেকে আসা সামির ও জিব্রাইলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সম্ভাবনা। বায়োডাটাই কেবল নয়, বল পায়ে কারিকুরি দেখেও বোঝা গেছে দুজনই যথেষ্ট উন্নতমানের ফুটবলার।

সামির শামসুল ও জিব্রাইল শামসুলের উচ্চতা ও শারীরিক গঠনে প্রথম দর্শনেই ফুটবলার হিসেবে মন কেড়ে নেওয়ার মতো। ২৭ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক সামিরের জার্মান অনূর্ধ্ব ১৫ জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতা আছে। উনিশে পা রাখা লেফট উইঙ্গার জিব্রাইলের নামের পাশে অমন কিছু না থাকলেও প্রতিভায় মোটেও পিছিয়ে নেই তারা। জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানিতে হলেও বাবার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশে জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তারা। ভবিষ্যতে যেন খেলতে পারেন, তাই ট্রায়াল দিচ্ছেন এই দুজন। আপাতত তাঁরা দুজনই কাজ করছেন প্রিমিয়ারে নতুন উঠে আসা ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের যুব দলের সঙ্গে।

সামির শেষ কয়েক বছর দলে খেলছেন রোমানিয়ার নিচু ডিভিশনের ক্লাব এ এস সুদিনক্স ভিসিয়াতে। এর আগে জার্মান তৃতীয় বিভাগের ক্লাব ভিএফএল ওসনাব্রাকের হয়ে মাতিয়েছেন বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা জার্মান তারকামারিও গোটশে ও সুইজারল্যান্ডের তারকা ফুটবলার জাদরান শাকিরির বিপক্ষেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। আর তাঁর সাত বছরের ছোট জিব্রাইল বর্তমানে খেলছেন জার্মান তৃতীয় বিভাগের ক্লাব ব্লাও ওয়েব হোলেজের যুব দলে।

দুই ভাইকে ভালো খেলোয়াড়ের সার্টিফিকেট দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের যুব দলের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানি, ‘জুনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন করায় পুরোপুরি তাঁদের মান যাচাই করা যাচ্ছে না। তবে কোনো সন্দেহ নেই দু ভাই-ই খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি তো মনে করি দুজনেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার মতো। ছোট ভাই জিব্রাইল তো ট্যাকটিক্যাল খুবই উঁচুমানের। সামিরের একটু ফিটনেস সমস্যা আছে। শারীরিকভাবে ফিট হয়ে গেলে সে জাতীয় দলের জন্য খুবই ভালো অপশন হতে পারে।’

সামির ও জিব্রাজিলের বাবা শামসুল আলম ১৯৮৭ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। জার্মানি নাগরিক বেটিনাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন সেখানেই। শামসুল আলম ও বেটিনার দুই ছেলে ছাড়াও আছে একটি মেয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে-ও ফুটবলার। অনেক ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন তিনি। বীজ বুনে দিয়েছেন পিতৃভূমিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার।

দুই ভাইই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলতে পারার ব্যাপারে। সামির নিজেই জানিয়েছেন সে কথা, ‘আমি কারও সঙ্গে নিজের তুলনা করতে চাই না। আমি ইউটিউবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের বেশ কিছু ম্যাচের ভিডিও দেখেছি। আমার মনে হয়েছে নিশ্চিতভাবেই আমি বাংলাদেশের জার্সি পড়তে পারব। জার্মানিতে আমার সঙ্গে খেলা বেশ কয়েকজন বন্ধু এখন আফগানিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। ওরা পারলে আমিও অবশ্যই পারব।’

স্বপ্নটা এখন দেখা যেতেই পারে। বাংলাদেশের রক্ষণভাগ সামলাচ্ছেন প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার সামির। আর লেফট উইং দিয়ে আড়াআড়ি বক্সে ঢুকে বাঁকানো শটে গোল করছেন জিব্রাইল। কে জানে সামির-জিব্রাইলে হয়তো বদলে যেতে পারে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ভাগ্যও!

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন