সরাইলে ইকরাম হত্যার তদন্ত অব্যাহত

  28-09-2020 04:45PM

পিএনএস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : প্রায় ১৪ মাস আগে নির্মমভাবে খুন হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সরকারি কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র ইকরাম হোসেন। এ খুনের ঘটনার জট খুলতে পুলিশ জোরালো তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। বিগত ২০১৯ সালের ১১ আগস্ট সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ বারজিবিপাড়ায় খালাত বোন লাভলী বেগমের বাড়ির খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ইকরামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইকরাম হোসেন (১৬) একই এলাকার সহিদুল ইসলামের ছেলে।

এদিকে লাশ উদ্ধারের দিনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারজিবিপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ও তার ছোটবোন স্কুল শিক্ষিকা নাজমা বেগম এবং নিহতের ভাগিনা ও সরাইল সদরের বড্ডাপাড়া গ্রামের মজনু মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে ইমরানুল হাসান সাদী এই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন (১২ আগস্ট) এ হত্যাকাণ্ডের দায়ভার স্বীকার করে নিহত ইকরামের ভাগিনা প্রতিবন্ধী ইমরানুল হাসান সাদী (১৮) স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়। সাদী পুলিশকে জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে সে সহ শিমুল ও সোহাগ নামে দুই যুবক অংশ নেয়। লাভলী বেগমের বাড়ির লাগোয়া প্রতিবেশি শিমুল ও সোহাগ তারা দুই ভাই। বারজিবিপাড়ার মৃত রবিউল্লাহ'র ছেলে তারা। বড় ভাই শিমুল পেশায় পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী; আর সোহাগ কাঠমিস্ত্রী।

পরে ১২ আগস্ট নিহত ইকরামের বাবা সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ইমরানুল হাসান সাদী, নাজিম উদ্দিন, শিমুল, সোহাগ ও নাজমা বেগম এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ নাজিম উদ্দিন, নাজমা বেগম, শিমুল ও সোহাগকে পুলিশ রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে কিছুই পায়নি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে নাজমা বেগম ও নাজিম উদ্দিন আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন। সাদী, শিমুল ও সোহাগ জেলহাজতে রয়েছে।

এদিকে সাদী এ খুনের ব্যাপারে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিলেও এ নিয়ে খোদ প্রশ্ন তুলেছেন নিহত ইকরামের নিকটাত্মীয় সহ প্রতিবেশী লোকজন। সাদীর পরিবারের লোকজনও দাবি করছেন এ খুনের সঙ্গে সাদীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আদালতে সাদী যা বলেছে তা শেখানো মনগড়া কথা।

নিহত কলেজ ছাত্র ইকরামের মাতা নাসরিন বেগম জানিয়েছেন, ইকরাম ও সাদী সম্পর্কে মামা ও ভাগিনা। সাদী তার ছেলেকে খুন করবে; এমন কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। সাদীর সঙ্গে ইকরামের কোনো বিরোধ ছিল না। তাছাড়া আশপাশের কারোর সঙ্গে ইকরাম কিংবা তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। নাসরিন বেগম তার ছেলের খুনের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

তবে লাভলী বেগম দাবি করেছেন, এ খুন শিমুল ও সোহাগ অর্থের লোভ দেখিয়ে প্রতিবন্ধী সাদীকে নিয়ে করেছে। শিমুলদের সঙ্গে লাভলী বেগমের বিরোধ রয়েছে। লাভলী বেগমের মেয়ে সুমাইয়াকে প্রেম নিবেদন করতো শিমুল। ইভটিজিং মামলায় শিমুলকে ছয়মাসের জেল খাটিয়ে আনেন লাভলী বেগম। নাজমা বেগম ও তার ভাই নাজিম উদ্দিন শিমুলের পক্ষে কাজ করেন। এ জন্য লাভলী বেগম তাদের ওপর নাখোশ ছিলেন। ইকরামের সঙ্গে শিমুলের এ নিয়ে আগে একাধিকবার কথা-কাটাকাটি হয়। এসবের প্রতিশোধ নিতেই ইকরামকে খুন করে শিমুল, এমন দাবি লাভলী বেগমের। তিনি এ খুনের ঘটনায় তাড়াতাড়ি চার্জশীট দাখিলের দাবি জানান।

এদিকে শিমুল ও সোহাগের বিধবা মাতা মনেয়ারা বেগম দাবি করেন, তার দুই ছেলে শিমুল ও সোহাগকে ষড়যন্ত্র করে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। ঘটনার রাতে শিমুল ঘরে জ্বরে ভুগছিলেন। মাঝরাত পর্যন্ত অসুস্থ ছেলে এবং বাড়ির উঠানে ফার্মের মুরগীর বাচ্চাদের দেখাশোনা করেছেন মনোয়ারা বেগম। সেদিন (১০ আগস্ট) গভীররাতে লাভলী বেগমের ঘরের পেছনে সড়কে একটি মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছিল জানিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, যেদিন ইকরামের লাশ উদ্ধার হয়; সেদিন রাত থেকে সকাল পর্যন্ত লাভলী বেগম, তার মেয়ে চাঁদনী এবং লাভলী বেগমের দুই ভাই বিপ্লব ও পল্লবের ভূমিকা ছিল সন্দেহ জনক। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধারের আগেই রক্তমাখা সাদীকে গোসল করিয়ে নানা লাল মিয়ার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আশপাশের ঘরের লোকজন আসার আগে লাভলীর বাবার বাড়ির লোকজন এসে ইকরামের বস্তাবন্দি মরদেহ নিয়ে হৈচৈ শুরু করে দেয়।

কলেজ ছাত্র ইকরাম হোসেন একজন ভালো ছেলে ছিল; জানিয়ে মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, আমার ছেলে সোহাগ ঘটনার দিন বাড়িতেই ছিল না। সে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় একটি দোকানে থেকে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। ঘটনার ২০/২৫ দিন আগে সে বাড়িতে এসেছিল। ঘটনার দিন বিকেলে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল সোহাগের। কারণ পরদিন কোরবানি ঈদ। এ খুনের সবকিছু জানে লাভলী, তার মেয়ে চাঁদনী এবং লাভলীর ভাই বিপ্লব ও পল্লব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ খুনের প্রকৃত রহস্য আয়নার মতো পরিস্কার হয়ে যাবে। এমন দাবি লাভলী বেগমের প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইকরাম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম চন্দ্র দে জানান, এটি চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। এ মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে কিছু কিছু বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শও নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া আলামত রিপোর্টের জন্যে সিআইডি ও পিবিআই পুলিশের সহযোগিতাও নেয়া হচ্ছে। কিছু রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। অপরদিকে অধিকতর তদন্তও অব্যাহত আছে। এ কারণে চাজর্শীট দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি দ্রুত এ মামলাটির ভালো রেজাল্ট সবাই দেখতে পাবেন।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন