রমজান সামনে রেখে তেল-চিনি-ডাল কিনবে সরকার

  15-01-2025 12:14AM

পিএনএস ডেস্ক: আসন্ন রমজান মাসে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ভোজ্য তেল, চিনি ও ডাল কিনবে সরকার। এরই মধ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল, ৫ কোটি ৫০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল এবং ১৫ হাজার টন চিনি কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

দরপত্রের মাধ্যমে ভোজ্য তেল, মসুর ডাল ও চিনির ক্রয়মূল্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আগামী বৈঠকে এই মসুর ডাল, ভোজ্য তেল ও চিনি কেনার প্রস্তাব উপস্থান করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিলে মসুর ডাল, ভোজ্য তেল ও চিনি কেনার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৃথক তিন স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ৫ কোটি ৫০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৯২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেড থেকে প্রতি লিটার ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

এছাড়া সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে প্রতি লিটার ১৭১ টাকা ৫০ পয়সা দরে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড থেকে প্রতি লিটার ১৬২ টাকা করে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল কেনা হবে। অর্থাৎ সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ৩৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সয়াবিন তেল এবং শবনম ভেজিটেবল অয়েল থেকে ৩৫৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার পাম অয়েল কেনা হবে।

এছাড়া দুটি স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ১৫ হাজার টন চিনি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড থেকে প্রতি কেজি ১১৫ টাকা ২৫ পয়সা দরে ১০ হাজার টন চিনি কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বাকি ৫ হাজার টন চিনি কেনা হবে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি চিনি ১১৭ টাকা ৯০ পয়সা দরে সরবরাহ করবে। ফলে এই ৫ হাজার টন চিনির জন্য ব্যয় হবে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় এক লাখ ৪৪ হাজার টন চিনি কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ হাজার টন চিনি কেনার চুক্তি হয়েছে। এখন সরকার ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদ দিলে আরও ১৫ হাজার টন চিনি কেনার চুক্তি করা হবে।

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ১০ হাজার টন চিনি কেনার জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুসরণ করে দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। এতে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড প্রতি কেজি চিনির দর ১১৫ টাকা ২৫ পয়সা উল্লেখ করে। পাবলিক পকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি-১৬ (৫ক) অনুযায়ী প্রতি কেজি চিনির দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১২২ টাকা ১৬ পয়সা। অর্থাৎ দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরের থেকে প্রতি কেজি চিনি ৬ টাকা ৯১ পয়স কমে কিনতে পারবে সরকার। এতে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা।

৫ হাজার টন চিনি কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে আর একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে সেখানে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্রে প্রতি কেজি চিনির দাম ১১৭ টাকা ৯০ পয়সা উল্লেখ করে।

আগামী রমজান মাসে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম বাজার দরের তুলনায় ১৭ টাকা ৯ পয়সা কমে কিনতে পারবে সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিসিবির বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৯২ হাজার ৯৫০ টন মসুর ডাল কেনার চুক্তি করা হয়েছে।

নতুন করে আরও ১০ হাজার টন মসুর ডাল স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তার আলোকে গত ৯ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং বৈধতার মেয়াদ ধরা হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শবনাম ভেজিটেবল অয়েল, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড এবং ইজি জেনারেল ট্রেডিং দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ইজি জেনারেল ট্রেডিং ৫ হাজার টন মসুর ডালের জন্য দরপত্র জাম দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরে ৯৯ টাকা ৪৮ পয়সা।

অপর দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাবিল নাবা ফুডস প্রডাক্টস ১০ হাজার টনের জন্য দরপত্র জমা দেয়। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম প্রস্তাব করে ৯৮ টাকা ৭৫ পয়সা। এছাড়া শবনাম ভেজিটেবল অয়েল ১০ হাজার টন মসুর ডালের জন্য দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৯৭ টাকা ৯১ পয়সা করে প্রস্তাব দেয়।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি জমা পড়া ৩টি দরপত্র পর্যালোচনা করে এবং তিনটি প্রস্তাবই রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে শবনাম ভেজিটেল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৫০ কেজির বস্তায় ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সুপরিশ করেছে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এখন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা দিয়ে এই মসুর ডাল কেনা হবে।

টিসিবির বাজার তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর স্থানীয় বাজারে মাঝারি দানার মসুর ডালের প্রতি কেজির গড় খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা। এ হিসাবে স্থানীয় খুচরা বাজরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা ৯ পয়সা কম মসুর ডাল কিনতে পারবে সরকার।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন