তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছে স্ট্রোকে

  12-12-2024 09:34PM

পিএনএস ডেস্ক: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তাঁতে কাজ করতেন সিদ্দিক আলী (২৩)। লুঙ্গি বুনতে বুনতেই হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর জ্ঞান ফিরলেও শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে দ্রুত সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সিদ্দিক আলীর স্ত্রী তামান্না খাতুন বলেন, ‘ডান হাত অবশ হয়ে যাওয়া দেখে স্ট্রোক সন্দেহ করে দ্রুত ঢাকা নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসকরা। আমরা তাকে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। এত অল্প বয়সে স্ট্রোক হয় এটা শুনে অবাক হয়েছি।’

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের আবাসিক সার্জন হাসান মেহবুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে কম বয়সিদেরও স্ট্রোক হচ্ছে। হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের কারণে, জীবনযাপনের ওপরও স্ট্রোকের ঝুঁকি নির্ভর করে। তরুণদের মধ্যে অনেকে ধূমপান, তামাকজাতীয় দ্রব্য কিংবা মাদক সেবন করেন। এতে স্ট্রোকের ঘটনা বাড়ে। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রমে অনীহা, মানসিক চাপ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।’

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১৩ দশমিক ৬ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আশঙ্কাজনক বিষয় হলো- এদের মধ্যে ২৩ শতাংশ রোগীর বয়স ৫০ বছরের কম। অর্থাৎ প্রতি চারজন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর একজনের বয়স ৫০ বছরের নিচে। চলমান ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সির মধ্যে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার ২৮ শতাংশ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

বিএসএমএমইউর ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস গত বছর এ গবেষণা শুরু করে। কিশোরগঞ্জের

হোসেনপুর উপজেলার পুমদি, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া ও গোবিন্দপুর গ্রামের মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১৪ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের হার (৫৯ শতাংশ) নারীদের হারের (৪১ শতাংশ) অনেক বেশি। এ ছাড়া ৭১ শতাংশ স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং ৪১ শতাংশ রোগী ধূমপান করেন। মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ হলে স্নায়ুকোষ মরে গিয়ে স্ট্রোক হয়। এতে মস্তিষ্কের ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণার প্রধান গবেষক ও ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি চারজন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর মধ্যে একজনের বয়স ৫০ বছরের নিচে হওয়াটা বড় উদ্বেগের বিষয়। এ ছাড়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্ট্রোক রোগী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। কিশোরগঞ্জের ২৮ হাজার পরিবারের কাছ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জনসংখ্যাভিত্তিক এই রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। কাজটি আগামী বছরের মার্চে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।’ ২০২২ সালে পরিচালিত ‘প্রিভ্যালেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস অব স্ট্রোক ইন বাংলাদেশ : এ ন্যাশন ওয়াইড পপুলেশন-বেইজড সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোকের হার সামান্য বেড়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি ১ হাজার জনের ১১ দশমিক ৩৯ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। গবেষণায় দেখা গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগে স্ট্রোকের হার সবচেয়ে বেশি এবং রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে কম। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় স্ট্রোকের হার শহরের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২৩ এর তথ্য মতে, দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার পেছনে ধূমপান ও মাদক সেবনের দায় রয়েছে। হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও স্ট্রোক করতে পারেন। স্ট্রোক হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। যদি রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা খুলে দেওয়া অপরিহার্য। স্ট্রোকের প্রথম চার ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে বেশিরভাগ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।’

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন