এইচএমপিভি : ৬ ধরনের রোগীকে বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ

  16-01-2025 05:42PM

পিএনএস ডেস্ক: এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ভাইরাস থেকে বাঁচতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি (দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি), অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো যেসব জটিল রোগী আছেন, তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

তারা বলছেন, একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া এই রোগ শনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর আক্রান্তরা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেলে রোগটি ভালো হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে 'ইমার্জিং ট্রেন্ডস হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস: এ নিউ থ্রেট টু বাংলাদেশ?' শীর্ষক বিশেষ সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন- উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সহকারী অধ্যাপক ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত ও ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।

এ সময় অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, এইচএমপিভি একটি পুরাতন ভাইরাস। এই ভাইরাসের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হাত ধোয়া ও মাস্কের ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্ক নয়। এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে এমন সব রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বলেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এটি অন্যান্য ফ্লু যেমন- ইনফুলুয়েঞ্জা রেস্পিরেটরি সিনসাইশিয়ালের মতোই একটি ভাইরাস। সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডে ২০০১ সালে এইচএমপিভি মানুষের শরীরে শনাক্ত হয় এবং বাংলাদেশে প্রথম ২০১৭ সালে এইচএমপিডি সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

তিনি বলেন, এটি আসলে মারাত্মক কোনো ভাইরাস নয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথা এসব লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে, এ ছাড়াও চামড়ায় র‌্যাশ এবং কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি, অ্যাজমা অথবা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ আছে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

সোহেল আরাফাত বলেন, ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে খুব সহজেই এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন- বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সাবান, পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে নিতে হবে, আর টিস্যু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি কাশি দিতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে ইত্যাদি। সাধারণত শীতকাল ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।

ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মারা যাওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক শতাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী এইচএমপিভি। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এই ভাইরাস প্রতিরোধে কয়েকটি টিকা তৈরি করা হলেও এইচএমপিভি প্রতিরোধে এখনও সে ধরনের কোনো টিকা নেই। এইচএমপিভি আক্রান্তদের জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন