দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য: জিতিন প্রসাদ

  12-03-2025 11:14PM

পিএনএস ডেস্ক: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক কমানো নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে, তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ভারতীয় সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল যুক্তরাষ্ট্র থেকে শনিবার দেশে ফিরেছেন। তিনি শুল্ক কমানো নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এবার ভারতে এসে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কথা বলবেন তিনি।

লোকসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ বলেছেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো এবং তা দুই দেশের কাছে সুবিধাজনক ও ন্যায্য করা।

জিতিন প্রসাদ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই ভারতের বিরুদ্ধে সমহারে শুল্ক চালু করেনি। আলোচনা চলছে। সেখানে মাসুল কম করা, বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা চলছে। দুই দেশই ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চায়।

সোমবার (১০ মার্চ) ভারতের বাণিজ্য সচিব সুনীল বারতোয়াল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিকে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত মার্কিন পণ্যের উপর মাসুল অনেকখানি কমাতে রাজি হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সুনীল এই মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ভারতকে তাদের কৃষিক্ষেত্র মার্কিন পণ্যের জন্য খুলে দিতে হবে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিনা লিভিট মঙ্গলবার বলেছেন, ভারত তো অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। আবার তারা কৃষিপণ্যেও একশ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, সমহারে শুল্ক চালু হওয়া উচিত। এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট মার্কিন ব্যবসায়ী ও কর্মীদের স্বার্থে কাজ করছেন।

সমস্যার সমাধান কোন পথে?
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার দিল্লির প্রাক্তন বিজনেস এডিটর ও বর্তমানে দ্য সেক্রেটারিয়েটের এক্সিকিউটিভ এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা অনেকটা কমানোর জন্য ভারতের উপর চাপ দিচ্ছে। ভারত কিছু ক্ষেত্রে কমাতে রাজি হতেই পারে। তবে মূল সমস্যা দেখা দিয়েছে কৃষিক্ষেত্র নিয়ে। কৃষিক্ষেত্রে শুল্ক বেশি কমিয়ে দিলে ভারতীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবেন না। তাই ভারত কৃষিক্ষেত্রে শুল্ক খুব বেশি কমাতে চাইছে না।

জয়ন্ত মনে করেন, এই চাপ ও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা আরও একটু সময় ধরে চলতে পারে। ইস্পাতের মতো কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ হারে ভারতের উপর শুল্ক বসালে আমাদের খুব একটা কিছু আসে যায় না, কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে যায়। কৃষিতে বাছাই করা কিছু ক্ষেত্রে ভারত হয়তো কমাবে, কিন্তু সবক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।

সূত্র উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ভারত ডাল, মটরশুটি এবং দামী মোটরসাইকেল, বারবান, কেনটাকির মতো হুইস্কির ওপরে আরোপিত শুল্ক কমাতে পারে।

ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, কৃষিসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে ভারত চড়া হারে শুল্ক বসিয়েছে। স্টেট ব্যাংকের হিসাব বলছে, ভারত যদি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক কম করে, তাহলে তাদের রপ্তানি তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ কমে যাবে। তাছাড়া শুল্ক কম করার ফলে অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য কতটা প্রভাবিত হবে, সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। আর এ কারণেই ভারতকে এত সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছে।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন