বিদ্রুপের জবাবে কেমন হবে মুমিনের আচরণ

  19-08-2024 12:07AM

পিএনএস ডেস্ক: মুমিন মানে বিশ্বাসী। তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসীদের মুমিন বলা হয়। আর ইসলাম মানে আনুগত্য, মুসলিম অর্থ অনুগত ব্যক্তি। যিনি ঈমানের সঙ্গে আল্লাহ ও রাসুল (স.)-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন তিনিই মুসলিম। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, এসব লোকেরাই আল্লাহর উত্তম বান্দা। তাদের ঈমান নিয়ে, তাদের ইবাদত ও উত্তম কাজ নিয়ে হাসি-তামাশা করা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা মুনাফিকের স্বভাব। কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী, এ রকম হীন কাজের জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদের বিভিন্নভাবে উৎপীড়ন করতো। মুসলমানদের নিয়ে হাসাহাসি করা, পরস্পরে চোখ টিপে বিদ্রূপ করা ছিলো মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেওয়ার একটি ঘৃণ্য পদ্ধতি। এর উচিত জবাব দেওয়া হবে আখেরাতে। পবিত্র কোরআন বলছে, মুমিনরা যখন জান্নাতের সুখময় জীবনে থাকবে, তারা তাদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মধ্যে দেখে হাসবে যেমন তারা দুনিয়াতে মুমিনদের দেখে হাসতো।

পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে— ‘যারা অপরাধী, তারা বিশ্বাসীদের উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের কাছ দিয়ে গমন করত তখন পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করত।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ২৯-৩০) ‘তারা যখন তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরত, তখনও হাসাহাসি করে ফিরত। আর যখন তারা বিশ্বাসীদেরকে দেখত, তখন বলত, নিশ্চয় এরা বিভ্রান্ত। অথচ তারা বিশ্বাসীদের তত্ত্বাবধায়করূপে প্রেরিত হয়নি।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ৩১-৩৩)

এরপরের আয়াতগুলোতে পরকালে মুমিনদের পাল্টা উপহাস করার দৃশ্যপট তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আজ যারা বিশ্বাসী, তারা কাফেরদেরকে উপহাস করছে; সুসজ্জিত আসনে বসে, তাদেরকে অবলোকন করছে। কাফেররা যা করত, তার প্রতিফল পেয়েছে তো?’ (সুরা মুতাফফিফিন: ৩৪-৩৬)

ঠাট্টা-বিদ্রূপ মানুষকে নিন্দিত করে তোলে, মানুষের ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। বিদ্রূপকারীরা পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে, সবখানে মানুষের চোখের কাঁটা হয়ে ওঠে। কারণ এটি কোনো সুশিক্ষিত, ভদ্র মানুষের কাজ নয়। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, যখন সদকার নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন আমরা পরস্পর অর্থের বিনিময়ে বহন করতাম। তখন আবু আকিল অর্ধ ‘সা’ নিয়ে এলো। অন্য একজন আরো একটু বেশি আনল। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, আল্লাহ এর সদকা থেকে অবশ্যই অমুখাপেক্ষী আর দ্বিতীয় লোকটিও দেখানোর জন্যই এটি করেছে। তখন আল্লাহর আয়াত নাজিল হয়। (বুখারি: ৪৬৬৮)

সেই আয়াতটি হলো, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে। অতঃপর তারা তাদের নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহ তাদের নিয়ে উপহাস করেন; আর তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা তাওবা: ৭৯)

তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত ঠাট্টা-বিদ্রূপের মতো নিন্দনীয় কাজ পরিহার করা; বিশেষ করে যারা আল্লাহর আয়াতগুলো কিংবা ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা। এটা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তুমি তাদের দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসো না। (সুরা আনআম: ৬৮)

ঠাট্টা-বিদ্রূপ এতটাই নিকৃষ্ট কাজ যে মহানবী (স.) একে ‘দূষণ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সময় মহানবী (স.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (স.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রূপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি: ২৫০২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের মতো জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পিএনএস/ এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন