পিএনএস ডেস্ক: বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া থেকে অগ্রিম কিছু টাকা সিকিউরিটির জন্য নিয়ে থাকে। এই অগ্রিম টাকা আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। নিয়মের ভিন্নতার কারণে এর হুকুম ভিন্ন হয়ে থাকে।
যেমন-
১. কারো এমন নিয়ম থাকে যে, এক বা দুই মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে। যা বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষ দুই মাসের ভাড়া হিসেবে ধরা হবে। এক্ষেত্রে তা ফিকহে ইসলামীর দৃষ্টিতে অগ্রিম ভাড়া হিসেবে ধর্তব্য হবে। সিকিউরিটি মানি তথা বন্ধক হিসেবে গণ্য হবে না।
২. দোকান বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার জন্য দুই-তিন লাখ বা আরো বেশি টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়। এরপর মাসে মাসে কিছু কিছু করে সকল টাকা ভাড়ার সাথে কেটে নেয়। পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য হিসেবে কিছুই রাখা হয় না। এমনটি হলে এটাও অগ্রিম ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে।
এই দুই ক্ষেত্রে অগ্রিম হিসাবে যা নেওয়া হয় সে টাকার মালিক বাড়িওয়ালাই হবে। সুতরাং এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে এবং এটি তার জাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে। তাই জাকাতবর্ষ শেষে এ টাকা থেকে কিছু অবশিষ্ট থাকলে তাকেই এর জাকাত দিতে হবে। ভাড়াটিয়াকে এর জাকাত দিতে হবে না।
৩. আর যদি অগ্রিম নেওয়া এই টাকা থেকে ভাড়া হিসাবে কোনো কিছু কাটা না হয় এবং চুক্তি শেষ হওয়ার আগের মাসগুলোর ভাড়া হিসাবেও গণ্য করা না হয়, বরং ভাড়াটিয়া বাড়ি ছাড়ার সময় তাকে এ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্ত করা হয় তাহলে এই টাকা সিকিউরিটি মানি বলে গণ্য হবে।
ফিক্বহী দৃষ্টিকোণ থেকে সিকিউরিটি মানি রাহান তথা বন্ধকী সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। আর বন্ধকগ্রহিতার জন্য বন্ধকী বস্তু দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েজ নেই। সে হিসেবে বাড়ির মালিকের জন্য এই অগ্রিম টাকা খরচ করা জায়েজ নয়।
সাধারণ নিয়মে টাকাগুলো নিজের কাছে বা ব্যাংকে রেখে দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু আজকাল অনেক বাড়িওয়ালা বন্ধকের উক্ত নিয়ম মেনে চলে না। বরং প্রায় সবাই এ টাকা খরচ করে ফেলে। জমা রাখে না। তাই কোনো কোনো ফকীহ এই খরচকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই টাকাকে বন্ধক না ধরে ঋণ বলতে চান।
আর এটাকে ভাড়ার সাথে শর্ত না করে ভিন্নভাবে লেনদেন করতে বলেন। তাদের ভাষ্যমতে এভাবে করলে বাড়িওয়ালার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ হবে। অবশ্য অন্য অনেক ফহীহ এটাকে সিকিউরিটি তথা বন্ধকই বলেন। দলীলের দিক থেকে এ মতটিই শক্তিশালী।
প্রকাশ থাকে যে, এ টাকাকে বন্ধক ধরা হলে সমস্যা হল বাড়িওয়ালার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়। আর ঋণ ধরা হলে সমস্যা হল, ভাড়ার সাথে ঋণ প্রদানের শর্ত করার কারণে ভাড়া-চুক্তি ফাসেদ হয়ে যায়।
এ কারণে সিকিউরিটি মানির ক্ষেত্রে নিম্নের যে কোনো একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা নিরাপদ।
১. একে অগ্রিম ভাড়া ধরা। অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় শেষের দিকের মাসের ভাড়া ধরা হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করা হবে। আর অগ্রিমের পরিমাণ বেশি হলে প্রতি মাসেই নগদ ভাড়ার সাথে একটা অংশ ভাড়া হিসাবে কর্তন করা হবে। এ টাকা পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য হিসেবে ধরা হবে না। এভাবে অগ্রিম ভাড়া ধরা হলে এর মালিক বাড়িওয়ালাই হবে। এক্ষেত্রে সে তা ব্যবহার করতে পারবে এবং জাকাতও সেই আদায় করবে।
২. কোনো কোনো সময় বাড়িওয়ালা সিকিউরিটির টাকা দিয়ে বাড়ির সজ্জায়ন করে বা ফিটিংস ইত্যাদি লাগায়।
এক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ার সাথে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করা যেতে পারে। ভাড়াটিয়া এসব কাজ নিজ দায়িত্বে বা বাড়িওয়ালার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিজের টাকা দিয়ে করে নিবে এবং তা ভাড়াটিয়ার মালিকানা হিসেবে গণ্য হবে। এরপর যখন বাসা ছেড়ে দেবে তখন বাড়িওয়ালার নিকট একটি দাম ধরে জিনিসগুলো বিক্রি করে দেবে।
এ পন্থা অবলম্বন করলে বন্ধক নিয়ে তা খরচ করার জটিলতাও থাকে না। আবার জাকাত কে দেবে এই প্রশ্নও আসে না। কেননা ভাড়াটিয়া যেহেতু ওই টাকা খরচ করে ফেলেছে তাই তার উপর এর জাকাত আসবে না। আর বাড়িওয়ালাও এ টাকার মালিক হয়নি বিধায় তাকেও এর জাকাত দিতে হবে না।
এসএস
ঘর বা দোকান ভাড়া অগ্রিম নেওয়া জায়েজ কি না?
23-12-2024 07:36PM