শেরপুরে পানি কমলেও ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

  07-10-2024 10:23PM

পিএনএস ডেস্ক : শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার জেলায় সারাদিন বৃষ্টি হয়নি। এতে বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার চার পাহাড়ি নদীর পানি কিছুটা কমেছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকার পানি। তবে এখনও পানিবন্দি ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। পানি কমায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।

এদিকে নালিতাবাড়ী উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামে সড়কে খেলতে গিয়ে সোমবার সকালে বন্যার পানিতে ডুবে জিমি আক্তার (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে শেরপুর সদরের ধলা ইউনিয়নের চান্দেরনগর কড়ইতলা এলাকার জামান মিয়ার মেয়ে। এ নিয়ে বন্যায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় মোট ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে পাহাড়ি নদী চিল্লা খালি, ভোগাই, মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে।

শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই নেমে গেছে। নকলা উপজেলাতেও পানি কমেছে। নালিতাবাড়ী উপজেলার পানি ধীরে ধীরে নামছে। পানি কমলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোর বেশির ভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত গরু, ছাগল, ঘোড়া, ভেড়াসহ হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। সবজি ক্ষেতসহ মাঠ ডুবে যাওয়ায় ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘরে পানি উঠে নষ্ট হয়ে গেছে খড়ের গাদা। একদিকে খাদ্য সংকট, অন্যদিকে মাথার ওপরে চাল না থাকায় বহু মানুষ চরম কষ্টে আছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও রান্না করা খিচুড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বন্যার্ত এলাকায় খাবার সরবরাহের জন্য কাজ করছেন। পানিবন্দি মানুষের মাঝে রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। প্রশাসনের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এসব সহায়তায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ বি এম আব্দুর রউফ বলেন, অনেক প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস জানান, বন্যায় জেলায় ৯৭ হাজার হেক্টর আমন ধানের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ধান পানির নিচে। সম্ভবত এসব ধান পচে যাবে। প্রায় দুই হাজার হেক্টর সবজি আবাদ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বন্যায় কৃষি, সবজি, মৎস্যসহ অনেক খাতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। তারা এসব ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করছেন। আপাতত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের প্রধান কাজ। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণেও কাজ করছে প্রশাসন।

ময়মনসিংহে পানিবন্দি ৩৩ হাজার পরিবার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় এখনও ৩৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। খাবার সংকটে থাকা পরিবারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। নতুন করে ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

বন্যায় মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, জেলায় ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তিনটি উপজেলার মধ্যে ধোবাউড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। হালুয়াঘাটে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান ও ৭৫ হেক্টর সবজি। ফুলপুরে ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর ধান ও ৬২ হেক্টর সবজি ডুবে গেছে।

নেত্রকোনার পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

নেত্রকোনার চারটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, কংস ও ধনু নদীর পানি বড়েছে। তবে সোমবার বৃষ্টি না হওয়ায় ওইসব নদনদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নকাই ঝুরার পানি বড়েছে। এতে তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়েছে পাথরের চরের ১৫টি পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভারী বর্ষণ হলে পুরো গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরাম, কালোর নদী ও ধরনী নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ২৪ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল।

পিএনএস/আর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন