তদন্তে গিয়ে কলেজছাত্রীকে বিয়ে এএসআইয়ের, অতঃপর...

  25-12-2024 09:40PM

পিএনএস ডেস্ক: টাঙ্গাইলে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কলেজছাত্রী রিয়া আক্তারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এএসআই জাহাঙ্গীর আলম। এরপর থেকে বিভিন্ন কৌশলে রিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সেই সম্পর্কের রেশ ধরে শারীরিক সম্পর্ক রূপ দিতে ফুসলিয়ে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়েও করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

চলতি বছরের ৬ জুন ১৫ লাখ টাকার দেনমোহরে ঢাকার রায় সাহেব বাজারের কাজী মাওলানা মো. সাদেক উল্যাহ ভুইয়া তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করেন।

ইতোমধ্যে এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পরই ওই কলেজ ছাত্রীকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকৃতি জানান এএসআই জাহাঙ্গীর।

জানা যায়, জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় ডুবাইল গ্রামের রাজাখানের মেয়ে ও করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষার্থী রিয়া আক্তারকে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে করেন তৎকালীন নাগরপুর থানার সহকারী এএসআই ও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বলদিঘাট এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।

বর্তমানে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নাগরপুর থানা হতে বদলি হয়ে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানায় কর্মরত রয়েছেন।

ওই কলেজ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা ও তথ্য লুকিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার, ফরিদপুর পুলিশ সুপার ও নগরকান্দা থানার ওসির কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ওই শিক্ষার্থী।

পরে টাঙ্গাইল আদালতে যৌতুক ও নির্যাতন আইনে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর আলাদা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী বলেন, দেলদুয়ার থানায় একটি মামলার তদন্ত করতে দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইলে আমাদের বাড়িতে আসে এএসআই জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পরে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে ঢাকায় একটি কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে। এরপর থেকেই আমরা দুজনে একসঙ্গে বসবাস করেছি। পরবর্তীতে নাগরপুর থানা হতে ফরিদপুরে বদলি হওয়ার পর থেকে কোনো যোগাযোগ করছে না এবং তাদের বাড়িতেও আমাকে নিচ্ছে না। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী ও দুইজন সন্তান রয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রিয়া আক্তার বলেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং তথ্য গোপন করে বিয়ে করেছে জাহাঙ্গীর। বিয়ের পর এক সঙ্গেই ছিলাম কয়েক মাস। ৫ আগস্টের পর অন্যত্র বদলি হওয়ার পরই তার আরেক বিয়ে হওয়ার তথ্য পাই। বদলি হওয়ার পর থেকেই আমার কোনো খোঁজখবর নেয় না।

তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও প্রতারণা করে আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তার সঙ্গে সংসার ও স্ত্রীর মর্যাদা চাই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আদালতেও মামলা দায়ের করেছি। এখন তাকে তালাক দিতে বারবার হুমকি দিচ্ছে। ফলে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

ডুবাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা রিয়ার চাচা মো. বাবুল হোসেন জানান, পুলিশ জাহাঙ্গীর এবং রিয়ার দুজনেরই শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ একজন পুলিশ অবস্থায় প্রেমে পড়ে বিয়ে করা এটি মোটেই ভালো নয়। অপরদিকে তার ভাতিজি রিয়ার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার ভাতিজিটি মোটেই ভালো না। এই ভাতিজিটির পাশের বাড়ির একটি ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। সেখানে বনিবনা না হওয়াতে সালিশের মাধ্যমে সেটি সমাধান করা হয়েছে। এছাড়াও রিয়া উশৃঙ্খলভাবে ঘোরাফেরা করায় সামাজিকভাবে আমি চাচা হিসেবে লজ্জিত। যার কারণে তার ব্যাপারে কোথাও কোনো কথা বলি না।

নগরকান্দা থানার এএসআই ও রিয়া আক্তারে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজী অফিসে বিয়ে করেছি ঠিক আছে। রিয়া আক্তার আমার সঙ্গে বিয়ের আগেও একটি বিয়ে করেছিল। সেটি বিয়ের পর আমি জানতে পারি। সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম। তাকে বিভিন্ন উগ্র ছেলেদের সঙ্গে ওঠাবসায় বারণ করায় সে তা মেনে নেয় না। যার কারণে আমার সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতে সে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এছাড়াও সে কোর্টে মামলাও করেছে। এখন আর কী করা, আইনীভাবে বিষয়টির সমাধান হবে।

নাগরপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এএসআই জাহাঙ্গীর নাগরপুর থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি। তিনি নাগরপুর থেকে বদলির হওয়ার পরই জানতে পারি এএসআই জাহাঙ্গীর রিয়া নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। যেহেতু নাগরপুর থানায় তিনি কর্মরত নেই সুতরাং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না। তবে ভুক্তভোগীকে কর্মরত থানায় অভিযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন