রোগ নিরাময় ও বিকল্প খাদ্যের যোগানদার শিমুল আলু

  30-12-2014 07:17PM

পিএনএস (কামাল পাশা দোজা) : মাছে ভাতে বাঙ্গালী। এক সময়ে বাংলার প্রতিটি অঞ্চল, জনপদ যারপর নেই সমৃদ্ধ ছিল। কৃষকের ছিল স্বচ্ছলতা। গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এই ছিল বাংলার সত্যিকার রুপ। খাদ্যাভাব তথা অভাবের সাথে পরিচিত ছিলনা বাংলার মানুষ। বাংলার সোনালী যুগের কারনেই মনে হয় “মাছে ভাতে বাঙ্গালী” প্রবাদ বাক্যটির প্রচলন ।বিশ্বে বাঙ্গালীদের পরিচয় একটু ভিন্ন স্বাদের ছিল। কেউ আবার একটু ভিন্ন ভাবে বাঙ্গালীদের ভেতো বাঙ্গালী বলবে। মোদ্দা কথা বাঙ্গালী মানেই ভাত-মাছ ভক্ষনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাঙ্গালী ছাড়াও পৃথিবীর অনেক জাতি ভাত খেয়ে থাকে। তবে তা বাঙ্গালীদের মতো প্রধান খাদ্য হিসাবে নয়। উপাদেয়- মুখরোচক এবং ভিন্ন স্বাদের পোলাও -বিরিয়ানী আর শাহী খাবার তৈরীতে চালের ব্যবহার হয়। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ভাত বলতে যা বোঝায় সে সব সৌখিন বিলাসী খাবারে ভাতের উপস্থিতি সে রকম নয়। নবাব সিরাজ উদ্দৌলার সময়েও বাংলা সমৃদ্ধ ছিল। আর সে কারণে বৃটিশ বেনিয়ারা সর্বপ্রথম বাংলায় তাদের আস্তানা গাড়ে। শায়েস্তা খাঁর আমালেও সমৃদ্ধ বাংলায় মাত্র ১ টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেত। ষাট এবং ৭০ এর দশকেও চাউল সহজ লভ্য ছিল। ৬ আনা ৮ আনা সের দরে চাউল বিক্রি হতো। মশুর ডালের সের (১৬ ছটাক) ৪ আনা মাত্র। আর আটা মাত্র ৪ আনা সেরে বিক্রি হতো । ৭০ এর দশক পর্যন্ত চাউলের দাম সহনীয় ছিল। সে সময়ে চালের দাম ৮ আনা সের ছিল। এবং বাসমতি চালের মন ছিল মাত্র ৩০ টাকা। মানে ১২ আনা সের। সে সময়ে ৩ সের ডাল বিক্রি করে ১ সের চাউল কিনতে হতো। চিনি ছিল ৮ থেকে ১০ আনা প্রতি সের। ৭১ এর মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের পরও চালের দাম সহনীয়ই ছিল। এখন সেই সবই কেবলি ইতিহাস। এখন দিন বদলে গেছে এখন ৩ কেজি ডাউল বিক্রি করেও ১ কেজি চাউল পাওয়া যায় না।





স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও দেশে খাদ্যাভাব প্রকট ছিল। সে সময়ে জনসংখ্যাও ছিল আজকের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও চেয়ে কম। তবুও খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবছর বিপুল পরিমান চাল-গম আমদানী করতে হতো। এখন অবশ্য সেই প্রেক্ষিত বদলে গেছে। জনসংখ্যা বেড়েছে শতভাগেরও বেশী। পাশাপাশি চাষের জমিও কমেছে আগের চেয়ে অনেক। তারপরও এখন দেশ খাদ্যে কেবলি স্বয়ংসম্পূর্নতাই অর্জন করেনি বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে দেশের চাল।




আমাদের খাদ্য তালিকায় ইতিমধ্যেই যোগ হয়েছে নতুন নতুন বিকল্প খাদ্য। গম, আলুর উপর নির্ভর করায় চালের উপর চাপ অনেকটাই কমে এসেছে। এখন আমাদের খাদ্য তালিকায় আরো একটি নতুন উপাদেয় পুষ্টিকর সর্বোপরি গমের আঠার পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার যোগ হয়েছে। যার নাম শিমুল আলু। গমের আঠা থেকে যা যা হয় শিমুল আলুর আঠা থেকে তাই তাই হয়। কাজেই শিমুল আলুর আঠা থেকে তৈরী বিকল্প খাবারের প্রতি খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে পারলে খাদ্য ঘাটতির অবসান হবে, পাশাপাশি জাতীয় পুষ্টি সমস্যারও সমাধান হবে।





শুধু কি বিকল্প খাদ্য যা খাদ্যের পাশাপাশি জীবন বাঁচাতেও ভ’মিকা রাখবে শিমুল আলু। কারণ শিমুল আলুর ভেষজ গুন অনেক। জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরীতে শিমুল আলূ ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষ করে গ্লোকোজ তৈরীতে শিমুল আলূর ব্যবহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ঔষধ তৈরীতে শিমুল আলুর মন্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজেই দেশে শিমুল আলু খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের প্রতি যতœবান হলে একদিকে খাদ্যের প্রতি চাপ কমবে,অন্যদিকে দেশীয় ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহারের ফলে জীবন রক্ষাকারী ঔষধও সহজলভ্য হবে। সব চেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের শিশুখাদ্যের এক বিরাট অংশের চাহিদা মেটাবে দেশীয় শিমুল আলু থেকে তৈরী খাবারে। কারন শিমুল আলু থেকে বিভিন্ন রকমের শিশু খাদ্যও তৈরী হচ্ছে।

লেখক ,সাংবাদিক-কলামিষ্ট,প্রধান বার্তা সম্পাদক পিএনএস
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন