পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাসাভা

  24-02-2024 10:32AM



পিএনএস ডেস্ক: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসল কাসাভা। আলু জাতীয় এই ফসলটির গাছের পাতা শিমুল পাতার মতো হওয়ায় এটি ‘শিমুল আলু’ নামেও পরিচিত। নানাবিধ খাদ্য তৈরিসহ বস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে কাসাভা ব্যবহার হয়ে থাকে। নানা গুণসম্পন্ন এই ফসলের চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে। ৬০ বিঘা জমিতে কাসাভার আবাদ করে বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছেন হাফেজ মোস্তফা কামাল নামে এক উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা হাফেজ মোস্তফা কামালের বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের মেলাপাড়া গ্রামে। পার্শ্ববর্তী গাজকাটি এলাকায় ৬০ বিঘা পতিত জমি লিজ নিয়ে এই আবাদ করেন তিনি। এবার এর পরিধি বাড়িয়ে করতে চান ১০০ বিঘা। গত বছর পরীক্ষামুলকভাবে ২০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ করেছিলেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উৎপাদন এবং বাজারজাত প্রায় শেষের দিকে। এখন নতুন করে ১০০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষের প্রস্তুতি চলছে। চারা উৎপাদনের জন্য কাসাভা গাছের কাটিং সংগ্রহ করছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, কাসাভা বাংলাদেশে তেমন পরিচিত ফসল না হলেও বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ মানুষ কাসাভা থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করেন। গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানাবিধ খাদ্য তৈরি করা যায় কাসাভা দিয়ে। কাসাভা থেকে তৈরি হয় বস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পের উন্নত কাঁচামাল। এছাড়া সবজি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায় আলু জাতীয় এই ফসলটি। রয়েছে ওষুধি গুণও। কাসাভাতে ফাইবার, পটাশিয়ামসহ নানা উপাদান থাকায় ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী।

উদ্যোক্তা মোস্তফা কামাল জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় কাসাভা চাষ শুরু করেন তিনি। কাসাভা চাষে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। এছাড়া সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, মিষ্টি আলু ও বাদামসহ নানা ফসল চাষ করা যায়। বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়। আর ফলন ভালো হলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, কাসাভা একটি সম্ভাবনাময়ী অর্থকরী ফসল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফুড প্রসেসের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিও আমাদের কাছে কাসাভা ক্রয় করেছেন। কাসাভার পাশাপাশি গাছ উৎপাদনের মাধ্যমেও আমরা বাড়তি আয় করছি। বিভিন্ন এলাকার যেসব চাষিরা কাসাভা চাষে ঝুঁকছেন। তারা আমাদের কাছে কাটিং নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাটিং পাঠানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কাসাভা চাষে সাফল্য অর্জনে কৃষি বিভাগ আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। নতুন করে কাসাভা চাষে কেউ আগ্রহী হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে উত্তরবঙ্গে একটি কাসাভার ফুড প্রসেসিং কারখানা করার। এটা হলে চাষের পরিমাণও বাড়বে, চাষিরাও সহজেই বাজারজাত করতে পারবে এবং লাভবান হবে।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, পঞ্চগড়ে এ বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে কাসাভা চাষ হয়েছে। এবার এ থেকে ২৫০ মেট্রিক টন কাসাভা উৎপাদনের আশা। এই ফসলে রোগ-বালাই এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। ফলে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম হয়। এর একটি বাজার মূল্য আছে। বিশেষত দেশে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এর যে ব্যবহার হয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ যে চাহিদা এর মাত্র দুই শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের কাসাভা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।


পিএনএস/এমএইউপঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাসাভা

পিএনএস ডেস্ক: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসল কাসাভা। আলু জাতীয় এই ফসলটির গাছের পাতা শিমুল পাতার মতো হওয়ায় এটি ‘শিমুল আলু’ নামেও পরিচিত। নানাবিধ খাদ্য তৈরিসহ বস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে কাসাভা ব্যবহার হয়ে থাকে। নানা গুণসম্পন্ন এই ফসলের চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে। ৬০ বিঘা জমিতে কাসাভার আবাদ করে বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছেন হাফেজ মোস্তফা কামাল নামে এক উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা হাফেজ মোস্তফা কামালের বাড়ি দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের মেলাপাড়া গ্রামে। পার্শ্ববর্তী গাজকাটি এলাকায় ৬০ বিঘা পতিত জমি লিজ নিয়ে এই আবাদ করেন তিনি। এবার এর পরিধি বাড়িয়ে করতে চান ১০০ বিঘা। গত বছর পরীক্ষামুলকভাবে ২০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ করেছিলেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উৎপাদন এবং বাজারজাত প্রায় শেষের দিকে। এখন নতুন করে ১০০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষের প্রস্তুতি চলছে। চারা উৎপাদনের জন্য কাসাভা গাছের কাটিং সংগ্রহ করছেন শ্রমিকরা।

জানা গেছে, কাসাভা বাংলাদেশে তেমন পরিচিত ফসল না হলেও বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ মানুষ কাসাভা থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করেন। গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানাবিধ খাদ্য তৈরি করা যায় কাসাভা দিয়ে। কাসাভা থেকে তৈরি হয় বস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পের উন্নত কাঁচামাল। এছাড়া সবজি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায় আলু জাতীয় এই ফসলটি। রয়েছে ওষুধি গুণও। কাসাভাতে ফাইবার, পটাশিয়ামসহ নানা উপাদান থাকায় ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী।

উদ্যোক্তা মোস্তফা কামাল জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় কাসাভা চাষ শুরু করেন তিনি। কাসাভা চাষে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। এছাড়া সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ, মিষ্টি আলু ও বাদামসহ নানা ফসল চাষ করা যায়। বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়। আর ফলন ভালো হলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

তিনি বলেন, কাসাভা একটি সম্ভাবনাময়ী অর্থকরী ফসল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফুড প্রসেসের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিও আমাদের কাছে কাসাভা ক্রয় করেছেন। কাসাভার পাশাপাশি গাছ উৎপাদনের মাধ্যমেও আমরা বাড়তি আয় করছি। বিভিন্ন এলাকার যেসব চাষিরা কাসাভা চাষে ঝুঁকছেন। তারা আমাদের কাছে কাটিং নিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাটিং পাঠানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কাসাভা চাষে সাফল্য অর্জনে কৃষি বিভাগ আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। নতুন করে কাসাভা চাষে কেউ আগ্রহী হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে উত্তরবঙ্গে একটি কাসাভার ফুড প্রসেসিং কারখানা করার। এটা হলে চাষের পরিমাণও বাড়বে, চাষিরাও সহজেই বাজারজাত করতে পারবে এবং লাভবান হবে।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, পঞ্চগড়ে এ বছর প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে কাসাভা চাষ হয়েছে। এবার এ থেকে ২৫০ মেট্রিক টন কাসাভা উৎপাদনের আশা। এই ফসলে রোগ-বালাই এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। ফলে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম হয়। এর একটি বাজার মূল্য আছে। বিশেষত দেশে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এর যে ব্যবহার হয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ যে চাহিদা এর মাত্র দুই শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের কাসাভা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন