দেশে মাদকাসক্তের শিকার ২৫ লাখ শিশু!

  06-01-2018 03:49PM

পিএনএস ডেস্ক:মাদকসেবন করে একটি ‍শিশু নিজের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে- এমন দৃশ্য দেখার চেয়ে সম্ভবত মর্মস্পর্শী আর কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে এটাই যেন স্বাভাবিক। এখানে প্রকাশ্যেই মাদক গ্রহণ করে যাচ্ছে শিশুরা।

ঢাকার এক ছিন্নমূল শিশু ১২ বছরের মিলন। ফুটপাতে বসে মাদক নিচ্ছিল সে। আর তাকে ঘিরে আছে সমবয়সী আরো কয়েকজন। সবাই মিলে যেন ‘উপভোগ’ করছে মাদকসেবন!

মিলন জানায়, চার বছর হলো সে ঘর ছেড়েছে। বাবার মৃত্যু আর মায়ের পুনরায় বিয়ের পর জীবন দুঃসহ উঠেছিল ওর জন্য।

মিলন আরো জানায়, মায়ের বিয়ের পর সৎবাবা তাকে দেখতে পারতো না। প্রতিদিন নির্মমভাবে মারতো। এক পর্যায়ে ঘর ছাড়ে সে। শুরু হয় তার ফুটপাতের জীবন।

ডাস্টবিন আর আবর্জনার স্তূপ থেকে কাগজ ও প্লাস্টিক সংগ্রহ করে চলে মিলনের জীবন। এতে যে টাকা আয় হয়, সবই চলে যায় খাবার ও মাদক গ্রহণে।

শুধু মিলন নয়; তার মতো এমন লাখো মাদকাসক্ত শিশু বাস করছে সারা দেশে। মাদক দমন সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রিভেনশন অব ড্রাগ অ্যাবিউজ’র প্রধান অরূপ রতন জানান, তাদের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে বর্তমানে মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি।

পরিসংখ্যান মতে, দেশে বর্তমানে পথশিশু রয়েছে ৩৪ লাখ। এরাই মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট বলেও জানান রতন।

বাংলাদেশ চিলড্রেন রাইটস ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য অনুসারে, ৮৫ শতাংশ পথশিশুই মাদকের করাল গ্রাসে নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ শিশু হেরোইনে আসক্ত বলেও জানায় সংস্থাটি। এছাড়া ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের নেশার বড়ি ও আট শতাংশ দেহে সিরিঞ্জ পুশ করে মাদক নেয়। এসব পথশিশু গাজা, হেরোইন, ঘুমের বড়ি, গ্লু’তে সবচেয়ে বেশি আসক্ত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে, আট থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি আসক্ত গাজা, সিগারেট ও গ্লুতে। আর ১২ থেকে ১৪ বছরের শিশুরা আসক্ত ফেনসিডিল ও হেরোইনে। এছাড়া কাঁশির সিরাপ ব্যবহার করেও নেশা করে তারা।

বিএসএএফ জানায়, উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরের শিশুরা বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে ইয়াবাতে।

দেশে মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৭৭ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আর এদের প্রায় ২০ শতাংশ নারী।

বাবু (২০) নামের এক মাদকাসক্ত জানান, প্রথমে বন্ধুদের অনুরোধে সিগারেটের ভেতর গাজা ঢুকিয়ে নেশা জীবনে প্রবেশ তার। এখন তিনি হেরোইন ও সিরিঞ্জ দিয়ে শিরায় বিষাক্ত দ্রব্য প্রবেশ করিয়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন।

নিজের অতীত জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন আমি পরিবারের কাছে প্রিয়পাত্র ছিলাম। নেশা করার জন্য আমার চার বোনের কাছ থেকে প্রথমে টাকা নিতাম। আজ আমি পথের ভিখারী। আমার আর কেউ নেই।’

এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে নিজের এই ‘অভিশপ্ত’ জীবনের ইতি টানতে চান বাবু। কিন্তু ঢাকায় নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে কিছু বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলেও সরকারি তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

সূত্র: ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন