গণধর্ষণে স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, লাখ টাকায় মীমাংসার অভিযোগ

  18-04-2018 09:37PM

পিএনএস ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে গণধর্ষণে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর কয়েক ঘা জুতার আঘাত ও এক লাখ টাকা জরিমানায় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতাব্বরদের বিরুদ্ধে।

এদিকে বুধবার ক্লাসপরীক্ষা বাদ রেখে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির গর্ভপাত ঘটাতে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়ারও খবর মেলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলর জাকারিয়া বকুল, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মামুন, ধর্ষক আলামিনের বাবা মাহতাবসহ স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বর নিয়ে ধর্ষক রফিকুল, জিয়াউল হক ও আল আমিন গংদেরকে বাঁচাতে প্রহসনের বিচার করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রূপশান্তি এলাকার সোহরাব আলীর ছেলে ছাগল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম (৩০) প্রতিবেশি হতদরিদ্র অসহায় এক পরিবারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে (১৩) কে ফুসলিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। প্রতিবারই আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার নাটক করে গ্রুপের অন্য সদস্যদের সুযোগ দিতে মেয়েটিকে ধর্ষিত হতে বাধ্য করানো হয়। এ কাজে এক এক করে একই এলাকার রহমান আলী মন্ডলের ছেলে জিয়াউল হক (৩২), মাহতাব আলীর ছেলে আল আমিনসহ (২৮) আরো ২/৩ জন যুক্ত হয়ে বার বার মেয়েটিকে ট্রেপে ফেলে ধর্ষণ করে। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

এ খবর চাউর হয়ে পড়লে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া বকুল, পল্লী চিকিৎসক মামুন, সুমন মিয়া ও মাহতাবসহ স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বর নিয়ে শালিসের আয়োজন করেন। গত সোমবার রাতে এ নিয়ে শালিসী বৈঠকে ধর্ষকদের জুতার আঘাত, এক লাখ টাকা জরিমানা এবং মেয়েটির গর্ভপাত ঘটিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জরিমানার ৫০ হাজার টাকা নির্যাতিতার পরিবারের হাতে দিয়ে মেয়েটিকে গর্ভপাত ঘটানোর নির্দেশ দিয়ে এবং ঘটনাটি চেপে যেতেও চাপ দেয়া হয় পরিবারটিকে।

ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে বাদী-বিবাদী কেউ আমাকে এখন পর্যন্ত জানায়নি।

এদিকে মেয়েটির বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছিল। মঙ্গলবারও সে পরীক্ষা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে- সে পরীক্ষায় অনুপস্থিত। ধনবাড়ী কলেজিয়েট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএম মাসুদ কবীর মেয়েটির অনুপস্থিতির কারণ বলতে না পারলেও - খোঁজ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

অপরদিকে নির্যাতিত ওই মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মা-বাবা কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ীতে উপস্থিত মেয়ের ছোট ভাই ইয়াছিন (৭) জানায়, তাকে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দরিদ্র অসহায় পরিবারটি এ নিয়ে ভয়ে আত্মগোপন করেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ধনবাড়ী থানার ওসি মজিবর রহমান ঘটনার কথা কিছু শুনেছেন কিন্তু কোন লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে লিখিত পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটির খোঁজ নেয়ার জন্য থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফারুকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর জাকারিয়া বকুল, ঘটনা মিমাংসার কথা অস্বীকার করেছেন।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন