কে এই কুখ্যাত ‘পঁচিশ’?

  10-07-2018 05:03PM

পিএনএস ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে মাদক ব্যবসায়ী নাদিম ওরফে ‘পঁচিশ নাদিম’ নিহত হয়েছেন। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-২) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে তিনি নিহত হন।

র‍্যাব-২-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রবিউল ইসলামের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল এলাকায় ইয়াবার লেনদেন হচ্ছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে র‍্যাব সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‍্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে নাদিম ওরফে পঁচিশ নাদিমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

র‍্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ৪ হাজার ২০টি ইয়াবা ও একটি শুটারগান, বিদেশি পিস্তল ও ৬টি গুলি উদ্ধার করা হয়। নাদিম ওরফে পঁচিশ নাদিম কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে ঢাকায় ক্ষুদ্র মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতেন। তাঁর বাড়ি মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকের ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে।

কীভাবে তিনি ‘পঁচিশ’ হলেন
তাঁর নাম মো. নাদিম হোসেন। এই নামে তিনি তেমন পরিচিত নন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ৩৫ বছর বয়সী এই যুবক পরিচিত ‘পঁচিশ’ নামে। ক্যাম্পের গরিব মানুষকে দান করে তাদের কাছে জনদরদি সেজেছেন। কখনো কখনো নেতৃত্ব দেন ক্যাম্পের মাদকবিরোধী প্রচারণায়। তবে এসবের আড়ালে তাঁর আসল পেশা মাদক ব্যবসা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পঁচিশ রাজধানীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত। প্রতিদিন তিনি লাখ লাখ টাকা আয় করেন মাদক ব্যবসা থেকে। তবে পুলিশ সহজে তাঁর নাগাল পায় না। কখনো আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পুরোনো ব্যবসায় ফিরে যেতেন। কেউ যদি তাঁর ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়াতেন, তাহলে হত্যা করতেও পিছপা হতেন না তিনি।

মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে পঁচিশের জন্ম। জন্মের পর মা-বাবা ছেলের নাম রাখেন মো. নাদিম হোসেন। জেনেভা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ছোটবেলায় নাদিমের মা-বাবা মারা যান। তখন সংসারে ছিল আরও দুই ভাই ও দুই বোন। এঁদের মধ্যে এক ভাই ও এক বোন প্রতিবন্ধী। অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলাতেই জেনেভা ক্যাম্প এলাকার একটি হোটেলে কাজ করেন তিনি। তখন প্রতিদিন বেতন ছিল ২৫ টাকা। হোটেলে কাজ করতে করতে গাঁজা বিক্রি শুরু করেন। সাদা কাগজে মোড়ানো এক পুঁটলি গাঁজা বিক্রি করতেন ২৫ টাকায়। হোটেলের বেতন আর গাঁজার দাম একই হওয়ায় নাদিমকে এলাকাবাসী ডাকতে শুরু করে ‘পঁচিশ’ নামে। একসময় নাদিম নিজেই ‘পঁচিশ’ নামে পরিচয় দিতে শুরু করেন।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিন আসামিকে আটক করা হলে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ বাহিনীর ওপর পঁচিশের সহযোগীরা হামলা চালায়। এ সময় তিনি নিজে তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করেন যৌথ বাহিনীর ওপর। পুলিশ ছয়টি গুলি ছুড়লে তাঁর সহযোগীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

র‍্যাবের ভাষ্য, মো. নাদিম হোসেনের ছদ্মনাম পঁচিশ। বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের আড়ালে মাদক ব্যবসা করতেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি তালিকাভুক্ত। প্রতিদিন তিনি মাদক ব্যবসা থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করতেন। তবে পুলিশ সহজে তাঁর নাগাল পেত না। নাদিম কখনো আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে আবার পুরোনো ব্যবসায় ফিরে যেতেন। পঁচিশের নামে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন