মহাদেবপুরে চিনির সঙ্গে বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নকল গুড়

  26-06-2019 06:33PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আখ ছাড়াই চিনির সঙ্গে ময়দা, ভুট্টার গুড়া, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি ও ক্ষতিকর রঙসহ নানা বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে নকল আখের গুড়। এক শ্রেণির অর্থলোভী গুড় উৎপাদনকারী আখের গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে প্রশাসনের নাকের ডগায় নকল গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন। এসব গুড় স্থানীয় হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাক ভরে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু নেই কোনো নজরদারি বা সক্রিয় পদক্ষেপ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের সোমসের আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ (৬০) নিজ বাড়িতে প্রায় ১৫ বছর থেকে অবাধে নকল গুড়ের কারখানা চালিয়ে যাচ্ছে। আখের রস ছাড়াই নিম্নমানের চিনির সঙ্গে ময়দা, ভুট্টার গুড়া, চিটাগুড়, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি কাপড়ের রঙ ও নানা বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নকল আখের গুড়, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। এ কারখানা মালিক প্রতিদিন শত শত মণ নকল আখের গুড় তৈরি ও বাজারজাত করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় সচেতন মহলে। তারা এ কারখানা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান কামনা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত গুড় বাজারে আসলেও সংখ্যায় কম। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় নকল গুড়ের রঙ সাদা ও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা সাদরে তা গ্রহণ করছে। পক্ষান্তরে প্রকৃত গুড়গুলো দেখতে তুলনামূলক কালো হওয়ায় তা ক্রেতারা কিনছেন না। ফলে স্বাদ-গন্ধহীন সেই নকল গুড়েই সয়লাব হচ্ছে হাট-বাজার।

কৃষি তথ্য সার্ভিস এর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, আখের দানাদার গুড় উৎপাদনের জন্য পরিপূর্ণ পরিপক্ব আখ প্রয়োজন। উপযোগী জাতগুলো হলো- ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ২৬, ঈশ্বরদী ৩০, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৮। প্রচলিত আখ মাড়াইকলের রস আহরণ ক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ। বাংলাদেশে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নত আখ মাড়াইকলের রস আহরণ ক্ষমতা প্রায় ৬০ ভাগ।

ওই ওয়েবসাইট সূত্রে আরো জানা যায়, বিভিন্ন কারণে গুড় পরিশোধন করা কঠিন। কারণগুলো হলো- রোগ ও পোকা আক্রান্ত আখ, অপরিপক্ব বা অধিক পরিপক্ব আখ, রসে অধিকমাত্রায় গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ, আখের জাত ও রস জ্বাল দেওয়ার ভুল পদ্ধতি ইত্যাদি। এসব কারণে উন্নতমানের দানাদার গুড় উৎপাদন সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় গুড় প্রস্তুতকারকরা গুড়ের রঙ দ্রুত পরিবর্তনের জন্য অতিমাত্রায় রাসায়নিক পরিশোধক দ্রব্য হাইড্রোজ ব্যবহার করে, যা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হাইড্রোজ দেওয়া গুড়ে হাইড্রোজের গন্ধ থাকে এবং রঙ হালকা সাদাটে বা অনুজ্জ্বল সোনালি হয়।

মোমিনপুর গ্রামের বাসিন্দা খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আখ ছাড়াই চিনি ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে আব্দুল আজিজ নকল আখের গুড় তৈরি করছেন। এসব নকল গুড় স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে গিয়ে বাজারজাত করছে। কিন্তু, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ নকল গুড়ের কারখানা মালিক আব্দুল আজিজ এর বক্তব্য গ্রহণের জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান আলাল বলেন, ‘ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়ে তৈরি নকল গুড় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব গুড় খাওয়ার ফলে মরণব্যাধি ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভারে পচনসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভানা থাকে।’

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘নকল গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. হাসান আল-মারুফ বলেন, দ্রুত তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ’

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা খাতুন (ইউএনও) বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। যদি বিষয়টি সত্য হয়ে থাকে তাহলে কারখানা বন্ধসহ নকল গুড় উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন