প্রায় তিন বছর ধরে শূন্য বেরোবি’র ট্রেজারার পদ

  17-03-2016 09:35AM

পিএনএস, এইচ.এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : প্রায় তিন বছর ধরে শুন্য রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গুরুত্বপূর্ণ ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ্য) পদটি।একই সাথে ঐ একই সময় ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষটিও। আর সেই বলে নিজেই সিনেট আর সিন্ডিকেটের দুটি পদ আঁকড়ে ধরে আছেন উপাচার্য ড. একে এম নূর-উন নবী ।যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অর্থ হিসাব-নিকাশ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব থাকে।

জানা যায়, পূর্বে কারমাইকেল কলেজ এর সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোজাম্মেল হক ৪ বছরের জন্য ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ্য) হিসাবে নিয়োগ পান। পরে বর্তমান উপাচার্য যোগদানের ৪ মাসের মাথায় ১৭/৮/২০১৩ তারিখে তাঁর ট্রেজারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পদটি শূন্য হয়। কিন্তু উপাচার্য সে পদ পূরনের উদ্যোগ না নিয়ে ‘যোগ্য লোক খোঁজা হচ্ছে’ বলে নিজেই সে পদ আঁকড়ে ধরে আছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানী ভাতাও গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত এবং ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিপ্রাপ্ত ২০০৯ সালের ২৯ নং আইন দ্বারা পরিচালিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১৩(১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, চ্যান্সেলর, তদ্কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে, চার বৎসর মেয়াদের জন্য একজন ট্রেজারার নিযুক্ত করিবেন এবং তিনি একজন অবৈতনিক কর্মকর্তা হইবেন, তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল হইতে চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্ধারিত সম্মানী প্রাপ্য হইবেন।

উল্লেখিত ধারার (৩) এ বলা হয়েছে, ছুটি,অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে ট্রেজারারের পদ সাময়িকভাবে শূন্য হইলে সিন্ডিকেট অবিলম্বে চ্যান্সেলরকে তৎসম্পর্কে অবহিত করিবেন এবং চ্যান্সেলর ট্রোজারারের কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য যেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলিয়া মনে করিবেন সেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

(৪)এ বলা হয়েছে, ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান করিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত নীতি সম্পর্কে ভাইস-চ্যান্সেলর, সংশ্লিষ্ট কমিটি, ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পরামর্শ প্রদান করিবেন। (৫)এ উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রেজারার, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ পরিচালনা করিবেন এবং তিনি বার্ষিক বাজেট ও হিসাব-বিবরণী পেশ করিবার জন্য উক্ত সিন্ডিকেটের নিকট দায়ী থাকিবেন।

(৬) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,যেই খাতের জন্য অর্থ মঞ্জুর বা বরাদ্দ করা হইয়াছে সেই খাতেই যেন উহা ব্যয় হয় তাহা দেখার জন্য ট্রেজারার, সিন্ডিকেট প্রদত্ত ক্ষমতা সাপেক্ষে, দায়ী থাকিবেন। অনুচ্ছেদ (৭) অনুযায়ী, ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অর্থ সংক্রান্ত সকল চুক্তিতে স্বাক্ষর করিবেন।

ধারার উল্লেখিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সংক্রান্ত সকল তথ্য এবং কার্যক্রম কোষাধ্যক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ যেটা প্রায় তিন বছর ধরে শূন্য রয়েছে।এই গুরুত্বপূর্ণ পদেও অনিয়ম আর সদব্যবহারের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাঠামোগত উন্নতি-অবনতি নির্ভর করে।

অভিযোগ রয়েছে যে,উপাচার্য নিজেই ট্রেজারার পদে থেকে এবং অর্থ ও হিসাব দপ্তরে কোনো পরিচালক নিয়োগ না দিয়ে নীরবে আর্থিক অনিয়ম করে চলেছেন। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় আপ্যায়ন বিল দেখানো হয় ৮০০০/- টাকা ।অথচ সবশেষ সিন্ডিকেট সভায় আপ্যায়ন বিল দেখানো হয়েছে ৫০,০০০/- টাকা । যেখানে উপস্থিতি ছিলো ১৩ জন। একাডেমিক কাউন্সিলের আপ্যায়ন বিল দেখানো হয়েছে ৪০,০০০/-টাকা।যেখানে উপস্থিতি ছিলো সর্বোচ্চ ৩০ জন। যদিও এসব ব্যয়ের জন্য অগ্রীম টাকা উত্তোলন করা হয় কোনো না কোনো কর্মকর্তার নামে। টাকা উত্তোলন করেই সব টাকা উপাচার্য নিয়ে নেন। এখান থেকে যা খরচ হয় তা তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দেন।বাকী টাকা তিনি পকেটে নিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সমন্বয় করে দিতে বলেন। এসব বিষয়ে কাউকে কোনো কথা বলতে দেন না তিনি। অর্থ ও হিসাব শাখার কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে তাঁর সামনে বসিয়ে ফাইলে স্বাক্ষর নেন। কোনো কর্মকর্তা আপত্তি করতে চাইলে তিনি ধমক দিয়ে বলেন,‘আমি উপাচার্য বলছি। এখানে স্বাক্ষর কর।’ বাধ্য হয়ে তাঁর সামনে বসেই স্বাক্ষর করতে হয়। এমনকি এ সংক্রান্ত সকল ফাইল ভাউচারসহ উপাচার্য দপ্তরেই সংরক্ষণ করা হয়। এ রকমই অভিযোগ করেন কর্মকর্তারা।

ট্রেজারার দপ্তর শুন্য থাকায় এবং তিনি স্বয়ং সে পদ আঁকড়ে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন থমকে গেছে এবং উপর্যুক্ত অবস্থায় উপনীত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।
উপাচার্য নিজেই যেহেতু কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন সেহেতু গত ৬,৭ ও ৮ মার্চ ২০১৬ তিনদিনের কর্মসূচী পালনে গঠিত কমিটি কর্তৃক উত্তোলনকৃত টাকা বাদে শুধু অতিথিবৃন্দের আপ্যায়ন বিল অগ্রীম তোলা হয়েছে ২,৫০,০০০/- টাকা। যদিও এটি উত্তোলন করা হয়েছে একজন কর্মকর্তার নামে।আর অন্য কাউকে দিয়ে ভুয়া ভাউচার করে সমন্বয় করে নেন। উপাচার্য দপ্তরের বিভিন্ন অগ্রীম সমন্বয়ের ফাইলগুলোর ভাউচারগুলো দেখলেই এর প্রমাণ মিলবে বলে অভিযোগ করে জানান কর্মকর্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় উপাচার্য ধমক দিয়ে,শাসিয়ে বিভিন্ন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলন করেন।

‘ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান করিবেন’ আইনে উল্লেখ থাকলেও সেটি আঁকড়ে ধরে অর্থব করে রেখেছেন পদটি।ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজই পড়ে আছে অবহেলায়। এমনকি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সাড়ে ৯৭ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের কাজ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না যেখানে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে উপাচার্য নিজেই রয়েছেন।

তবে উক্ত পদ শুন্য হলে সিন্ডিকেটের সভাপতি হিসাবে উপাচার্য আচার্য (মহামান্য রাষ্ট্রপতি) কে জানিয়েছেন কী না তা জানা যায় নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমরা ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ্য) পদ পূরনে উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে উপাচার্যকে অনুরোধ করলেও কী কারনে তিনি উদ্যোগ গ্রহন করেন নি তা আমাদের জানা নাই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে এম নূর-নবী’কে বুধবার রাতে এক মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

পিএনএস/মো.সাইফুল্লাহ/মানসুর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন