বহুবিধ উপকারী বাঁশ যখন জীবনহানির কারণ

  26-06-2019 04:35PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বড়দের মুখে আগে শুনতাম জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজন। এর বাইরে বাঁশ যে মৃত্যুর কারণও হয়, দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের কারসাজির কারণে গত কিছুদিন যাবৎ সে সত্য দেশবাসীর সামনে চলে আসছে। আগের দিনে নৌকা চলাচলে বাঁশের ব্যবহার বেশি হতো।

বাঁশ কয়েক প্রকার। বাইরা, বরাক, নলি ও মুলি। আরো অনেক ধরনের বাঁশ পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চল এবং পাহাড়ে নানা রকমের বাঁশ আছে। বাঁশ একবার লাগালেই বংশবিস্তার শুরু করে। তিন-চার বছরের মধ্যেই বাগানে পরিণত হয়। এর বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। মাটির জোগান থাকলে বংশবিস্তার দ্রুত হয় ঘটে।

আগের দিনে অদ্যক্ষ দাইরা নারীরা নাকি গর্ভ খালাসের পর নাড়ীর বাঁধন কাটতে বাঁশের উপরের অংশ পাতলা ধারালো করে ব্যবহার করতেন।মানুষ বাঁশ দিয়ে ঘর বানাত। বানাত ঘরের বেড়া, পাটাতন ইত্যাদি। এই বাঁশ দিয়ে টুরকি, মোড়া, ডালা, খাঁচা, ঝুড়ি, পানডালা, দরজা, চেয়ার, খাট, সোফা, আলমারি ইত্যাদি বানানো হয়। হালে বাঁশ দিয়ে নজরকাড়া শোপিস তৈরি করা হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলে কৃষক, মৎসজীবী ও কুঠির শিল্পের দৈনন্দিন কাজে বাঁশের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বাঁশ ছাড়া তাদের যেন চলেই না। কৃষক লাঙ্গল-জোয়ালে বাঁশের ব্যবহার করেন। এমনকি গরুকে সামলাতে এর লাঠির ব্যবহার জুঁতসই বৈকি। ধান মাড়াই ও বহনের জন্যও বাঁশের বহুবিধ ব্যবহার লক্ষণীয়।

মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরে বাঁশের ব্যবহার না করে পারেন না যেন। বাঁশ দিয়ে নানানভাবে জালের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। মাছের ঘের দিতেও বাঁশ ব্যবহার করেন তারা। এমনকি মাছ ধরে রাখার পাত্র- ঢোল-ঢুলা, খারিও বাঁশ দিয়ে তৈরি। বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরির কথা কার না জানা।

কুটির শিল্পের বড় একটা অংশ বাঁশ-নির্ভর। বেত ব্যবহার করা হয় নামমাত্র।বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য কৃষি পরিবার থেকে শুরু করে গৃহস্থ পরিবারে নিত্য লাগে। জরুরি ব্যবহারের পর বাঁশের অবশিষ্ট অংশ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাহাড়ি এলাকায় অনেকেই বাঁশের করুল বা নরম অংশ নানাভাবে খেয়ে তৃপ্তি পান।

শুধু কি তাই, মৃত্যুর পর মুসলমানদের লাশ দাফনে বাঁশের ব্যবহার অপরিহার্য যেন। কবরে বাঁশের চাউনি দেওয়া হয় শক্তপোক্তভাবে। চাউনির পর অবশিষ্ট বাঁশ করার পাশেই রেখে দেওয়া হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে বাঁশ ব্যবহারের দিকগুলো গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরা বেশি জানেন। হিন্দুদেরও লাশ বহন ও পোড়ানের কাজে বাঁশের ব্যবহার হয়ে থাকে।

গ্রামীণ মানুষের প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ বাঁশ নিয়ে মহলবিশেষকে অতি উৎসাহী মনে হচ্ছে। সেটা না হলে অট্টালিকা নির্মাণে তারা রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করতেন না। একইভাবে শক্ত-পোক্ত রেলের পাতের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হতো না।সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে বাঁশের জয়জয়কার। আর এর করুণ পরিণতির শিকার হয়েছে বৃহত্তর বরিশালে এক শিক্ষার্থী আর সিলেটে অসহায় যাত্রীসাধারণ।

প্রবীণ রাজনীতিকরা প্রায়ই একটি কথা বলতেন- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কাউকে উপকার করার পর ওই ব্যক্তির হাতে ১০ টাকা তুলে দিতেন। আর বলতেন, এই টাকা দিয়ে একটা বাঁশ কিনে রেখো। উপকার করলেও তো বাঁশ দিতে হয়, সে জন্য আগে থেকে তৈরি থেকো। হালে অনেরক এ উদাহরণটা সামনে নিয়ে আসেন।

কালক্রমে সে বাঁশ যে উপকারের পাশাপাশি অমানুষ দুর্নীতিবাজদের খামখেয়ালিতে জীবনহানির কারণে পরিণত, সে সত্য নানাভাবে সামনে চলে আসছে। ব্যক্তিবিশেষের খামখেয়ালিতে আর যেন কেউ অনাহুত মৃত্যুর কারণ না হয়, সে জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন