কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট : অল স্পাইসিসের মতো সফল প্রতিষ্ঠান

  22-03-2015 06:29PM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পাশে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে গেলেই নানা জাতীয় মসলার ঘ্রাণ আপনার মন কেড়ে নেবে। অল স্পাইসিস নামের একটি মসলা জাতীয় গাছের পাতা মুখে নিলে একই সাথে বহু মসলার স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। এটা মহান আল্লাহ্তায়ালার এক অপার সৃষ্টি। শুধু অল স্পাইসিস কেন অনেক দুস্প্রাপ্য মসলার গবেষণাই সেখানে হচ্ছে। আবার সাধারণ মসলার ফলন কিভাবে অধিকতর করা যায় তা নিয়েও গবেষণা হয় সেখানে। তবে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জনবল ও বাজেট আরো বৃদ্ধি করলে কেন্দ্রটি আরো বেশী যুগোপযোগী হতে পারে।

বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মতোই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধিকাংশ প্রকল্পই সাফল্যের সুঘ্রান ছড়িয়ে দিচ্ছে। শস্যের বহুমুখীকরণ এবং কৃষিজ পণ্যের মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে কৃষি অর্থনীতিকে এক মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে অহর্নিশি কাজ করে চলেছেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগন। বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অল স্পাইসিস যেমন একাই অনেক সুঘ্রাণ ধারণ করেছে ঠিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটও একই ছাদের নীচে অনেক কৃষিজ পণ্য নিয়ে গবেষণা করছে।

পর্যালোচনা জানা যায়, বিগত শতাব্দীর ৭০ ও ৮০ দশকে বাংলাদেশে খাদ্যাভাব লেগেই থাকতো। খাদ্য চাহিদা পূরণের স্বার্থে আমদানিই ছিল একমাত্র পথ। তখন খাদ্য আমদানি করতে বিলম্ব হলেই দ্রব্যমূল্য লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পেত এবং কখনো কখনো দুর্ভিক্ষও হতো। উত্তর জনপদে হতো মঙ্গা নামের খাদ্যাভাব। সহযোগী খাদ্য যেমন-ফলমূল, সবজি, মসলাসহ সব ধরণের খাদ্য উপাদানের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হতো। ফলে প্রতিনিয়তই খাদ্য উপাদানের সংকট লেগেই থাকতো। এই খাদ্য সংকট যখন চরম আকার ধারণ করে তখনই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খাদ্য সমস্যা সমাধানের উছিলায় পরিণত হয়। মহান আল্লাহ্তায়ালার অপার রহমতের কল্যাণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের গবেষণা লব্ধ বিভিন্ন ফসলের জাত ও কৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে পৌছে দেন। উদ্ভাবিত এই জাত কখনো কখনো আবহাওয়ার বিরূপতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে আবার কখনো কখনো তা উৎপাদনের মাত্রাকে সমৃদ্ধ করেছে। এতে করে ফসলের উৎপাদনের পরিমান ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহান আল্লাহ্ তায়ালার অসীম করুণায় এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উছিলায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা লাভ করেছে। এতে করে দেশের কৃষি অর্থনীতি শুধুই উন্নততর পর্যায়ে পৌছেনি দেশের জনগোষ্ঠীর জীবন মানও আশাব্যঞ্জক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি গবেষণায় এই অসামান্য সাফল্যের কারণে দেশের মানুষ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিকট ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এরই আলোকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানীদের উজ্জীবিত করতে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রদান অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। সার্বিক বিচার বিবেচনায় গত বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউকে স্বাধীনতা পদক ২০১৪ প্রদান করা হয়েছে। এই স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির অবদান অসামান্য।

অনেকের মনেই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে যে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন স্বাধীনতা পদক পেল? সংগতঃকারণেই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম, গবেষণা ও অর্জন সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনাকরা গেল যা থেকে বোঝা যাবে কেন প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতা পদক ২০১৪ অর্জন করেছে।



বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) দেশের সর্ববৃহৎ বহুবিধ ফসল ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দেশের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধান, পাট, ইক্ষু, চা ও তুলা ব্যতিত অন্যান্য প্রায় ২০০টির অধিক ফসল যেমন, দানা ফসল, কন্দাল ফসল, তেল ফসল, ডাল ফসল, সবজি, ফল ও ফুল, মসলা ফসল এর উপর গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিএআরআই অদ্যাবধি উচ্চ ফলনশীল, প্রতিকূল আবহাওয়া সহিষ্ণু (খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা), রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী ১০৫টি ফসলের হাইব্রিডসহ ৪১৫টি উন্নত জাত এবং ফসলের পরিচর্যা, রোগ বালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা, মৃত্তিকা ও সেচ ব্যবস্থাপনা, কৃষি যন্ত্রপাতি, উন্নত ফসল বিণ্যাস ও খামার পদ্ধতি উন্নয়ন, শস্য সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তির আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ এবং চরাঞ্চল, হাওর, পাহাড়াঞ্চল ও উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার উপযোগী ৪৪২টি উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসমূহ সম্প্রসারণকর্মী, কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মী ও সরাসরি কৃষকের নিকট হস্তান্তরের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিশাল দারিদ্র পীড়িত জনগোষ্ঠীর অনেকাংশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয়েছে। অত্র ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেবল বাংলাদেশে নয়, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মডেল ইনস্টিটিউট বা Institute of Scientific Excellence এ পরিণত হয়েছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পূর্বে দেশে প্রায় ০.১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে প্রায় ০.১ মিলিয়ন টন গম উৎপাদিত হতো। বিএআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল, তাপ, লবণাক্ততা ও রোগ-বালাই সহিষ্ণু জাত চাষ করে বর্তমানে গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্যে পরিণত হয়েছে। বিএআরআই এ পর্যন্ত গমের ২৮টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, ফলে দেশে বর্তমানে প্রায় ০.৪১৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন মে. টন গম উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। চাষকৃত গমের শতভাগই বিএআরআই হতে উদ্ভাবিত জাত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ১৯৭২-৭৩ হতে ২০১২-১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি গমের উৎপাদন ২৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে গমের ৪টি নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যেগুলো কেবল উচ্চ ফলনশীলই নয় অন্যান্য গুণেও গুণাণ্বিত। এর মধ্যে বারি গম ২৫ তাপ ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু, বারি গম ২৬ তাপ সহিষ্ণু, বারি গম ২৭ Stem rust race UG ৯৯ প্রতিরোধী এবং বারি গম ২৮ স্বল্প মেয়াদি (১০২-১০৮ দিন) ও তাপ সহিষ্ণু। উক্ত জাতসমূহ অবমুক্তির ফলে দেশের লবণাক্ত-দক্ষিণাঞ্চল এবং রুক্ষ ও কম আর্দ্রতা সম্পন্ন বরেন্দ্র অঞ্চলের পতিত জমিতে অল্প সেচ প্রয়োগ করে এখন গম চাষ করা হচ্ছে। গম গবেষণা ও উন্নয়নের এই অসামান্য সফলতার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে।

বিএআরআই এর হাইব্রিড ভুট্রা জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে ভুট্রা চাষে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যেখানে নামে মাত্র ভুট্রা উৎপাদন হতো বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২.২ মিলিয়ন মেট্রিক টনের উপর দাঁড়িয়েছে। বিএআরআই এ পর্যন্ত ১১টি হাইব্রিড জাত সহ মোট ১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশের পোলট্রি শিল্প সহ অন্যান্য খাতে ভুট্রার চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কন্দাল ফসলের মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু এবং কচু দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যেখানে আলু উৎপাদন হতো মাত্র ৬ লক্ষ মেট্রিক টন তা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ লক্ষ মেট্রিক টনের উপর দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৫৫টি উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলোর মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের ফলে দেশে আলু উৎপাদনে এক নীরব বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বল্প পরিসরে আলু রফতানিও শুরু করেছে। ইদানিংকালে দেশে প্রথমবারের মতো শংকরায়ণের মাধ্যমে আলুর ৫টি ক্লোনাল হাইব্রিড জাত অবমুক্ত করা হয়েছে যার উৎপাদন প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে ২০%-৩০% বেশি।

অপরদিকে, বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির আমিষের উৎস ডাল। কিন্তু নানা কারণে ডাল শস্যের জমি সংকুচিত হয়েছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ হাজার মেট্রিক টন ডাল উৎপন্ন হয়। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মসুর, মুগ ও ছোলার ডাল চাষ করে ২৫%-৩০% ডালের ফলন বাড়ানো সম্ভবপর হয়েছে এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএআরআই উদ্ভাবিত বারি মুগ ডাল ৫ ও ৬ ব্যাপকভাবে কৃষক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। বিশেষত স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় শস্য পরিক্রমায় খুব সহজেই উক্ত জাতসমূহ অর্ন্তভুক্ত করা সম্ভবপর হচ্ছে, ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন দেশে ডাল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ছে অন্যদিকে বিভিন্ন ফসল চাষের নিবিড়তা ও মাটির ঊর্বরা শক্তিও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে ( মাটিতে নাইট্রোজেনের সহজলভ্যতা বৃদ্ধির কারণে )।

প্রতিদিনের খাদ্য ও পুষ্টিতে তেল অপরিহার্য । কিন্তু দেশে উৎপাদিত প্রায় ৬.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন তেল প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ । দেশকে তেল ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য বিএআরআই আটটি গুরুত্বপূর্ণ তেল ফসলের (সরিষা, তিল, গর্জন তিল, চীনাবাদাম, তিশি, সূর্যমুখী, কুসুম ফুল ও সয়াবিন) উপর গবেষণা করে উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প মেয়াদী জাত ও উন্নত উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবন করে চলছে। বর্তমানে “বারি সরিষা-১৪” ও “ বারি সরিষা-১৫”, বোরো ধান- রোপা আমন শস্য বিণ্যাস অন্তর্ভূক্ত করে সরিষার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।



আমরা অবশ্যই জানি, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষত পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য সবজি ও ফলের অবদান অনস্বীকার্য । একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক সবজির চাহিদা যেখানে ২২০ গ্রাম বাংলাদেশে সেখানে সরবরাহ মাত্র ৬০ গ্রাম । সবজির ঘাটতি পুরণের জন্য বিএআরআই এ পর্যন্ত ২৯টি সবজি ফসলের মোট ৮৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত (হাইব্রিডসহ) ও বেশকিছু আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে। যে কারণে বিভিন্ন সবজি ফসলের আবাদযোগ্য জমি ও সার্বিক উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া তাপ সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের ফলে অনেক সবজি ফসল যেমন, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, শিম ইত্যাদি উৎপাদন আগে যেখানে কেবল শীতকালেই সীমাবদ্ধ ছিল এখন সেগুলো সারা বৎসরই চাষ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষত বিএআরআই উদ্ভাবিত টমেটোর বেশ কয়েকটি হাইব্রিড জাত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে এক নীরব বিপ্লব সংঘটিত করেছে।

সবজির মত ফলের উৎপাদনে দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। মাথাপিছু দৈনিক ৮৫ গ্রাম ফলের চাহিদার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন থেকে আসে মাত্র ৩৫ গ্রাম। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২৬টি ফলের উন্নত জাতসহ উৎপাদন সংক্রান্ত বেশ কিছু আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ফল-ফসল উৎপাদনের হার দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে, বিশেষত পাহাড়ী অঞ্চলসহ অনেক অনাবাদি জমিতে বিএআরআই উদ্ভাবিত জাতসমুহ দিয়ে ফল বাগান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে বছর ব্যাপি দেশীয় ফলের সহজলভ্যতা যেমন বাড়ছে তেমনি বিদেশে ফল রফতানির সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে মসলা খুবই জনপ্রিয় । দেশে প্রতিবছর ব্যবহৃত মসলার বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পর কৃষক পর্যায়ে এ কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত ২২টি জাতের ফলন বেশ ভালো ও উৎসাহব্যঞ্জক । এছাড়া গ্রীষ্মকালীণ পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি মসলার জাত কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় হয়েছে। এর ফলে একদিকে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মসলার আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে মরিচ, হলুদ এর মত কয়েক ধরণের মসলা স্বল্প পরিমাণে বিদেশে রফতানি হওয়া শুরু হয়েছে।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিএআরআই উদ্ভাবিত ৩৩টি কৃষি যন্ত্রপাতি সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে কৃষি কাজকে কেবল লাভজনকই করেনি অনেক দরিদ্র কৃষকের আয় বৃদ্ধির অবলম্বনেও পরিণত করেছে। বিএআরআই উদ্ভাবিত হাইস্পীড রোটারি টিলার, পাওয়ার টিলার চালিত ইনক্লাইন্ড প্লেট সিডার, বেড প্লান্টার, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র, শক্তি চালিত ভুট্রা মাড়াই যন্ত্র, শক্তি চালিত শস্য মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদি কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে এবং সার্বিকভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যয় হ্রাসসহ ফসল উৎপাদনও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেবল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই কাজ করছে না সাথে পরিবেশ সংরক্ষণের উপরও ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিষাক্ত বালাইনাশকের উপুর্যপুরি ব্যবহার হ্রাস করে পরিবেশ বান্ধব, স্বল্প ব্যয় সম্পন্ন আইপিএম পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য বেশকিছু যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। জৈব বালাইনাশক বিশেষত ফেরোমন ফাঁদ ভিত্তিক উক্ত প্রযুক্তিসমূহ কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয় হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিগত ২০১০-১১ অর্থ বছরে তার পূর্ববর্তী বছর হতে প্রায় ৩,১৯০ মেট্রিকটন কম বিষাক্ত বালাইনাশক মাঠ পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সন হতে ২০১২ সনে দানাদার, তরল ও পাউডার রাসায়নিক কীটনাশক যথাক্রমে ১৮.৭%, ৩.৩%, ও ৪.৫% এবং রাসায়নিক মাকড়নাশক ২৫.২% কম ব্যবহৃত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি সহজলভ্য হওয়ার সাথে সাথে বিদেশের বাজারেও সবজি রফতানির দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। পরিবেশ- বান্ধব, কার্যকরী ও স্বল্প ব্যয় সম্পন্ন সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করার জন্য বিএআরআই বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পুরস্কারও লাভ করেছে।

এছাড়াও জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে পোকামাকড়, রোগবালাই প্রতিরোধী এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এমন জাত উদ্ভাবনে গবেষণার প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেয়া হয়েছে এবং দেশে প্রথমবারের মত বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী বিটি বেগুনের এর ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে কৃষকগণ অত্যন্ত কম খরচে পরিবেশবান্ধব পোকামুক্ত বেগুন উৎপাদন করতে সমর্থ হবে।

বাংলাদেশের অনাবাদি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরেজমিন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে অনেকগুলি কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে যা কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় উন্নত পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য ৮টি মডেল উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ফসল বিণ্যাসের উন্নয়ন একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। গবেষণার মাধ্যমে মোট ২৩টি ফসল বিণ্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে যা বেশ লাভজনক ও মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী।

বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, লবনাক্ততা, উষ্ণতা, খরা, ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্যা ইত্যাদির উপর বিষয়ভিত্তিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উপর গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএআরআই ফসলের প্রতিকুল পরিবেশ প্রতিরোধী বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে ‘বারি গম ২৫’, ‘বারি গম ২৬’, ‘বারি গম ২৭’, ‘বারি গম ২৮’, বারি আলু ২৮, বারি সরিষা ১৬, বারি তেল ৪, বারি মুগ ৬, বারি ছোলা ৯ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । এ সকল জাত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

আগামী দিনের বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিবিড় ফসলধারা উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। বছরে একই জমি থেকে ২-৩টি ফসলের জায়গায় কিভাবে ৪টি ফসল আবাদ করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যা দেশের ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখবে।

এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেবল প্রযুক্তি উদ্ভাবন নয়, উদ্ভাবন প্রযুক্তিসমূহ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ অন্যতম । সারা দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী, কৃষির সাথে সম্পৃক্ত এনজিও কর্মী এবং কৃষকদেরকে বিএআরআই উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তিসমূহের উপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। বিএআরআই এর বিভিন্ন বিভাগ, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র কেবল বিগত এক দশকেই সারা দেশব্যাপী প্রায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে যেখানে দেড় লক্ষাধিক কৃষি কর্মী/ কৃষক সরাসরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে অবস্থিত খামার পদ্ধতি গবেষণা ও উন্নয়ন এলাকা এবং বহুস্থানিক গবেষণা এলাকা এবং বারি প্রযুক্তি পল্লী সমূহে ( ২৬ টি) কৃষকদের মাঠে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, এনজিও ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণ কর্মী এবং এলাকার সংশ্লিষ্ট কৃষকদের উক্ত মাঠ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করাও হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশিরভাগ কৃষককেই নতুন একটি প্রযুক্তির উপর পরিচিত করা বা প্রশিক্ষিত করা সম্ভবপর হয়েছে। প্রিন্ট মিডিয়া যেমন- বার্ষিক প্রতিবেদন, জার্নাল, নিউজলেটার, বই-পুস্তক, ফোল্ডার ইত্যাদির মাধ্যমেও গবেষণালব্ধ ফলাফল ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহের বিবরণ সংরক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ের সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষকদের হস্তান্তর করে বিশাল জনগোষ্ঠীকে আধুনিক কৃষিতে প্রশিক্ষিত করা সম্ভবপর হচ্ছে।



বিগত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষি উন্নয়নে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে ক্রমাগতভাবে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন ফসলের উন্নত জাত ও উৎপাদন বিষয়ক প্রযুক্তি । কৃষি গবেষণার এই চলমান প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত লাগসই প্রযুক্তিসমূহ বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কৃষি সম্প্রসারণবিদদের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে স্বল্প সময়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন, কৃষকের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে এবং সার্বিকভাবে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ বিভিন্ন সময় তাদের সাফল্যের জন্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঃ

(১)গমের উপর গবেষণার জন্যে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৭৪।
(২)কৃষিতে দ্রুত উন্নয়নের জন্যে রাষ্ট্রপতি পদক, ১৯৭৪।
(৩)কৃষিতে অবদানের জন্যে বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ কল্যাণ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক, ১৯৮২।
(৪)গম বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্যে ওমেন সায়েন্টিস্ট এসোসিয়েশনের স্বর্ণ পদক, ১৯৯০ (আন্তর্জাতিক পুরস্কার)।
(৫)জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে বিশেষ পুরস্কার, ১৯৯০।
(৬)কন্দাল ফসলের গবেষণা ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ কল্যাণ ট্রাস্টের স্বর্ণ পদক, ১৯৯৫।
(৭)পোকা মাকড় দমন সংক্রান্ত গবেষণায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
(৮)হর্টিকালচার গবেষণা কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার ২০১২ এবং
(৯)বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্যে দি রিফ্লেক্টর এওয়ার্ড ২০১৩।

এছাড়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে। বিএআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল, তাপ, লবণাক্ততা ও রোগ-বালাই সহিষ্ণু জাত চাষ করে গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্যে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে ২০১২-১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি গমের উৎপাদন ২৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএআরআই এর হাইব্রিড ভুট্রা জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে ভুট্রা চাষে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২.২ মিলিয়ন টনের উপর দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত ৫৫টি উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত স্বাধীনতার পর হতে ২০০৯-১০ পর্যন্ত বাংলাদেশে সবজি ফসলের সার্বিক উৎপাদন ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ বিএআরআই হতে উদ্ভাবিত ২৯টি সবজি ফসলের মোট ৮৫টি উচ্চ ফলনশীল জাত ও আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল। বিএআরআই উদ্ভাবিত ২৬টি ফলের ৬২টি উন্নত জাতসহ উৎপাদন সংক্রান্ত আধুনিক কলাকৌশলের কারণে সারা বছরব্যাপী দেশীয় ফলের সহজলভ্যতা বেড়েছে। বিএআরআই উদ্ভাবিত ৩৩টি কৃষি যন্ত্রপাতি সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও লাভজনক করে তুলেছে।

জৈব বালাইনাশক বিশেষত ফেরোমন ফাঁদ ( যা কৃষকদের কাছে যাদুর ফাঁদ নামে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়) ভিত্তিক সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তিসমূহ সবজি ফসলে বিষাক্ত বালাইনাশক এর উপর্যুপুরি ব্যবহার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিগত দুই বছর যাবৎ কৃষক পর্যায়ে বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে। ফলশ্রুতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি সহজলভ্য হওয়ার সাথে সাথে বিদেশের বাজারেও রফতানির দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়াও বিএআরআই উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতিসমূহ ৪৫টি বেসরকারি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান, উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ১২টি বেসরকারি বীজ বাজারজাতকরণ কোম্পানি, উদ্ভাবিত জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক প্রযুক্তিসমূহ ৮টি বালাইনাশক বাজারজাতকরণ কোম্পানি ও ৪৯টি এনজিও এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এর ফলে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের দারিদ্র্য পীড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের বেকারত্ব ঘুচিয়ে উন্নততর জীবন যাপন করছে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অত্র প্রতিষ্ঠানের ১৭ (সতের) জন বিজ্ঞানী ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে স্বর্ণপদকসহ অন্যান্য পদকে ভূষিত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের ২ জন বিজ্ঞানী তাদের যুগান্তকারী গবেষণা কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে “এমিরেটাস সাইন্টিস্ট” এর মর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. কাজী এম. বদরুদ্দোজা কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজে তার অনবদ্য অবদানের জন্য ২০১২ সনে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট যতো সাফল্য লাভ করবে ততোই উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ করবে আমাদের কৃষিজ সেক্টর। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বেশী আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সরকারের জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকারের নীতি নির্ধারকগণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।



পিএনএস : মোঃ সাইফুল্লাহ মানসুর/জ.উ.আহমাদ/শাহাদাৎ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন