সুন্দরবন ধ্বংসে তেল-সার মেশানো শেষ- বাকি আছে কি?

  07-05-2015 06:22PM

পিএনএস : মঙ্গলবার (৫ মে) বিকেলে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা এলাকার ডুবোচরে আটকা পড়া এমভি জাবালে মুর নামে সারবাহী একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বলেন, কার্গো জাহাজটি ৬৭০ মেট্রিকটন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার নিয়ে মংলা বন্দর ছাড়ে বলে শুনেছি।



এতে করে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা এলাকার ভোলা নদীতে ডুবে যাওয়া এমভি জাবালে নূর জাহাজ থেকে সার গলে নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। বন বিভাগ সনাতন পদ্ধতিতে নৌকায় করে সারের গলিত লাল ফেনা অপসারণের কাজ শুরু করেছে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর ডুবে যাওয়া জাহাজের রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে সনদ বুধবার স্থগিত করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর।



এর আগে মঙ্গলবার ০৯/১২/১৪ইং তারিখ ভোরে শেলা নদীর বাদামতলা খালের মুখে 'ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন' নামে সাড়ে তিন লক্ষ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সুন্দরবনের শেলা নদীতে ফার্নেস অয়েলের ছড়াছড়ির ফলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় জীববৈচিত্রসহ সেখানে বসবাসকারী মানুষ ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।ফার্নেস তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে সুন্দরবন এলাকায় জাহাজ চলাচলের ঘটনা। এরপর সুন্দরবনের ভেতরে নৌযান চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। ওই ঘটনার পর কিছুদিন নৌযান চলাচলে বিধি নিষেধ কঠোরভাবে মানা হলেও খানেক মাস বাদে শিথিল হয়ে আসে। যার ফলে সারবাহী জাহাজ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।



তেল বিপর্যয়ের ঘটনায় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল সুন্দরবনের ভেতরের নদীতে জাহাজ চলাচল বন্ধের সুপারিশ করেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। এর চার মাস পর সীমিত পরিসরে বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ খুলে দেয়া হয়। এতে শুধু জোয়ারের সময়ে ৮ ফুট গভীরতার জাহাজ চলতে পারবে। তবে, আগামী জুন মাসে এ নৌপথটি পুরোপুরিভাবে খুলে দেয়া হবে বলে বিআইডব্লিউটিয়ের ড্রেজিং বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।



আইন না মেনে এ নদীতে নৌযান চালানোর সাথে জড়িতদের অতিসত্তর গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মত দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। বন ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সুন্দরবনের মধ্যদিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করছে।



জাতিসংঘ সুন্দরবনকে ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছে। ১৯৭৪ সালে সুন্দরবনে নেতিবাচক প্রভাব মুক্ত রাখতে সুন্দরবনের নদী ও খালে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সাথে মংলা বন্দর দিয়ে বিকল্প নৌ রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বন রক্ষায় বর্তমান সরকারের উদাসীনতা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে শুধু জাহাজ নয় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের নদী ও খালে সব ধরনের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।



বুধবার সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারবাহী জাহাজ বিপর্যয় সম্পর্কে জানান, জোয়ার থাকাতে এ দুর্ঘটনায় বনের ক্ষয়-ক্ষতি তেমন মারাত্মক হবে না। তবে এ ঘটনায় ডলফিন সহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের যে ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।

তবে তেলবাহী ও সারবাহী জাহাজ বিপর্যয়ের পরে সুন্দরবন আরেকটি স্থায়ী ক্ষতির মুখে হতে যাচ্ছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মধ্যে পড়বে রামপালে ১ হাজার ৩শ’ ২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আন্দোলন করেছেন পরিবেশবাদীরা।

এই বনের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে হাজার হাজার মানুষ। তাই পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা এই জন্য প্রতিবাদ করে জনমত তৈরি করে সরকাকে চাপ প্রয়োগ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে সুন্দরবন রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

পিএনএস/মো.সাইফুল্লাহ/মানসুর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন