যে কারণে কাদেরের পদত্যাগ চাইলেন রিজভী!

  22-01-2019 12:49PM

পিএনএস ডেস্ক : সড়কে নৈরাজ্য-বেহাল অবস্থা ও অস্বাভাবিক মৃত্যু ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, ‘প্রতিদিন দেখছি- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব সারা দেশে ছোটাছুটি করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেবের দৌড়াদৌড়ি কেবল ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ। প্রতিদিন সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়- সড়কে মৃত্যুর মিছিল। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সড়কে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হচ্ছে প্রায় ২০ জন মানুষ। দুঃশাসনের কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে সড়ক ব্যবস্থা।’

মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) জানুয়ারি সকাল সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সড়কে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, ‘রাজধানীতে একদিকে তীব্র ট্রাফিক জ্যাম, অন্যদিকে পরিবহন নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ মানুষ। নিরাপদ সড়ক দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকার লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রীতো প্রতিদিন বিরোধী দলকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে থাকেন, তিনি গণপরিবহনে নৈরাজ্য ও অকালে হাজার হাজার প্রাণ ঝরে যাওয়ার রোধ করতে ব্যর্থতার জবাব দেবেন কি? ওবায়দুল কাদের সর্বকালের ব্যর্থ একজন সড়কমন্ত্রী। যেহেতু মন্ত্রণালয় চালাতে তিনি ব্যর্থ, তার নেতৃত্বের কারণে সড়কে শুধু লাশের ছবি, সেহেতু এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে তাকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। নইলে সড়কে মৃত মানুষের আত্মা শান্তি পাবে না।’

এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। বিএনপি নেতারা পরাজিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরুপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, মহাজোট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষণা করা, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকা ছাড়া করা, এসবই হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভুয়া ভোটে এমপি-মন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এখন বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে আওয়ামী নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে সোহরাওয়ার্দীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় ও গতকাল ভুয়াভোটের সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট ডাকাতিকে এড়িয়ে গেছেন, যা দেখে গণমাধ্যমের কর্মীরাও বিস্মিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

‘বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে- শনিবারের জনসভায় বহু মানুষের চোখ ছিল-নির্বাচনে কারচুপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কি বলেন, কিন্তু তা নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেছেন- বর্তমান সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। দুর্নীতি ও মাদক বিরোধী কথা বলে সবক দিচ্ছেন। মূলত: মহাভোট ডাকাতি, মহাভোট জালিয়াতি ও মহাভোট কারচুপির ইস্যুগুলো ধামাচাপা দিতেই এখন প্রধানমন্ত্রী এসব পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, রাতের আঁধারে ভোট দিয়ে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজে ব্যবহার করে, বিরোধী দলকে নির্মূল করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হরিলুট করে এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রেখে শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।’

রিজভী আরও বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি গণতন্ত্রের সমাধিসৌধের ওপর কোন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান? আসলে শেখ হাসিনার মুখে সুশাসনের অর্থ হলো দেশব্যাপী মৃত্যুর দোলাচলে এক মরণ-হরণের অভিযান, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা। কারণ তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে যা বলেন তার উল্টোটাই বাস্তবায়ন করেন। পৃথিবীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার রেকর্ড একমাত্র শেখ হাসিনারই। শেখ হাসিনা সাড়ম্বরে এখন ভাল ভাল উদ্যোগের কথা বলে মানুষের মন থেকে তাঁর অপকীর্তি মুছতে পারবেন না। সময় থাকতে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে সরকারের বিপজ্জনক অবতরণ হবে। তাই দ্রুত নিজে পদত্যাগ করে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিন। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেতে ঐক্যবদ্ধ।’

সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, শাহিদা রফিক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন