আজ হরতাল : কী ভাবছে আওয়ামী লীগ?

  07-07-2019 08:56AM

পিএনএস ডেস্ক: গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামপন্থী দলগুলোর সমন্বয়ে ডাকা আজকের হরতালে নমনীয় অবস্থানে থাকছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। হরতালে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সমর্থন জানালেও তা আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। তাই এবার হরতালে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, বামদলগুলোর ডাকে জনগণ সাড়া দেবে না। আর বিএনপি তাতে সমর্থন জানালেও কারো কিছু আসে যায় না। গত এক দশকে দেশের মানুষকে বিএনপি কিছুই দিতে পারেনি, বরং হতাশ করেছে। যা দিয়েছে তার সবই আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া হরতালের সংস্কৃতি এখন হারিয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র মতে, অতীতে সরকারবিরোধীদের ডাকা সব আন্দোলন কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে ছিল ক্ষমতাসীনরা। সরকারি দলের তরফে রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে সতর্ক অবস্থায় পাহারা বসানো হতো। আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ নিয়ে সরব থাকতেন। প্রতিপক্ষ দলগুলো মিছিল নিয়ে মাঠে নামলেই ধাওয়া দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হতো। তখন কেন্দ্র থেকেও নির্দেশনা দেয়া হতো। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম। বামপন্থী দলগুলো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে আজকে হরতাল কর্মসূচি পালন করবেন। এই হরতালে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলে হরতালবিরোধী কোনো কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, বামদলগুলো যে ইস্যু নিয়ে হরতাল ডেকেছে বর্তমান সময়ে এটা অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন দেশের মানুষ শান্তি চায়। মাঠে ময়দানে মারামারি হানাহানি একদমই চায় না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কিছু যৌক্তিকতা আছে, বাস্তবতা আছে। নেতারা আরো জানান, বামদলগুলোর হরতাল সফল করার মতো সক্ষমতা নেই। হরতালে বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির তো নিজেদের মধ্যেই শৃঙ্খলা নেই। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে গেলেও তারা কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে বড় কোনো বিক্ষোভ মিছিল কিংবা সমাবেশও ডাকতে সাহস পায়নি বিএনপির হাইকমান্ড। এর প্রথম কারণ হলো- অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে বিএনপি। কর্মসূচি ডাকলে যদি সফল হতে না পারে সে আশঙ্কা থেকে তারা বিরত থেকেছে। দ্বিতীয়ত, বামদলগুলোর হরতালে বিএনপি যোগ দিলেও বিএনপি মাঠে নামতে সাহস পাবে না। মাঠে নেমে সহিংসতা করলেই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। ফলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার আছে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহে আলম মুরাদ বলেন, হরতাল ডেকেছে বামদলগুলো, তাদের কি হরতাল সফল করার মতো সক্ষমতা আছে! তারা তো এমনিতেই দু-চারজন লোক। তিনি বলেন, অতীতে রাজপথ দখল করে রেখেছি। হরতালের গুরুত্ব ছিল। কিন্তু এ হরতালে জনমনে কোনো প্রভাব পড়বে না। কেন্দ্র থেকেও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই হরতালবিরোধী কোনো কর্মসূচি নেই।

এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বামদলগুলো আর কী হরতাল করবে! তাদের কি লোকজন আছে? তারা নিজেরাই তো নানা সঙ্কটের মধ্যে আছে। হরতালে বিএনপির সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সাথে এখন কি কোনো লোকজন আছে? বিএনপি এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপির ডাকে অতীতেও জনগণ কোনো সাড়া দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। দেশের জনগণ এখন উন্নয়ন চায়। জ্বালাও-পোড়াও আর দেখতে চায় না।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। এ নিয়ে যদি বিরোধীরা হরতাল-বিক্ষোভ করেন, করতে পারেন। কিন্তু আমার ধারণা, হরতালে তারা জনগণের সাড়া পাবেন না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বাস্তবতা বোঝে। বাস্তব কারণে যৌক্তিক কিছু দাম এখানে সমন্বয় করা হয়েছে। কাজেই দেশের মানুষ এই বিষয়টাকে সহজভাবে নেবে, এটাই আমরা আশা করি। মন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে যাতে জনগণের কোনো ভোগান্তি না হয়, সরকার সে দিকে সচেষ্ট থাকবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন