‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কা’

  04-12-2019 01:58PM

পিএনএস ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, বেগম খালেদা জিয়া এতো অসুস্থ যে তিনি কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছেন না। যেকোনও সময় তাঁর শারীরিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব হয়ে যেতে পারে। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না। আমরা আশা করি মাননীয় আদালত তাঁকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবেন। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজ নীরবে বসে থাকবে না। আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ডা. শামীম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আগামীকাল ৫ ডিসেম্বর আদালত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের কাছে বেগম জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট তলব করেছে। ৭৫ বছর বয়স্ক এই মহিয়সী নারী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির হাল ধরেন। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপসহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও ১/১১ পরবর্তী সময় তা ব্যাহত হয়। তার পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে খালেদা জিয়ার ভূমিকা দেশবাসীর জানা।’

তিনি বলেন, ‘১/১১ সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত একটি ভিত্তিহীন মামলায় আদালতের রায়ে বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন। একইসময়ে একই রকম মামলা যা ক্ষমতসীন দলের নেতাকর্মীদের নামেও ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অন্যরাও অধিকাংশ জামিনে আছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বাভাবিক আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত।’

এই চিকিৎসক নেতা বেগম জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাঁর হাত এবং পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। যার কারণে জয়েন্টগুলি শক্ত এবং বাঁকা হতে চলেছে, যা কিনা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে। বর্তমানে তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, ওঠাবসা এমনকি নিজ হাতে খাবার পর্যন্ত খেতে পারছেন না।’

ডা. শামীম বলেন, ‘গত পরশু (সোমবার) ডাক্তাররা বেগম খালেদা জিয়ার ওজন মাপতে বারবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তীব্র ব্যাথায় তিনি বিছানা থেকে নামতে পারেননি। তাছাড়া তিনি ব্যাথার কারণে ঘুমাতেও পারছেন না ভালোভাবে। ভয়ংকর ব্যাপার হলো- উনার ডান পায়ে একটি গুটি উঠেছে, যাকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় Rheumatic nodule বলে যা highly tender বা স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র ব্যাথা অনুভুত হয়। যেটি পরবর্তীকালে vasculitis কিংবা gangrene এ পরিণত হতে পারে।’

সংবাদ সম্মেলনে ড্যাবের এই নেতা বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজ পায়ে হেঁটে জেলখানায় প্রবেশ করেন, নিজে হেঁটে দোতলায় তাঁর নির্ধারিত রুমে যান, এমনকি জেলখানা থেকে এর আগে বার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখনও গাড়ি থেকে নেমে নিজে লিফ্ট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কিভাবে আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন- আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না।’

ডা. শামীম বলেন, ‘আমরা জানি যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মানে হলো- কোনও ব্যাক্তির Physical, Mental, Spiritual wellbeing. কিন্তু উপরোক্ত তিনটি উপাদানের কোনও একটিও বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে না বিধায় তিনি ভীষণ অসুস্থ এবং যথাযথ চিকিৎসা না পেলে যে কোনও সময় তার শারীরিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগজনিত বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়ভার সম্পূর্ণরূপে সরকারের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ ও সরকারকেই বহন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বিনা চিকিৎসায় আপনি অমানবিক কষ্ট দিচ্ছেন। তাঁর প্রতি এই নিষ্ঠুরতা বিশ্বের স্বৈরশাসকরা যে আচরণ করে সেই আচরণেরই সমতুল্য। জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আঁচ করতে পারছেন না বলেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি না দিয়ে তাঁকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা ড্যাব’র পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।’

ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মো. আবদুস সেলিম, ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডা. মাসুম বিল্লাহ ও ডা.গালিব প্রমুখ।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন