ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম

  11-07-2018 12:04AM

পিএনএস ডেস্ক :রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স আর বেলজিয়াম। প্রতিবেশী দুই দেশের লড়াইটা হচ্ছে সেন্ট সিটার্সবার্গে । অঘটনের এই বিশ্বকাপের এই ম্যাচটির আগে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কিলিয়ান এমবাপ্পে কি তার দুর্দান্ত গতি এবং দক্ষতা দেখিয়ে ম্যাচ বের করে নিতে পারবেন। নাকি কেভিন ডি ব্রুইনি ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে যাবেন। কে উঠছে স্বপ্নের ফাইনালে? ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স না প্রথম বারের মত ফাইনালে নাম লেখাবে বেলজিয়াম। তাই দেখার অপেক্ষায় কোটি কোটি ফুটবল প্রেমি।

আর্জেন্টিনাকে শেষ ষোলোতে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমির টিকিট পেয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল ফ্রান্স। আর রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জাপানকে ৩-২ গোলে হারানোর পর শেষ আটে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে আজকের সেমিফাইনালের অন্য দল বেলজিয়াম। ধ্রুপদী লড়াই হয়তো নয়, কিন্তু নিজেদের ফুটবলীয় সামর্থ্য দিয়েই যে দল দুটি এ পর্যায়ে এসেছে, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারো। আজকের সেমিতে বিজয়ী দলের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাও যে প্রবল, তা নিয়েও একমত ফুটবল বিশ্লেষকরা।

বিশ্বকাপে ফরাসি বিপ্লব ঘটেছিল ১৯৯৮ সালে। সেবার শুরু থেকে উড়তে থাকা রোনাল্ডোর ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপ জয় করে নিয়েছিল জিনেদান জিদানের ফ্রান্স। বিশ্বকাপ জয়ী ওই দলটির অধিনায়ক ছিলেন আজকের ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশঁ৷ ছয়বছর ধরে তিনি দলের দায়িত্বে আছেন৷ ২০ বছর পর আরেকটি ফরাসি বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ এসেছে এখন দিদিয়ের সামনে। যদি এবারের বিশ্বকাপ ফ্রান্স নিজেদের ইতিহাসে অমরত্ব পাবেন তিনি। তবে কাজটি মোটেও সহজ নয়। কারণে ফাইনালে ওঠার আগে সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ দারুণ ছন্দে থাকা বেলজিয়াম। বিশ্বকাপের ১৩ টি আসরে খেলা বেলজিয়ামের এবারের দলটিকে বলা হচ্ছে 'সোনালি প্রজন্ম'। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচে জয় পাওয়া বেলজিলাম টানা ২৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অপরাজিত আছে। কাজেই এই দুর্দান্ত সোনালি প্রজন্মকে হারিয়ে ফরাসিদের বিপ্লব ঘটনো সহজ হবে না মোটেও।

জিনেদিন জিদান, প্যাট্রিক ভিয়েরা, ডেভিড ত্রেজেগে, থিয়েরি অঁরির মতো তারকায় ঠাসা ছিল ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াড। এবারের দলটির মাঝে ১৯৯৮ সালের ছায়া দেখছেন অনেকে। অন্যদিকে এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা, রোমেলু লুকাকুদের মতো দুর্দান্ত ফুটবলার নিয়ে এসেছে বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সাম্বার ছন্দ থামিয়ে দিয়েছে রবার্তো মার্টিনেজের দল।

প্রথম সেমিফাইনালের আগে দুই দলের তারকাদের ছাপিয়ে অবশ্য আলোচনা হলো দিদিয়ে দেশঁকে নিয়ে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এবার কোচের ভূমিকায়। মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারদের মতো অমরত্বের পথেই আছেন ৪৯ বছর বয়সী সাবেক এ ডিফেন্ডার। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে খেলোয়াড়ের ভূমিকায় শিরোপাজয়ী মারিও জাগালো কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৭০ সালে। ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানির খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ হিসেবে ১৯৯০ সালে শিরোপা জিতেছেন বেকেনবাওয়ার। দেশমের এলিট ক্লাবে উঠতে চাই মাত্র দুটি জয়। আজ তার প্রথম ধাপ।

ফেবারিটের তকমা পাওয়া একমাত্র দল হিসেবে ফ্রান্স কি টিকে থাকবে রাশিয়া বিশ্বকাপে। নাকি তারাও বিদায় নেবে। বেলজিয়াম কোচ ফ্রান্সের বিপক্ষে নতুন কোন কৌশল নিয়ে হাজির হবেন নাকি দেশম আবার কাউন্টার অ্যাটাকের নতুন রূপ দেখাবেন। আর এই সব প্রশ্ন বিবেচনায় নিয়ে ‘প্রেস অ্যাসোসিয়েশন স্পোর্টস’ প্রথম সেমিফাইনালের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পাঁচ বিষয় তুলে ধরেছে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেবারিটের তকমা ছিল ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স এবং স্পেনের ওপর। মেসি এবং রোনালদোর কারণে আর্জেন্টিনা এবং পর্তুগালও পেয়েছিল ফেবারিট তকমা। কিন্তু প্রথম রাউন্ড এবং দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় হয়ে গেছে চার দল। ব্রাজিল বিদায় নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। টিকে আছে কেবল ফ্রান্স। তারাও কি ফাইনাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে। শিরোপা কি এমবাপ্পে, গ্রিজম্যানদের হাতে উঠবে। এই প্রশ্ন এখন ফুটবল সমর্থকদের মুখে মুখে। ফ্রান্সের দলটা দুর্দান্ত। শক্তিমত্তা, গতি, ভারসাম্যের দিক থেকে তারা এখনও ফেবারিটের পালক গায়ে লাগিয়েই উড়ছে।

বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের দলে মাঠের সব পজিশনে সেরা খেলোয়াড় আছে । ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তারা আন্ডারডগই ছিল। কিন্তু প্রথমার্ধের দুই টোকায় ব্রাজিলকে বাড়ির পথ দেখিয়ে দিয়েছে বেলজিয়াম। ফ্রান্সের বিপক্ষেও তারা কি নতুন কোন টোটকা নিয়ে হাজির হবে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে দেওয়ার কোন পথ খুঁজে বের করবে। লুকাকু, হ্যাজার্ড এবং ডি ব্রুইনিরা কি এ ম্যাচেও অপ্রতিরোধ্য থাকবে। নাকি থিবোর্ট কোর্তোয়া গোলমুখ আটকে দেবে। সেটাও থাকবে দেখার।

ফ্রান্সের এই দলটিতে আছে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান, পগবা, জিরুদের মতো তুখোড় ফুটবলার। কিন্তু বেলজিয়ামের বড় হুমকির নাম সম্ভবত ১৯ বছরের তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পে। শুধু বিশ্বকাপে নয়, বছর জুড়ে এই ফরোয়ার্ড প্রতিপক্ষের জন্য হুমকির কারণ হয়েই থেকেছে। পিএসজির হয়ে দারুণ পারফর্ম করেছে। দুর্দান্ত গতি, ড্রিবলিং এবং গোল করেই ফ্রান্স দলে সুযোগ মিলেছে তার। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেকে দারুণ প্রমাণ করেছেন এমবাপ্পে। উরুগুয়ের বিপক্ষে গোল না পেলেও ভালো কিছু সুযোগ তৈরি করেছেন এই ‘নাম্বার টেন’। বেলজিয়ামের চিন্তা জুড়ে তাই থাকবেন এমবাপ্পে।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেলজিয়ামের মতো দল পরিচালনার দক্ষতা কোচ মার্টিনেজের আছে কিনা তা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। এভারটনে তিনি উন্মুক্তভাবে খেলোনোর কৌশলের কারণে বেশ সমালোচিত হয়েছেন। তবে সেটাই কাজে দিয়েছে বিশ্বকাপে এসে। কারণ তার হাতে যে দল আছে তারা উন্মুক্তভাবে ম্যাচের এপাশ-ওপাশ করে বেড়াতে পারেন। আক্রমণ করতে পারেন আবার রক্ষণে দারুণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনভাবে খেলানোর কৌশেই এই বেলজিয়ামকে বদলে দিয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন অনেকের।

বেলজিয়ামকে দারুণভাবে এই ম্যাচে সহায়তা করতে পারেন থিয়েরো অঁরি। কারণ ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, জিতেছেন ইউরো। ফ্রান্সের হয়ে রেকর্ড গোল তার নামের পাশে। এমবাপ্পের মতো তরুণ বয়সে বিশ্বকাপ খেলতে এসে অবাক করেছিলেন সবাইকে। সেই অঁরি এবার ফ্রান্সের শত্রু। কাজ করছেন বেলজিয়ামের কোচিং স্টাফদের একজন হয়ে। ফ্রান্সের খেলার ধরণ তার বেশ জানা।বিশেষ করে ফরাসিদের কাউন্টার অ্যাটাকের যে কৌশল তা তো ফ্রান্স কোচ দেশম, জিদান এবং অঁরি মিলে চুড়ান্ত রূপ দিয়েছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদেও জিদান কাউন্টার অ্যাটাক ‘শো’ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স কোচ দেশম কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর। অঁরি নিশ্চয় জানেন, কিভাবে ফরাসি কাউন্টার ঠেকানো যায়। অনেকে তাই অঁরিকে বড় ম্যাচ ফ্যাক্টর মনে করছেন।

এ পর্যন্ত ৭৩ বার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। ৩০ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বেলজিয়াম এবং ২৪ বার জয় পায় ফ্রান্স। তবে বিশ্বকাপে ২ বারের দেখায় পরাজয়ের স্বাদ পায় বেলজিয়াম।

ফ্রান্স একাদশ হুগো লোরিস, বেঞ্জামিন পাভার, লুকাস হার্নান্দেস, রাফায়েল ভারানে, সামুয়েল উমতিতি, পল পগবা, আঁতোয়া গ্রিজমান, অলিভিয়ের জিরু, কিলিয়ান এমবাপ্পে, এনগোলো কান্তে, ব্লেইজ মাতুইদি।

ফরমেশন: ৪-২-৩-১

বেলজিয়াম একাদশ থিবাউ কুরতোয়া, টোবি আল্ডারভাইরেল্ড, ভিনসেন্ত কোম্পানি, ইয়ান ভেট্রোনঘেন, কেভিন ডি ব্রুইনি, আক্সেল ভিটসেল, মারুয়ানে ফেলাইনি, ইডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, মুসা দেম্বেলে, নাসের চাদলি।

ফরমেশন: ৩-৫-২

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন