চোখের জলেই 'চোকার'দের বিদায়!

  24-03-2015 06:35PM

পিএনএস স্পোর্টস : শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের দরকার দুই বলে পাঁচ রান। স্ট্রাইকে গ্রান্ট ইলিয়ট। বল হাতে ডেল স্টেইন। চাপা উত্তেজনা দুই শিবিরে।

প্রথমবারের মতো ফাইনালে যাওয়ার হাতছানি। শেষ পর্যন্ত লং অনে ইলিয়টের নয়নকাড়া ছক্কা। হতাশ স্টেইন ক্রিজের মধ্যেই শুয়ে পড়লেন। তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলেন গ্রান্ট ইলিয়ট। দূরে শরীর ছেড়ে বসে পড়লেন আরেক পেসার মরনে মর্কেল। কাঁদলেন অঝোরে। ফাফ ডু প্লেসিসের চোখেও জল। আবার চোখ মুছতে মুছতে হাঁটতে শুরু করলেন অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স। গোটা প্রোটিয়া শিবিরই তখন প্রবল হতাশায় আচ্ছন্ন, চোখে বেদনার অশ্রু। ফাইনাল ‘এত কাছে তবু দূরে’র যন্ত্রনায় ক্লিষ্ট সবাই। শেষ পর্যন্ত চোখের জলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো প্রোটিয়াদের।



প্রতিটি বিশ্বকাপেই এমন দৃশ্য। দুর্দান্ত প্রতাপ, চরম দাপট। কিন্তু সেমি কিংবা কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলা। ফলে চোকার্স শব্দটি ভালোমতোই সেটে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে। এবার সেই চোকার্স তকমাটি দূর করার সুযোগ ছিল প্রোটিয়াদের সামনে। কিন্তু না, সেই তিমিরেই রয়ে গেল ভিলিয়ার্স শিবির। চোকার্স তকমাটি যেন দক্ষিণ আফ্রিকানদের হৃদয়েই গেঁথে গেল এবার।

১৯৯২ থেকে ২০১৫, মোট সাতটি বিশ্বকাপ। এর মধ্যে চারটিতেই সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কোয়ার্টার ফাইনাল দুবার। একবারই মাত্র প্রথম পর্ব থেকে বাদ, সেটা ২০০৩ সালে। আশা ছিল চতুর্থ প্রচেষ্টায় সফল হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, পূরণ হবে স্বপ্নের ফাইনালে উঠার স্বপ্ন। কোয়ার্টার ফাইনাল জেতার পর বেশ আত্ববিশ্বাসীই ছিল প্রোটিয়া শিবির।



অধিনায়ক এবিডি ভিলিয়ার্স যেমন বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না’। কিন্তু তার সেই ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করল বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক নিউজিল্যান্ড। চার উইকেটের জয়ে প্রোটিয়াদের কাঁদিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। সপ্তমবারের মতো সেমিতে এসে ফাইনালের দেখা পেল নিউজিল্যান্ড, এর জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি কিউই শিবিরকেও। সবচেয়ে বিস্ময়কর, এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে অপরাজিত নিউজিল্যান্ড শিবির।



দারুন উত্তেজনাকর ম্যাচে বৃষ্টি নাটক ছিল আরও চরমে। ৪৩ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২৮১, পাঁচ উইকেট হারিয়ে। তখনই বৃষ্টি শুরু। দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে পারেনি বাকি ওভারগুলো। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়ায় ৪৩ ওভারেই ২৯৮ রান। দুরুহ এমন টার্গেট ঝড়ো ইনিংসে শুরু করেন কিউই দলপতি ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। মাঝে ইলিয়ট ও অ্যান্ডারসনের দুর্দান্ত এক জুটি। শেষটা ইলিয়টিই করেছেন লং অনে ছক্কা হাকিয়ে।



বেশী আফসোসে পুড়তে পারেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ভিলিয়ার্স। সহজ একটি রান আউটের সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি। বিদায় করতে পারতেন কোরি অ্যান্ডারসনকে। তখন ঐ উইকেটের পতন হলে ম্যাচের দৃশ্য পাল্টে যেতে পারত। এরপর শুরু হয় বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ ছাড়ার মহড়া। যদিও শেষের দিকে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের কারণেই জয়ের স্বপ্ন জোরালো করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।



২০১১ বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার সেমিতেও। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা কী হবে? তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও চারটি বছর।


পিএনএস/সামির/শাহাদাৎ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন