স্টয়নিসের তাণ্ডবে উড়ে গেল মুস্তাফিজের চেন্নাই

  24-04-2024 12:35AM

পিএনএস ডেস্ক: শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৭ রান দরকার ছিল লখনউয়ের। কঠিন এই লক্ষ্যটা সহজেই তাড়া করে দলকে জয় এনে দিলেন মার্কাস স্টয়নিস। আর এটা সম্ভব হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের এলোপাথাড়ি বোলিংয়ে। শেষ ওভারে ১৭ রান আটকাতে এসে ৩ বলে ১৯ রান দিয়েছেন টাইগার এই পেসার।

রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সেঞ্চুরি ও শিবম দুবের ঝড়ে ঘরের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংস বড় সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু মার্কাস স্টয়নিস রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলে তাদের হতাশ করলেন। চেন্নাইয়ের মাঠে রেকর্ড রান তাড়া করে জিতলো লখনউ সুপার জায়ান্টস। ৩ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জিতলো তারা।

একটি পরিবর্তন এনেছিল চেন্নাই। রাচিন রবীন্দ্রর বদলে একাদশে আনা হয় ড্যারিল মিচেলকে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার বড় কোনও ভূমিকা রাখতে পারেননি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মিচেল থামেন ১১ রান করে। তার আগে ইনিংসের ষষ্ঠ বলে আজিঙ্কা রাহানেকে (১) হারিয়ে বাজে শুরু হয় স্বাগতিকদের।

পাওয়ার প্লেতে দ্রুত ২ উইকেট পড়লেও চেন্নাই স্বস্তিতে ছিল রুতুরাজের ব্যাটে। নিজের প্রথম ১৮ বলে ৬ চার মেরে আগ্রাসী ছিলেন তিনি, করেন ৩৬ রান। ২৮ বলে হাফ সেঞ্চুরিও উদযাপন করেন চেন্নাই ব্যাটার।

দলীয় ১০১ রানে রুতুরাজের সঙ্গে জাদেজার ৫২ রানের জুটি ভেঙে যায়। জাদেজা ১৯ বলে ১৬ রান করে মহসিন খানের শিকার হন, সহজ ক্যাচ নেন রাহুল।

চেন্নাই রানের পাহাড় গড়লেও ইনিংসের প্রথম ছক্কা আসে ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে শিবম দুবের ব্যাটে। স্পিনারদের তুলোধুনে করে খ্যাতি পাওয়া দুবের সামনে রবি বিষ্ণয় ও ক্রুনালকে নামানোর সাহস দেখাননি রাহুল।

তাতেও দুবের আগ্রাসী মনোভাব কমেনি। মার্কাস স্টয়নিসের দুই ওভারে একটি ছক্কা ও চার মারেন। তারপর যশ ঠাকুরকে ১৬তম ওভারে টানা তিন ছক্কা মারেন। ১৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে চেন্নাইয়ের রান ছিল ১৫৪! প্রজেক্টেড স্কোর তখন ২০৮।

অন্যদিকে রুতুরাজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ষষ্ঠ শতক হাঁকান ৫৬ বলে। যশকে টানা তিন বলে ৬, ৪, ৪ মেরে। পুরো ডাগআউট তাকে অভিনন্দনে ভাসান। সাঞ্জু স্যামসনের পর আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করেন ২৭ বছর ও ৮৩ দিনের রুতুরাজ।

১৯তম ওভারে আরও বিধ্বংসী দুবে। মহসিনের বলে দুটি চার ও ছয় মারেন। মাত্র ২২ বলে তার হাফ সেঞ্চুরি হয়। শেষ ভারেও দুবে স্টয়নিসকে ছক্কা মেরেছিলেন। কিন্তু ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ২৭ বলে ৬৬ রানে রানআউট তিনি। ১০৪ রানের জুটি ভাঙার পর ক্রিজে নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষের আগের বলে সিঙ্গেল নেন রুতুরাজ। ধোনি তার মতো করেই ইনিংস শেষ করেন। মিডউইকেট দিয়ে চার মারেন তিনি। চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে তখন জমা ৪ উইকেটে ২১০ রান।

৬০ বলে ১২ চার ও ৩ ছয়ে ১০৮ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক রুতুরাজ।

বড় লক্ষ্য দিয়ে প্রথম ওভারেই কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে চেন্নাইকে ভালো শুরু এনে দেন দীপক চাহার।

শুরুতেই উইকেট হারালেও রাহুল ব্যাট হাতে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। স্টয়নিসকে অবশ্য বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে চার মেরে ওই ওভারের চতুর্থ বলে ফিরে যান রাহুল (১৬)।

ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার দেবদূত পাডিক্কালও খুব একটা অবদান রাখতে পারেননি। তবে স্টয়নিস ২৬ বলে ঝড়ো ফিফটিতে লখনউকে ১০ ওভারে ৮৩ রান তুলতে ভূমিকা রাখেন। পরের ওভারে পাডিক্কাল মাত্র ৯ বলে ১৩ রান করে ফিরে যান। যদিও জুটিটা ছিল ৫৫ রানের।

১১ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৮ রান করা লখনউ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে স্টয়নিস ও নিকোলাস পুরানের ব্যাটে। শিশিরের সুবিধা নিয়ে চেন্নাইকে ব্যাকফুটে ফেলেন দুজন।

মোস্তাফিজের দ্বিতীয় ওভারে পুরান বাউন্ডারিতে ও স্টয়নিস ছক্কায় ১৩ রান তুলে নেন। পরের ওভারে শার্দুল ঠাকুরের প্রথম তিন বলে পুরান ১৬ রান করেন দুই ছয় ও এক চারে। অবশেষে ১৭তম ওভারে এই ভয়ঙ্কর জুটি ভেঙে যায় পাথিরানার বলে। পুরান ১৫ বলে ৩৪ রান করে শার্দুলের ক্যাচ হন।

একই ওভারে বাউন্ডারিতে নব্বইয়ের ঘরে ঢোকেন স্টয়নিস।

শেষ তিন ওভারে লাগতো ৪৭ রান। মোস্তাফিজ ও পাথিরানার নির্বিষ বোলিংয়ে দীপক হুদা ও স্টয়নিস পরের দুই ওভারে ১৫টি করে রান তোলেন। শেষ ওভারে দরকার ১৭ রান। মোস্তাফিজের সামনে ছিল নায়ক হওয়ার সুযোগ। কিন্তু তার প্রথম দুই বলে ছয় ও চার মারেন স্টয়নিস। পরের বলটি নো দেন বাঁহাতি পেসার, সঙ্গে বাউন্ডারিও। পঞ্চম বলে আরেকটি চার মেরে জয় উদযাপন করেন স্টয়নিস। রান তাড়া করতে নেমে আইপিএলে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন অজি ব্যাটার। ৬৩ বলে ১৩ চার ও ৬ ছয়ে ১২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন স্টয়নিস। ৬ বলে ১৭ রানে অপরাজিত হুদার সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৯ বলে ৫৫ রানের। ১৯.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৩ রান করে লখনউ।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন