সাধারণের মাঝে অতি অসাধারণ একজন কাজের মানুুুষ

  23-05-2019 02:00PM

পিএনএস ডেস্ক : আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? কবি কুসুমকুমারী দাসের কবিতায় এদেশে যেমন একজন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক যেন তাদেরই একজন। এ উপজেলায় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী যোনদান করেন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ালেখা করা এই কর্মকর্তা এর আগে দুই বছর রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

যোগদানের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছেন ৩১তম ব্যাচের বিসিএস এই কর্মকর্তা। অল্প সময়ে কালীগঞ্জের রাস্তা-ঘাটের যানজটের সমস্যা সমাধান, সরকারী ভূমিতে অবৈধভাবে দখলদারের উচ্ছেদ, জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা এমন সব অবৈধ ব্যাটারী ও টায়ার কারখানা বন্ধ, ভেজাল বিরোধী অভিযান, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অভিযানসহ বেশ কিছু উল্লেখ্যযোগ্য কাজে তিনি তার মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ অনেক সময় প্রশাসনের সেবা থেকে বঞ্চিত হন, কারণ তারা ডিঙাতে পারেন না কর্মকর্তাদের অফিসের দরজা। সরকারি সেবা পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া মনে হয় সমান। দিনের পর দিন ঘুরে কাজ করাতে না পেরে মানুষ আস্থা হারাচ্ছে সরকারি অফিস ও অফিসারদের উপর। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছেন। তেমনই একজন ব্যাতিক্রম মানুষ নোয়াখালী চাটখীল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাশেমের সন্তান মো. শিবলী সাদিক।

এক সময়ের কুখ্যাত এমদু-আলী হোসেনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে অনেক অফিসাররাই এখানে থাকতে চাইতেন না। সেজন্য হয়তো সাধারণের সঙ্গে তাদের দূরত্বও কমেনি কখনো। কিন্তু ভালো কাজ, ভালো ব্যবহার আর ভালোবাসা দিয়ে ইতোমধ্যেই ইউএনও শিবলী সাদিক জয় করে নিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের মন। ক্ষমতাবান মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ দিনমজুর সবার কথা তিনি শোনেন মনোযোগ সহকারে। তাই সাধারণের জন্য নিজের অফিসের দ্বার করেছেন উন্মুক্ত।

সাধারণত যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসের দরজা ডিঙাতে না পারায় দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ প্রশাসনের সেবা থেকে বঞ্চিত হন। উপজেলা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই দূরত্ব কমিয়েছেন ইউএনও শিবলী সাদিক। সবার জন্য তার কক্ষে প্রবেশ করেছেন উন্মুক্ত। যে কোনো প্রয়োজনে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে কড়া নাড়ছে নির্বাহী কর্মকর্তার দরজায়। নিজেদের কষ্টের কথা তারা বলছেন তাদের প্রিয় ইউএনও স্যারের সাথে। যত দ্রুত সম্ভব তারা পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা।

নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে চলতি মাসে ইউএনও শিবলী সাদিক তার নিজ অফিস কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেখেছেন তিনটি সংরক্ষিত আসন। অফিসের অন্যসব আসনের পাশাপাশি লাল রঙের তিনটি আসন। আর ওই আসন তিনটির পাশের দেয়ালে একটি সাদা বোর্ড সাঁটানো রয়েছে। আর তাতে লাল রঙে বড় বড় করে লেখা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত আসন। ইউএনও অফিসে ব্যাতিক্রমধর্মী সম্মাননায় খুশি ’৭১ এ রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা অংকন করা বীর মুক্তিযোদ্ধারাও।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানালেন যুদ্ধবিদ্বস্ত দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেছেন। দেশ স্বাধীনের পরবর্তীতে একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যাই আমাদের সম্মানীত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় ইউএনও শিবলী সাদিকেদের মতো মানুষ এ দেশে সত্যি বিরল। তার মতো সরকারি কর্মকর্তারাই একদিন এ দেশটা বদলে দেবে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উদার মানুসিকতায় একদিন সত্যিকারভাবেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। একই মতামত প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা বাবুল মিয়া, আবুল হোসেন ও সিরাজ মিয়া।

উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার দাস বলেন, আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলার ইতিহাসে এমন জনবান্ধব ইউএনও আমরা কম পেয়েছি। উনি অল্প কয়েকদিনে যেভাবে সকলের ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছেন, এই দেশ একদিন উনার মতো ভালো লোকের কারণেই উন্নতির শিখরে আরোহন করবে। উনি আছেন আমাদের উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের হৃদয়ে।

এমন সব উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, সরকারি অফিসগুলো তৈরি করা হয় জনসাধারণের কাজের জন্য। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ আসে তাদের সমস্যা বা অভিযোগ নিয়ে। কিন্তু আমি যদি আমার অফিসে প্রবেশের জন্য কাউকে বাধা দিই, অফিসের ও সাধারণ মানুষের মাঝে পর্দা দিই, দেয়াল তুলি, তাহলে তারা কীভাবে সেবা নিবে। আমরা চাই জনসাধারণের সঙ্গে প্রশাসনের কোনো দূরত্ব থাকবে না। জনসেবার জন্যই আমাদের প্রশাসন।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাছাড়া নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানের জন্য প্রতীকী আসন সংরক্ষণের এটি একটা উদ্যোগ। প্রত্যেক উপজেলায় এমনিভাবে একটি, দুইটি ও তিনটি আসন সংরক্ষিত রাখা হলে যেমন দেশের প্রতি দেশাত্মবোধ জাগবে তেমনি জাতির সূর্য্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পাবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন