নারীর ব্যক্তিসত্তায় স্বাতন্ত্র্য আসেনি

  17-03-2016 12:26AM

পিএনএস: দেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারী অবস্থান করছেন ঠিকই, তারপরও বলব তারা আজও পরিবারে বাবা অথবা অন্য কোনো পুরুষ অভিভাবক কিংবা স্বামীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। নারীর স্বতন্ত্র মত আজও প্রতিষ্ঠা পায়নি। আর যদি কেউ নিজের মতকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু বলেন বা কোনো কাজ করেন তাহলে পরিবারে তাকে ‘বেয়াদব’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একটি উদাহরণ টেনে প্রসঙ্গটি আরেকটু স্পষ্ট করা যায়।

এ ব্যাপারটি আমাদের দেশে সচরাচর ঘটে, একজন নারীকে বিয়ের আগে শালীন পোশাকের পাশাপাশি বাড়তি পর্দা হিসেবে বোরকা পরতে সাধারণত দেখা যায় না কিন্তু বিয়ের পর ঠিকই স্বামীর ইচ্ছা পূরণের জন্য নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে তোয়াক্কা না করে সেই কাজটি করতে হয়। এই প্রবণতা হয়ত শহরাঞ্চলে তেমন নেই, তবে দেশের আশি শতাংশ মানুষ যে গ্রামীণ এলাকায় বসবাস সেখানে এর মাত্রা তীব্র। তাছাড়া নারীর ভেতরে পুষে রাখা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের বেলায়ও পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের সম্মতির ওপর অনেকটাই ভর করে। যেমন একজন মেয়ে শিক্ষার্থী যদি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন; তার সিদ্ধান্তকে অবহেলা করে অভিভাবক তাকে ভর্তি করিয়ে দেন মানবিক শাখায়। কিংবা কোনো নারী শিক্ষার্থী তার পড়াশোনাকে একটু গুছিয়ে বা শেষ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসার ইচ্ছা থাকলেও সেই মতামতের কোনো দাম নেই।

অভিভাবকের দৃষ্টিতে সুপাত্রের সন্ধান যখনই যে অবস্থায় পাওয়া যায় তখনই বিয়ের আয়োজন ঘটে। কখনো দেখা যায় মেয়েটির পরীক্ষার বাকি এক মাস বা পনের দিন আছে, ওই সময়টি বিবেচনা না নিয়েই বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয়; এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে। সেক্ষেত্রে অভিভাবকের যুক্তিটি থাকে এমন, সুপাত্র সবসময় পাওয়া যায় না, পরীক্ষা খারাপ হলে আরেকবার দেওয়া যায়! বিয়ের পরও সেই একই অবস্থা, তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কিংবা বন্ধ করা সবই স্বামীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। নারীর মতামত এখানেও মূল্যহীন। আবার যদি বলি পরিবার পরিকল্পনার কথা, সেই বিষয়টিও একান্তই স্বামীর ইচ্ছা। বিষয়গুলো হয়ত স্বাভাবিক দৃষ্টিতে গুরুতর কিছু নয় কিন্তু একজন নারী তিনি তো একজন মানুষ। পরিবারের কাছ থেকে এমন অবহেলা নিশ্চয়ই তাকে মানসিকভাবে ছোট করে রাখে। হয়ত তার চাওয়াগুলো নিজের ভেতরে ডুকরে কাঁদে। সুযোগ ও পরিস্থিতির কারণে তা প্রকাশ হয় না। কর্মক্ষেত্রেও নারী এমনই অসহায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর দায়িত্ব কিংবা সিদ্ধান্তকে দ্বিতীয় সারিতে বিবেচনা করেন পুরুষ সহকর্মীরা।

দেশে নারীর সামগ্রিক চিত্র হচ্ছে এই। কিন্তু আমরা নারী প্রসঙ্গে আলোচনা করতেই উদাহরণ টানি দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা, অমুক মন্ত্রী তমুক মন্ত্রী, সচিব বা জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশ সুপার ইত্যাদি। এতেই আমাদের তৃপ্তির শেষ নেই। আমরা ভুলে যাই এই সংখ্যা যৎসামান্য। ছোট্ট করে এখানে উদাহরণ টানছি। যে দলের প্রধানমন্ত্রী নারী সেই দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত নারীর অংশগ্রহণ কেমন বলতে পারেন? হাতেগোনা। কারণ কি? সেই একই কথা, সুযোগের অভাব এবং গুরুত্বহীন ভাবা। রাষ্ট্র এখানে দায় এড়াতে পারেন? নিশ্চয়ই পারেন না। নারীকে দেশের সংবিধান অনগ্রসর অংশ বলে চিহ্নিত করেছে এবং বলেছে এই অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্র বিশেষ বিধান প্রণয়ন করবে। শুধু তাই নয়, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশের ২৮ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে।

নারীর প্রতি পুরুষের এই বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজন পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তন এমনিতেই ঘটবে না। দরকার পাঠ্যবইতে জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে সঠিক শিক্ষা এবং ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া। দেশে সমান সংখ্যক নারী-পুরুষ। নারীর এ বিষয়টি আমরা যত অবহেলায় রাখব তত দেশের ক্ষতি। কারণ একজন নারীরও আছে দুটি হাত একটি মাথা। পুরুষের মতো সমানভাবে তিনিও রাখতে পারেন দেশের অর্থনীতিতে সমান অবদান।



পিএনএস/বাকীবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন