পিএনএস ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় চারজনের মরদেহ রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছিল হামাস।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, কফিনে তারা শিরি বিবাসের মরদেহ পায়নি। এর আগে বেশ কয়েকবার হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
এবার তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার হামাস যে আরিয়েল বিবাস, কেফির বিবাস, অ্যারিয়েলের মা শিরি বিবাস এবং ওদেদ লিফশিতজ নামের চার জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছিল, সেই মরদেহগুলোর মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যক্তির, যার সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের জিম্মি করা ব্যক্তিদের কোনো মিল নেই। শিরি বিবাসের ছবিসহ যে কফিনটি হস্তান্তর করা হয় তার ভেতরের মরদেহের সঙ্গে শিরি বিবাস বা অন্য কোনো ব্যক্তির সামঞ্জস্য খুঁজে পায়নি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
তবে ওদেদ লিফশিতজ নামের অপর এক জিম্মির মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছে তার পরিবার।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, ৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করার প্রক্রিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস সব ধরনের চুক্তি অমান্য করেছে।
হামাস এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার এক ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন করে হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উপস্থিতিতে চারটি কফিন হস্তান্তর করে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি কার্যকর রয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চারজনের মরদেহ রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে। এদেরকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে আটক করে হামাস। স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দাবি বন্দিদের যত্নও নিওয়ে হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে তাদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে হামাস।
কফিন হস্তান্তরের সময় হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা এলাকাটি ঘিরে রেখেছিল। প্রতিটি কফিনের উপর পরিচয় শনাক্তের জন্য একটি করে ছোট ছবি লাগানো ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে এ সময় রেডক্রসের গাড়িগুলো ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়।
মরদেহগুলোর মধ্যে রয়েছে- কেফির বিবাস, অ্যারিয়েল, তাদের মা শিরি বিবাস এবং ওদেদ লিফশিতজের মরদেহ।
কফিন হস্তান্তরের পর ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার আগে তা ইসরায়েল মিলিটারিরা তল্লাশি করে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে কফিন বহনকারী গাড়িবহরকে শেষবারের মতো সম্মান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বন্দি চত্বরেও শোক প্রকাশ করতে জড়ো হয়েছিলেন অনেক নাগরিক।
মরদেহ হস্তান্তর করার পর এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা বন্দীদের জীবিত রাখার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলার কারণে তারা নিহত হন। নেতানিয়াহুর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণেই বন্দিদের মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনটি আরও জানায়, বন্দিদের যত্নও নিওয়ে হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে তাদের হত্যা করেছে।
সংগঠনটি বলেছে, অপরাধী নেতানিয়াহু বন্দিদের কফিনে ফেরত পেয়ে শোক প্রকাশ করছে। কিন্তু এটি কেবল তার নিজের দোষ ঢাকার অপচেষ্টা।
নিহত বন্দিদের পরিবারের উদ্দেশ্যে হামাসের বক্তব্য, আমরা চেয়েছিলাম তাদের জীবিত ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু তোমাদের সেনাবাহিনী এবং সরকারই তাদের হত্যা করেছে। এর সম্পূর্ণ দায় নেতানিয়াহুর উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েলি সরকার বারবার বন্দি বিনিময় চুক্তিতে বাধা সৃষ্টি করায় তারাই এর সম্পূর্ণ দায় বহন করবে।
একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, জীবিত বন্দিদের ফেরত পেতে হলে শুধু বন্দি বিনিময় চুক্তিই একমাত্র পথ। যদি ইসরাইলি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে, তাহলে বন্দিরা আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এদিকে এক ফিলিস্তিনি মুখপাত্র জানান, হামাসের হাতে বন্দি থাকা অবস্থায় ওই চারজনই জীবিত ছিলেন। কিন্তু ‘জায়নিস্ট দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায়’ তারা নিহত হন।
পিএনএস/আনোয়ার
হামাসের হস্তান্তর করা মরদেহ শিরি বিবাসের নয়: ইসরায়েল
22-02-2025 12:30PM
