ছাত্রত্ব বাতিলসহ শাস্তি পেলেন রাবির ৪৬ শিক্ষার্থী

  24-11-2023 08:10PM

পিএনএস ডেস্ক: শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ঘটনায় নানা মেয়াদে বহিষ্কার, ভর্তি ও আবাসিকতা বাতিল এবং সতর্ক করাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৪৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীও রয়েছেন।

ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভার ১৩৮নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই শাস্তি প্রদান করা হয়। গত ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আদেশে উল্লেখিত শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থী নির্যাতন, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদক সংশ্লিষ্টতা, র‌্যাগিং, ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রক্সি দেওয়ার মতো পৃথক ২১টি ঘটনা। এসব ঘটনায় একজনকে স্থায়ী, তিনজনকে ১বছরের জন্য এবং ১২ জনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনের ভর্তি বাতিল, দুইজনের হলের আবাসিকতা বাতিল, একজনের সনদপত্র বাতিল, দুইজনকে ক্যাম্পাসে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা প্রদান, ২২ জনকে সতর্ক করাসহ ২ জনকে ক্ষমা এবং ১ জনকে নিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আদেশ অনুযায়ী, এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আন্তঃবিভাগ ফুটবল-২২ প্রতিযোগিতা চলাকালীন এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষার্থী আবু সিনহাকে ও আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে গণিত এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যকার ঘটনায় জড়িত থাকায় গণিত বিভাগের সানজিদ হাসান আরিফ (অনার্স পর্যায়ে) ও হাফিজুর রহমানকে (মাস্টার্স পর্যায়ে) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ঘটনায় গণিত বিভাগের মহিউদ্দীন পাটোয়ারী ও কাউসার জাহান রবিনকে সতর্ক করাসহ একই বিভাগের অমিত মন্ডল ও এ কে এম বাশার অনিককে ক্ষমা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবু সিনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

অসদুপায় অবলম্বনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, প্রক্সিপ্রদান ও অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা করার অভিযোগে লোক প্রশাসন বিভাগের আল শামস তামিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইয়াছির আরাফাত, ফোকলোর বিভাগের নজরুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফজলুল করিম মাহিন, আইন বিভাগের শফিউল্লাহ, লোক প্রশাসন বিভাগের শিশির আহমেদ শিহাব, মহিবুল মমিন সনেট ও স্বপন হোসাইন, ফিশারিজ বিভাগের আলিফ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের হাসিবুল ইসলাম শান্ত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাকোয়ান সিদ্দিক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

একই অভিযোগে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবীবের ভর্তি বাতিল, ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শোভনের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদের মধ্যে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিস্কৃত) , হাসিবুল ইসলাম শান্ত ও স্বপন হোসাইন বিগত কমিটির সহ-সম্পাদক, রাজু আহমেদ শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, শাকোয়ান সিদ্দিক ও মহিবুল মমিন সনেট শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং মো. শোভন শাখা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরীয়ার আপন ভাতিজা।

এ ছাড়া প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদকসেবন, র‌্যাগিং ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের মতো পৃথক পৃথক ঘটনায় অভিযুক্ত ফিসারীজ বিভাগের অমর কুমার রায়, ফোকলোর বিভাগের সাইফুল ইসলাম, আরিফ বিন সিদ্দিক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সোহানুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর সাহা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের নাঈম আলী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সোলায়মান, সংস্কৃত বিভাগের আল-আমিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নজরুল ইসলাম, ব্যাংকিং ও ইন্সুরেন্স বিভাগের মিনহাজুল আবেদীন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাজ্জাদ জামান সজিব, সাবিত হাসান সৌরভ দত্ত, সংগীত বিভাগের কাওসার হামিদ, মেহেদী হাসান ও শাহরিয়ার আলম, নাট্যকলা বিভাগের লিনা মনজিলা, সমাজকর্ম বিভাগের নওরিন শর্মিলি শায়লি ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে পৃথক ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কার এবং এ ঘটনায় সতর্ক করা হয়েছে।

এ ছাড়া এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফাইন্যান্স বিভাগের মাহফুজুর রহমান রিফাত এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী বাকি বিল্লাহর হলের আবাসিকতা বাতিল, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুনের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা, আইন বিভাগের সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদের সনদপত্র বাতিল ও ক্যাম্পাসে আবস্থানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে ভাস্কর সাহা ও নাঈম আলী রাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোলায়মান সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন বেশি সক্রিয় জানিয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাঊদ বলেন, ডিসিপ্লিনারি কমিটি অনেক দিন পরপর বসে। এবার বিষয়টিকে সহজ করার জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে সাব-কমিটি করে দেওয়া আছে। কোনো ঘটনা ঘটলে যাতে কিছুদিন পরপর সাব-কমিটি বসে উপাচার্যকে একটা সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। এই কমিটি পরবর্তীতে মূল কমিটিতে প্রতিবেদন দেবে। এতে ডিসিপ্লিনারি কমিটি আরও সক্রিয় হবে বলে আমরা আশা করছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান যাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলে, কাউকে হয়রানি না করে। তবে নিজে হয়রানির শিকার হলে যেন অভিযোগ দেয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পিএনএস/সোহান

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন