পিএনএস ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বুধবার রাত সাড়ে ১১টা) শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন চলছে বলে জানা গেছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসের পার্কিং শেডের (গাড়ি রাখার স্থান) দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ইবতেশাম চৌধুরী ও দেবাশীষ বণিককে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ ডেকে নেয় গত ১৫ ডিসেম্বর।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২৯ ডিসেম্বর তাদের চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তারা সম্পদের ক্ষতিসংক্রান্ত নীতি অনুসারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা আগামী ‘স্প্রিং সেমিস্টারে’ ডিসিপ্লিনারি প্রবেশনে থাকবেন। ইউল্যাব যদি মনে করে, তাহলে তারা পুরস্কার ও আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন। চিঠিতে গ্রাফিতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মুছে ফেলার জন্য বলা হয়। সতর্ক করা হয়, পরবর্তী সময়ে আর কোনো নীতি লঙ্ঘন করলে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার দুই শিক্ষার্থীর শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানিয়েছে, গ্রাফিতি মুছে ফেলার নির্দেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের পরও আজ আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি জানান তারা। দাবিতে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করা।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। আমরাও তাদের সঙ্গে রয়েছি। তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, বাকিগুলো নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে তারা বসতে চায়। এটি নিয়ে হয়ত আগামীকালের একটি বৈঠক হতে পারে।
আন্দোলনকারী একজন শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার জন্য আমরা পাঁচ দফা দাবি দিয়েছি। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরবো না। আমরা এখন আন্দোলনে আছি। আজ আলটিমেটাম দিয়ে কালকে আবার আন্দোলনে নামব।
ইউল্যাব-এর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার লক্ষ্যে এবং উপাচার্য ইমরান রহমানের পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন।
পাঁচ দফা দাবি
১. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে অসম্মান এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির দায় নিয়ে উপাচার্য ইমরান রহমানকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
৩. ডিসিপ্লিনারি কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সবাইকে ছাত্রবিরোধী সিদ্ধান্তের দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীসহ সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ইউল্যাবের কোড অব কনডাক্ট যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।
৫. মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাকে হরণ করে, এমন সকল কালা কানুন ইউল্যাবের আইন কাঠামো থেকে বিলোপ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে, ইউল্যাবের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী আচরণ বজায় রেখেছে। উপাচার্যের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের হয়রানি, গ্রাফিতি আঁকার কারণে শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বিনষ্ট করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং সংগঠিত হবে। আন্দোলনের সময় ক্লাস, পরীক্ষা, এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে, তবে দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
ইউল্যাবের উপাচার্য অবরুদ্ধ
02-01-2025 12:50AM