ঢাবির সাদা দল ভেঙে একই নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

  30-12-2024 11:47PM

পিএনএস ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সাদা দল থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে একটি অংশ। এরই মধ্যে এই অংশ উপদেষ্টা ও অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সাদা দলের কমিটি গঠনের পর রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অংশটির নেতারা।

নতুন সংগঠনের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা, রাষ্ট্র পরিচালনায় বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা প্রদান করে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করা, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ উন্নত-সমৃদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক আরও গতিশীল ও সুদৃঢ় করা, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা, গবেষণা ও একাডেমিক প্রশাসনে গঠনমূলক মতামত ও সহায়তা প্রদান করা পুনর্গঠিত সাদা দলের লক্ষ্য।

মূল সাদা দলের বর্তমান ও প্রস্তাবিত কমিটির অযোগ্যতার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, অযোগ্য নেতৃত্ব, সুবিধাবাদী সদস্য এবং বিশেষ সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক সমাজের নিকট সাদা দল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। দলের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং বারবার দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সাদা দলের পুনর্গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

নতুন দল গঠনকে আপসকামিতার বিপক্ষে কার্যকর প্রতিবাদ হিসেবে উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, গণতন্ত্র, ন্যায়নীতি এবং শিক্ষক সমাজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার শিক্ষকবৃন্দ আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং পুনর্গঠিত এই সাদা দল হবে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষার উৎকর্ষে নিবেদিত। পুনর্গঠিত সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একটি স্বতন্ত্র প্যাটফর্ম। কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী চিন্তার ধারক- বাহক সদস্যরাই এতে যুক্ত থাকবেন। দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও আপসকামিতার বিরুদ্ধে এটি এক কার্যকর প্রতিবাদ।

মূল দল থেকে বের হয়ে যাওয়া এই শিক্ষকদের অভিযোগ, বর্তমান সাদা দলের একটি ক্ষুদ্র সুবিধাবাদী বলয় কর্তৃক আহ্বায়ক হিসেবে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম সরকারের নাম নাম প্রস্তাব হয়েছে। অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য, ইউট্যাবের মহাসচিব, জেডআরএফের ডিরেক্টর এডমিনসহ বিভিন্ন দলীয় পদে আছেন। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারায় ‘এক নেতা এক পদ’ বাস্তবায়নই সাদাদলের পেশাজীবীরা দেখতে চান।

বিএনপিপন্থি এই শিক্ষকরা মনে করেন, বিএনপির বহু পদে থাকা মোর্শেদ হাসান খান ঢাবি সাদা দলের বিশেষ সিন্ডিকেট/কোটারীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাদা দলের জাতীয়তাবাদী চরিত্র ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবেন এবং জাতির সামনে জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম সরকার গঠনতন্ত্রবিরোধী বিশেষ (বলয়) কমিটির সদস্য। তারা ১০-১৫ বছর নেতৃত্বে থাকায় বর্তমান প্রস্তাবিত পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।

দল ভেঙে গঠিত হওয়া সাদা দলের নতুন ৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন- ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম রেজা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান মিয়াজি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ শফিক আহমেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এমরান কাইয়ুম এবং ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা আল মামুন।

অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম তালুকদার। যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আলমুজাদ্দেদী আলফেছানী এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ্-উল-ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাদা দলের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের বিদ্রোহী অংশের শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন