পিএনএস ডেস্ক: আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কনিষ্ঠতম সাহাবিদের অন্যতম আনাস ইবনে মালেক (রা.)। তিনি আনসারি বা নবিজির মাদানি সহচরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনার নবমুসলিম অধিবাসীরা ছিল প্রধানত আওস ও খাজরাজ গোত্রের। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) ছিলেন খাজরাজ গোত্রের। তার বাবার নাম মালেক ইবনে নাজর, মায়ের নাম উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান বা উম্মে হারাম বিনতে মিলহান।
শৈশবেই আনাস (রা.) বাবাকে হারান। তার বাবা মালেক ইবনে নজর শত্রুর আক্রমণে নিহত হয়েছিলেন। নবিজি (সা.) মদিনায় হিজরতের সময় তার বয়স ছিল মাত্র আট বছর। একদিন তার মা তাকে নিয়ে নবিজির (সা.) দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, মদিনার সবাই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছে, আমি আমার এই ছেলেটিকেই হাদিয়া হিসেবে নিয়ে এসেছি। ওই ঘটনা বর্ণনা করে আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন মদিনায় এলেন, তখন আমি আট বছরের বালক। একদিন আমার মা আমাকে হাত ধরে তার কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আনসারি সাহাবিদের মধ্যে এমন কোনো নারী বা পুরুষ বাকি নেই যে আপনাকে কোনো উপহার দেয়নি। আমি আমার এই ছেলেটি ছাড়া আপনাকে উপহার দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাইনি। আপনি তাকে গ্রহণ করুন! আপনি যেভাবে বলেন সে আপনার খেদমত করবে।
আনাস (রা.) বলেন, এরপর আমি দশ বছর নবিজির (সা.) খেদমত করেছি। তিনি আমাকে কখনও মারেননি, কখনও ধমক দেননি এমন কি কখনও বিরক্তও হয়ে ভ্রু কুঞ্চিতও করেননি। (সুনানে তিরমিজি)
আরেকটি বর্ণনায় আনাস (রা.) বলেন, আমার মা উম্মে আনাস (রা.) আমাকে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নিয়ে গেলেন। তখন তিনি তার ওড়নার অর্ধাংশ দিয়ে আমার ইযার (নিম্নাঙ্গের পরিধেয়) এবং বাকি অর্ধাংশ দিয়ে আমার চাদর (উর্ধ্বাঙ্গের পরিধেয়) তৈরি করেছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আমার ছেলে ছোট্ট আনাস, আমি তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি, সে আপনার সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
পাশাপাশি তার মা তার জন্য নবিজির (সা.) কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, আল্লাহর কাছে আমার এই ছেলের জন্য দোয়া করুন!
নবিজি (সা.) দোয়া করলেন,
اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ
হে আল্লাহ! তাঁর ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দিন!
পরবর্তী জীবনে এ হাদিস বর্ণনার সময় আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ এখন আমার সম্পদ অনেক আর আমার সন্তান ও নাতী-নাতনীর সংখ্যা এখন একশ’র কাছাকাছি। (সহিহ মুসলিম)
আনাসের (সা.) জীবনেও আল্লাহ বরকত দিয়েছিলেন। তিনি হায়াত পেয়েছিলেন একশ’ বছরেরও বেশি। অর্থাৎ নবিজির (সা.) ওফাতের পর তিনি প্রায় আশি বছর জীবিত ছিলেন। খেদমতে নিয়োজিত থাকার কারণে নবিজির (সা.) জীবনকালে তার সান্নিধ্যও তিনি অন্য অনেকের চেয়ে বেশি পেয়েছিলেন। তাই নবিজির বরকতময় বাণী এবং তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা পরবর্তীদের কাছে বর্ণিত হয়েছে হজরত আনাসের (রা.) সূত্রে। সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের অন্যতম তিনি। বাকী ইবনে মাখলাদ কুরতুবি (রহ.) তার মুসনাদে আনাসের (রা.) সূত্রে বর্ণিত ২২৮৬টি হাদিস সংকলন করেছেন।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
আনাসের (রা.) জন্য নবিজির (সা.) দোয়া
07-09-2024 08:09PM