পিএনএস ডেস্ক: জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সব মিলিয়ে বাংলাদেশ। আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, ভালোবাসা, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, বোঝাপড়া অনেক মজবুত। আমাদের এই সম্পর্কের মধ্যে মাঝে-মধ্যে ফাটল ধরাতে চায়। আমরা যে সুখে আছি, শান্তিতে আছি, অনেকের ভালো লাগে না।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাঠে তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামিক সোসাইটি লালমনিরহাট এ মাহফিলের আয়োজন করে।
মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, তাফসির মাহফিলের আয়োজন করলে হিন্দু ভাইয়েরা কোনো ডিস্টার্ব করে না। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, ভালোবাসা আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। আমি যদি বলি আপনারা হাত তোলেন। শত শত হাত এখানে উঠবে, কিন্তু আমি বলতে চাই না। খুলনায় কয়েকশো হিন্দু ভাইয়েরা আসছে আমাদের আলোচনা শুনতে। আলহামদুলিল্লাহ। অনেক বৌদ্ধরা বসেন আমাদের আলোচনা শুনতে। আমাদের অমুসলিম ভাইদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। আমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। ইসলামের সৌন্দর্য এমন করে ফুটিয়ে তুলতে হবে যাতে করে অমুসলিম ভাইয়েরা কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা নেই। আমরা ভাই ভাই। কিছু দুষ্টু লোক আছে, তারা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাতে চায়। মাঝেমধ্যে ঝগড়া লাগাতে চায়। পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনায় হামলা চালানো হয়। এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলোতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই। দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। সব সময় ঐক্যবদ্ধ থেকে দুর্বৃত্তদের কালো হাত ভেঙে দিতে ১ ঘণ্টাও লাগবে না।
আজহারী বলেন, হিন্দুরা পূজা করে, হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানের দিন আমরা মাহফিল করি না। যেদিন আমাদের তাফসিরুল কোরআন মাহফিল হয় ওই দিন তারা পূজা অনুষ্ঠান করে না। হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানে মাদরাসার ছাত্ররা গিয়ে পাহারা দেন। গোটা বিশ্বে এ রকম নজির বিরল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মাদরাসার ছাত্ররা গিয়েই পাহারা দেয়। গোটা বিশ্বে এই নজির কোথায় পাবেন না।
মাহফিলে তিনি ইসলামের আলোকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে আলোচনা করেন। কয়েক লাখ মুসল্লি এই মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে লালমনিরহাটের শেখ শফি উদ্দিন কমার্স কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে অবতরণ করেন মিজানুর রহমান আজহারী। এ সময় ভক্তরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে এই মাহফিলকে ঘিরে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই মাহফিলের মূল মাঠে কম্বল, চাদর নিয়ে অবস্থান নেন মুসল্লি ও ভক্তরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন চাদর-কম্বল নিয়ে রাতের কনকনে শীতে মাঠেই রাত্রিযাপন করেন।
আয়োজক কমিটির প্রধান ও মাহফিলের সভাপতি আব্দুল হাকিম জানান, মাহফিল ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক আনসার, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবকের বিশাল কর্মী বাহিনী টহলে রয়েছে।
তিনি জানান, মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। মাহফিলে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। মূল প্যান্ডেল ছাড়াও মোট পাঁচটি মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। অনেকেই মাঠে ঠাঁই না পেয়ে এলাকায় প্রজেক্টরে দেখেছেন আজহারীর মাহফিল।
এসএস
ঐক্যবদ্ধ থেকে দুর্বৃত্তদের কালো হাত ভেঙে দিতে ১ ঘণ্টাও লাগবে না
18-01-2025 05:53PM