পিএনএস ডেস্ক: দুপুরে মাত্র দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায় এক মণ গরুর কালাভুনা। চুইঝালের এই কালাভুনা বিক্রি হয় গোপালগঞ্জের আমজাদ শেখের হোটেলে। কালাভুনা বিক্রি করেই আমজাদ মাসে আয় করেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। এক মণ গরুর মাংসের পাশাপাশি প্রতিদিন ১০ কেজি দেশীয় মাছের ঝোলা ও ৩০ কেজি দুধের পায়েসও বিক্রি করেন আমজাদ।
আমজাদের হোটেলে প্যাকেজ আকারে বিক্রি হয় চুইঝালের কালাভুনা। পর্যাপ্ত ভাত, দুই প্রকার ডালসহ চুইঝাল আর রসুন দিয়ে এক প্লেট কালাভুনা বিক্রি হয় ২২০ টাকায়। খাবার শেষে দেওয়া হয় আমজাদের নিজ খামার থেকে উৎপাদিত দুধ আর সাগুদানা দিয়ে তৈরি বিশেষ স্বাদের এক বাটি পায়েস।
ভিন্ন স্বাদের কালাভুনা তৈরি হয় বেশ যত্নসহকারে। ১২ জন কর্মচারী সকালের সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করেন মাংস কাটা ও ধোয়ার কাজ। এরপর মসলা কাটাকাটি শেষে জালানো হয় চুলা। বড় কড়াইয়ে মাংস ঢেলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় মসলা, চুইঝাল ও রসুন। এরপর বড় খুনতি দিয়ে অনবরত নাড়তে হয়। নির্ধারিত সময়ে মাংস ভুনা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামানোর পালা।
এরপর বড় কড়াই থেকে পরিমাণ মতো মাংস নিয়ে ঢালা হয় আলাদা চুলার তাওয়ায়। সেখানে ভুনা মাংস ও সিক্রেট মসলা দিয়ে সরিষার তেলে দীর্ঘক্ষণ ভাজার পর তৈরি হয় চুইঝালের কালাভুনা। চুলার ওপর তাওয়া থেকেই পরিবেশন করা হোটেলে আসা ভোজনরসিকদের কাছে।
শুধু গরুর কালাভুনা নয়, প্রতিদিন সকালে নদী থেকে দেশীয় মাছ জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেই মাছ আর চুইঝাল দিয়ে রান্না করা হয় তরকারি। প্রতিদিন এক মণ গরুর মাংসের কালাভুনার পাশাপাশি আরও ১০ কেজি মাছের তরকারি বিক্রি করেন আমজাদ।
কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে গোপালগঞ্জ সদরের হরিদাসপুর ফেরিঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে ‘বিসমিল্লাহ হোটেল’ নামে হোটেল ব্যবসা শুরু করেছিলেন আমজাদ। শুরুর দিকে দুই কেজি গরুর মাংস বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হতো তাকে। পরে স্বাদে অনন্য ও দামে কম হওয়ায় ধীরে ধীরে ভোজনরসিকদের কাছে পরিচিত হতে থাকে আমজাদের হোটেলের চুইঝালের ভুনা মাংসের সুখ্যাতি। কয়েকবছর আগে থেকে শুরু হয় চুইঝালের কালাভুনা। এরপর থেকেই এই হোটেলের কালাভুনার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে জেলা থেকে জেলার বাইরে।
আমজাদের হোটেল এবং খামার মিলে ১৫ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। একদিন নিজের হোটেল একাই সামলাতেন। এখন হোটেলে কর্মচারীর সংখ্যা ১২ জন।
কাশিয়ানী থেকে আসা ফিরোজ নামের এক যুবক বলেন, ‘আমরা কাশিয়ানী থেকে সপরিবারে এখানে খেতে আসছি। মাঝেমধ্যেই আসা হয়। কেননা এই হোটেলের গরুর মাংসের কালাভুনা বেস্ট। পায়েসটাও দারুণ লাগে।’
ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি গরুর মাংস খাই না। তবে এখানে চুইঝালের যে মাছের তরকারি রান্না করা হয়, সেটি খেতে প্রতিদিন আসি। হোটেলের রান্নাটা মজা লাগে।’
এ বিষয়ে হোটেল মালিক আমজাদ শেখ বলেন, আমার কালাভুনায় কোনো সিক্রেট মসলা ব্যবহার হয় না। নিজেদের ভাঙানো মসলা দিয়ে রান্না করি। যেটি একদম পিউর। যে কারণে আমাদের কালাভুনায় ক্রেতারা এমন স্বাদ পান।
তিনি বলেন, হোটেলের পাশাপাশি খামার শুরু করার পরই উৎপাদিত দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি করে বিক্রি করে আসছি। ভোজনরসিকরা পায়েসটাও খুব পছন্দ করেছে।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
মাসে আয় দেড়লাখ: দুই ঘণ্টায় এক মণ গরুর কালাভুনা বিক্রি হয় আমজাদের হোটেলে
03-11-2024 09:39PM