দেশের ভবিষ্যতের জন্য ঐক্য প্রয়োজন: বক্তারা

  28-12-2024 02:26AM

পিএনএস ডেস্ক: শুধু সংস্কার এবং আগামী নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্য নয়, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কোথায় যাবে, সে জায়গায়ও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করেন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তাঁরা বলেন, কেবল নেতৃত্ব পরিবর্তিত হয়ে গেলে সব পরিবর্তন হয়ে যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিকতার পরিবর্তন না আসে। ব্যক্তি, দল কিংবা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রের অনুশীলন না হলে সংস্কার কাগজেই থেকে যাবে, বিশ্বের সেরা আইনও কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।

শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী সংলাপের ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক অধিবেশনে অংশ নিয়ে রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, লেখক-বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ। শুক্রবার ছিল সংলাপের প্রথম দিন।

সংস্কারে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে। এটুকু বলতে পারি, আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে কাজ করেছি, করব। আমরা মনে করি, জনগণকে বাদ দিয়ে ওপর থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’

বিভিন্ন সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে, এরপর সরকার সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করবে। এতে অনেক সময় লাগার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওনারা (কমিশন) যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগে বসতেন, তাহলে আরও ভালো হতো। যত বেশি সময় যাবে, আমাদের কাছে মনে হয়, সমস্যাগুলো তত বাড়বে। আসল সমস্যা তো অন্য জায়গায়। আপনি এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে?’

এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনার সেই প্রশাসন, সরকারের মেশিনারি তো পুরোপুরিভাবে এখনো ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। কাঠামোটা যদি না থাকে, শুধু ওপর থেকে চাপিয়ে দিলেই আমরা দ্রুত কোনো কিছু করতে পারব না। তাই আমাদের কাঠামোটা ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্রের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারব।’

বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়—এ ধরনের আলোচনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারটুকু করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।’

‘একাত্তরকে ভুলে না যাই’
বক্তব্যের শেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।’

ইতিহাসের উপলব্ধি থেকে নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কোথায় যাবে, এটি হলো ঐক্যের জায়গা। ইতিহাসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিবরণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের স্বপ্নের জায়গা নিয়ে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।’

সেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বলতে যেখানে সর্বজনীন মানবাধিকার থাকবে। যেখানে সমাজের নদীভাঙনের শিকার মানুষ থেকে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায়, বৈষম্যের শিকার নারী কিংবা ধর্মীয় চিন্তায় বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর সব অধিকার থাকবে। সংস্কার প্রশ্নে তাঁর মত হচ্ছে, ‘সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন। তার জন্য ঐক্য দরকার, কিন্তু সংস্কারের জন্য যে সময় দরকার, সেটা জনগণ দেবে কি না। নির্বাচনেও যেতে হবে। তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। কারণ, সর্বোত্তমটা দিতে গিয়ে উত্তমটা যাতে হারিয়ে না ফেলি।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, কাঠামোগত প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়ে অনেক আলোচনা হলেও, অর্থাৎ উপরিকাঠামো নিয়ে যতখানি আলোচনা হচ্ছে, এই দেশ-সমাজের ভিত্তি নিয়ে তত আলোচনা হয়নি। এই আলোচনা শোনা যায় না যে গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন কত হবে, সে ন্যায্য মজুরি কীভাবে পাবে, কৃষক ফসলের দাম পাবে কি না, এই মুহূর্তে মধ্যবিত্ত ৮০ টাকায় শাকের আঁটি কেমন করে খাবে? সেই আলোচনা আসেনি।’

সময়ের মধ্যে শ্বেতপত্র তৈরি করতে পারায় কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না লুণ্ঠনের মাত্রাটা কী, কী ভয়ংকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এটাকে ঠিক করতে হবে।’

‘এখনো ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে’
সংস্কার বিশাল ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। সরকারকে সেগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ দিতে হবে, তারপরই একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। সেই নির্বাচনের জন্য সংস্কারের যুক্তিসংগত সময় যতটুকু লাগে, আমরা জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তী সরকারকে সেটি দিতে প্রস্তুত আছি।’

জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে নিজ দলকে ‘দেশপ্রেমিক এবং জাতি গঠনে একটি ত্যাগী সংগঠন’ বলে ইঙ্গিত করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন জাতীয় ঐক্যের প্রশ্ন তুলি, তখন একটা দল আরেকটা দলের ব্যাপারে বক্তব্যের ক্ষেত্রে সাবধান থাকি না। এমন কোনো বক্তব্য, বিবৃতি—যা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছিল, সেই ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে—এমন কোনো বক্তব্য যা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যারা ছিলাম, তাদের কাছ থেকে আসাটা জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী আরেকটা প্রচেষ্টা মনে করি।’

এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চিন্তার পার্থক্য থাকবেই। না হলে দেশে একটা দলই থাকত। কিন্তু কমন ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে আমরা অনেক সময় হীনম্মন্যতা দেখি। জাতির কোনো কমন ইস্যুতে ঐক্য করতে কিছু ছাড় দিতে হয়, আমাকে কিছু মতের স্যাক্রিফাইস করতে হয়, সেটাতে আমরা ছাড় দিতে রাজি নই।’ এখনো ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে বলে মনে করেন তিনি।

‘বিশৃঙ্খল অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়াটা ভয়াবহ’
অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার কথা জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের যে রাজনীতিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি, সেটাকে পুরোপুরি বিদায় জানাতে পেরেছি কি না। যারা পালিয়েছে তাদের অপতৎপরতা আছে, সেটা মোকাবিলার সক্ষমতারও একটা অনিশ্চয়তা আছে। এ ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়াটা ভয়াবহ ব্যাপার হবে। এ অবস্থায় সরকারকে মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে।’

তবে নির্বাচনের সময় নিয়ে কথা আছে, নির্বাচন নিয়ে এত বেশি অনিশ্চয়তা আছে বলে মনে করেন না সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি মনে করেন, কিছু সংস্কার সরকারকে এখনই করে ফেলা দরকার। আর সংস্কারগুলো আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে।

এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্বাধীনতা–উত্তর গুম, খুন, নির্যাতন, অবহেলা-বঞ্চনার শাসনের কথা উল্লেখ করে বিগত ৫৩ বছরে দেশে ‘কিছুই হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘একজন বললেন, বাংলাদেশে ৫৩ বছরে কিছু হয়নি, সেভাবে দৃষ্টিকোণ করলে সঠিক নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম একটি দিক আছে। সাধারণ মানুষের উদ্যমী ক্ষমতা। এই জুলাই-আগস্ট, এটা কিন্তু নামীদামি ব্যক্তিরা করেনি। নামহীন ব্যক্তিরা করেছে। এই যে ৫৩ বছরের প্রতিটা সন্ধিক্ষণে এই নামহীন লোকগুলোর উদ্যমী শক্তিটাই কিন্তু সামনে চলে এসেছে।’

এ প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর বলেন, রাজনৈতিক উত্তরণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচন। যেমন রাজনৈতিক উত্তরণে নতুন প্রতিযোগী তৈরির চেষ্টা চলছে। সেখানে ছাত্রদের ওই বিষয়টা জানানো খুব জরুরি যে শেষবিচারে রাজনৈতিক ময়দানে সব প্রতিযোগীকে জনগণের আস্থা অর্জন করে কিন্তু আগাতে হবে। এটা শুধু একটা সময়ের না, প্রতিনিয়ত আস্থা অর্জনের বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে স্থিতিশীলতা আসবে না’
এবার সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবা ঠিক নয়।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি ছকে ফেলা রাজনীতিকে বদলানোর চেষ্টা করি, বৈষম্য ভাঙার কথা বলি, এই যাত্রা কোনো দিনও সহজ হবে না। খুবই কঠিন রাস্তার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তার জন্য আমাদের ধৈর্য রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, প্রথাগত বিষয়গুলো এক দিনে ভাঙা যাবে না। পরিবর্তনের দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সবাইকেই নিতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাটা সেখানে অনেক বড়। শুধু কাগজে-কলমে সংস্কার করলে হবে না, এটা চর্চা করতে হবে, যাতে মানুষ সুফল পায়।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কেবল নেতৃত্ব পরিবর্তিত হয়ে গেলে সব পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিকতার পরিবর্তন না আসে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের চর্চাটা না হলে বা মনোজগতে পরিবর্তন না এলে বিশ্বের সেরা আইনও কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।

‘ঐক্যে ফাটল না হলেও আঁচড় লাগছে’
লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ঐক্যে ফাটল না হলেও আঁচড় লাগছে। সংস্কারের প্রশ্নে সম্ভবত এখনো ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সংস্কার নিয়ে সবাই যে একমত হবেন, এমন কোনো কর্মসূচিও নেই। তাই আমরা বলি, কমপক্ষে কতটুকু সংস্কার না হলে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, গণতন্ত্রের মূল হচ্ছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। দুটো বিষয়ে আমাদের একমত হওয়া দরকার। সংস্কারের ক্ষেত্রটা দোতলা একটা ঘর হিসেবে দেখি, ওপরের তলায় দুটো কক্ষ আছে—রাষ্ট্র ও জাতীয় সমাজ। যা কিছু পরিবর্তনের কথা আমরা এখন বলছি, নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণপরিষদ নির্বাচিত হবে। তাঁরা সংবিধান গ্রহণ করবেন অথবা পুরোনো সংবিধান পরিবর্তন করবেন। সেটা আমাদের ঐকমত্যের সাপেক্ষে হবে।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই সমাজকে তৈরি করার জন্য যে জনমত গড়ে উঠেছে...স্কুল-কলেজ, জাতীয় ধর্মীয় সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন, ব্যবসায়ী সমিতিসহ সব রকমের প্রতিষ্ঠানকে বলা যায় দ্বিতীয় কক্ষ।

সকালে সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ১৮ বছর বয়সের জায়গায় ১৭ বছরে ভোটার হওয়া উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেন। এর উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ করেন, কোনো সমস্যা নেই। তবে বিনা ভোটে উচ্চকক্ষ নির্বাচন করা যাবে না। ভোটার ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি দলের ভেতরে গণতান্ত্রিকভাবে নেতা নির্বাচন না করলে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি।

‘সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ব্যবসায়ীরা’
চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় অর্থনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে মনে করেন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘তুলনামূলক সৎ ব্যবসায়ীদের যদি ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে হোঁচট খেতে পারি। ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো লুটপাটের জায়গায় চলে গিয়েছিল। সংগঠনের নেতা হওয়া মানে উনি এমপি হবেন, মেয়র হবেন, না হলে ব্যাংকের মালিক হবেন। অর্থাৎ তার উন্নতির সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। এই জায়গায় ভালো ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ থাকা দরকার।’

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘যাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এখানে, তাদের নিয়ে আমাদের খুব চিন্তা নেই।’ তিনি বলেন, ভিন্ন বাংলাদেশ করে দেখাতে হবে, কেবল বক্তৃতায় নয়।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, অনেক রাজনৈতিক দলই মঞ্চে এক রকম কথা বলে, ভেতরে আরেক রকম কথা বলে। তাদের মধ্যে যখন পলিসি লেবেলে ক্ষমতা ভাগ-বাটোয়ারাকেন্দ্রিক আলোচনা হয়, সেখানে আবার তাদের টোন ভিন্ন থাকে। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব, নির্বাচনের চ্যাপ্টারটা আমরা আলাপ-আলোচনার টেবিলে রাখি। পাবলিকলি খুব বিতর্ক বা পাবলিকলি নিয়ে না আসি। আন্দোলন তো কিছুদিন আগেই করলাম। ভোটের জন্য কেন ৫ আগস্টের মতো আন্দোলন করা লাগবে।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে শুধু দুটি দলের বন্দোবস্তের জায়গা হবে না। কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে কেন্দ্র করে রাজনীতি হবে না।’

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের প্রতি সহনশীল ও পরমতসহিষ্ণু হওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার। সেই নির্বাচনের জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকু দ্রুত সংস্কার চায় বিএনপি।

সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তরুণদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন-বাণিজ্য যখন হয়, তখন রাজনীতি ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়। আমরা যদি গণতান্ত্রিক উত্তরণ চাই, পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই, তাহলে আমাদের ও আমাদের রাজনীতিবিদদের মানসিকতা-দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসতে হবে। বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যদি পরিবর্তন আসে, তাহলেই এর পরিবর্তন আসবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ, গণপূর্ত ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মামুন আহমেদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন