ডেলিভারির সময় নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন

  04-03-2025 09:14PM

পিএনএস ডেস্ক: পাবনায় এক প্রসূতি প্রসবকালে নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, গর্ভে থাকতেই নবজাতক মারা গিয়েছিল। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে নবজাতকের মাথা বের করা হয়।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের লেবার গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় জ্যেষ্ঠ গাইনি চিকিৎসক ডা. নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেনি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী হাসপাতালের লেবার গাইনি ওয়ার্ডের ২১নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শিউলী খাতুন (৩৫)। তিনি পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাই প্রবাসী রমজান খাঁর স্ত্রী। দুই সন্তানের জননী শিউলী এবার তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন।

হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গর্ভবতী মা প্রথম থেকেই পাবনার গাইনি চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌস শানুর নিয়মিত রোগী ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার ভোররাতে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেহরির পরপরই ডা. শানুর শহরের বাসার চেম্বারে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে দেখার পর অবস্থা জটিল মনে করে চিকিৎসক তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পরামর্শ দেন।

এ সময় রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি পরে জানতে পেরেছেন তারা। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেটের ভেতরে রয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা বের করা হয়৷

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। গাইনি চিকিৎসক নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। এরপরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সহকারী পরিচালক আরও বলেন, রাতে বা সকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ডেলিভারির কাজটি করা উচিত ছিল। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ যারা ছিলেন তাদেরকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি। সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী হয়েছিল।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. জাহিদুল ইসলাম ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা মাসুর।

ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নার্গিস সুলতানা বলেন, এই নারীর পেটে যে বাচ্চা ছিল সেটি মৃত অবস্থায় ছিল। মৃত বাচ্চা নিয়েই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পেটের বাচ্চার বয়সও পরিপূর্ণ ছিল না। সবেমাত্র সাত মাসে পড়েছে। সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তার জন্য কি কি করণীয় সেটির ব্যবস্থা করেছি।

ডা. নার্গিস সুলতানা আরও বলেন, পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়াতে তার শরীরের কোনো কিছুই শক্ত ছিল না। এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের ওপরে ও পা নিচের দিকে ছিল। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোড়ে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা ছিঁড়ে যায়। পরে সিজার করে তার পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ (মাথা) বের করা হয়। এ ঘটনা কেন হয়েছে, কোনো অসাবধানতা ছিল কিনা, সেটি তদন্ত করে দেখছি আমরা।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন