পিএনএস ডেস্ক: সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে অটোরিকশায় তুলে ভুল পথে নিয়ে এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মেয়েটি লাফ দিয়ে অটোরিকশা থেকে নেমে নিজেকে রক্ষা করেছে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করে দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, আহত মেয়েটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ডান চোখ, কপাল, গাল, হাত থেঁতলে গেছে।
এদিকে জেলায় শাল্লায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পৃথক দুটি ঘটনাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দিরাইয়ের আহত মেয়েটির মুখের ডান পাশ থেঁতলে আছে। ডান চোখের চারপাশ ফুলে বন্ধ হয়ে গেছে চোখ। হাসপাতালের দায়িত্বরত এক সেবিকা বলেছেন,‘ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।’
মেয়েটি জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু কাপড় কেনার জন্য তারা তিনজন দিরাই বাজারে এসেছিল। অন্য দুজনের কেনাকাটা শেষ হওয়ায় তারা আগেই চলে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মেয়েটি কেনাকাটা শেষে বাড়িতে যাওয়ার জন্য দিরাই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে একটি অটোরিকশায় ওঠে। সেখানে তখন মানুষের ভিড় বেশি ছিল। এ সময় আরও দুই যুবক দুদিকে ওঠে পড়ে। এরপরই চালক অটোরিকশা ছেড়ে দেন। কিছুদূর যাওয়ার পরই মেয়েটি দেখতে পায় তাকে নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের দিকে যাচ্ছে। তখনই চালককে অটোরিকশা থামাতে বলে সে। এই কথা বলার পরই পাশে থাকা দুজন তাকে ঝাপটে মুখ চেপে ধরে মুঠোফোন কেড়ে নেয়। তখন মেয়েটি তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। এভাবে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে অটোরিকশা দিরাই-সুনামগঞ্জ সড়কের গণিগঞ্জ এলাকায় পৌঁছে। এসময় জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে মেয়েটি চলন্ত অটোরিকশা থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
মেয়েটির বাবা জানান, রাত ৯টার দিকে তার এক আত্মীয় ফোন করে তাকে এ বিষয়টি জানান। তার মেয়েকে গণিগঞ্জ এলাকায় আহত অবস্থায় সড়কের পাশে পাওয়া গেছে। সেখানে একজনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এরপর তারা মেয়েকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতে ১১টায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েটি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে, বাবা একজন কৃষক।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহর থেকে একজন শিক্ষক ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। এর আগে কেউ জানাননি। আমরা মেয়েটির গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখছি।’
এ দিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাল্লায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী বাড়ির সামনে কাজ করার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত যুবক একই গ্রামের প্রতিবেশী সুদর্শন দাসের ছেলে মানিক লাল দাস (৩০)। তবে বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন মাতব্বররা।
স্থানীয়রা জানান, সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জোর চেষ্টা করছেন গ্রামের মাতাব্বর রণজিৎ সরকার, বকুল দাস, বিকাশ দাস, সচিন্দ দাস, রানু দাস, কৃষ্ণপদ দাস, রাজ কুমার দাস, সোম চাঁদ দাস, সুনিল দাস, ইন্দ্রজিৎ দাস, সজল দাস, আশিষসহ আরও অনেকেই। গ্রামের তিন পাড়ার মাতব্বররা সালিশ বৈঠকে ভবিষ্যতে এসব না করার জন্য অভিযুক্ত যুবককে শাসিয়ে দেন। তবে মাতব্বরদের এই সালিশে সন্তুষ্ট নন ভুক্তভোগীর পরিবার ও অধিকাংশ মানুষ।
গ্রামের রণজিৎ সরকার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছিলাম, দ্বিজেন্দ্র মেম্বারও বিচারে উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমে আমরা বিষয়টি শেষ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসী বসার পর অভিযুক্ত যুবককে পঞ্চায়েতের সামনে হাজির করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পঞ্চায়েতের সামনে সে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হাজির হয়েছে।’
বিকাশ দাস বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে সমাধান দেওয়া ঠিক হয়নি। পরবর্তীতে অভিযুক্ত যুবককে ভবিষ্যতে এসব না করার শর্ত দিয়ে পঞ্চায়েত শেষ হয়। তবে আইনের দৃষ্টিতে বিষয়টি এভাবে ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হয়নি।’
শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পাশে কাজ করছিলাম। আমি লাকড়ির বস্তা নিয়ে বাড়িতে ফিরার সময় হঠাৎ করে দেখি মানিক খারাপ উদ্দেশ্যে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করতে পঞ্চায়েত ও গ্রামের মাতব্বররা অনুরোধ করেছেন।’
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটা বিষয় নজরে আসার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে অভিযোগ পাওয়া তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত লাল দাস বলেন, ‘এরকম একটি ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি গ্রামবাসী সমাধান করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।’ এ দিকে অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত যুবক মানিক লাল দাস আগেও এমন তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আগের ঘটনাগুলোও এভাবেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান স্থানীয়রা।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
ভুল পথে নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা
14-03-2025 11:26PM
