ফসল রক্ষায় ভরসার নাম কাকতাড়ুয়া!

  19-01-2024 12:47PM


পিএনএস ডেস্ক: আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেছে। তবে বদলায়নি কৃষি জমির ফসল রক্ষায় সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার। এখনো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চরাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন সেখানকার কৃষকরা।

সূত্রমতে, আদিকাল থেকে আবহমান গ্রাম-বাংলায় কৃষকরা ক্ষেতের ফসল পশু-পাখি, ইঁদুর এমনকি মানুষের কু-নজর হতে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করে তার নাম দেন কাকতাড়ুয়া। যুগ যুগ ধরে এ রকম এক অতন্দ্রপ্রহরীকে ফসলের ক্ষেতে দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক যুগেও গ্রামীণ জনপদে এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের যেন অভাব নেই। তেমনই বিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে মানুষের আকৃতি সদৃশ্য কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বাসুরচর গ্রামে গেলে কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, লম্বা একটি বাঁশের খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট উপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় পেঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য উপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়।

এরপর ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে। ডিম্বাকৃতির অংশটিকে ঢেকে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি দিয়ে। সেই হাঁড়িতে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেওয়া হয় চুন বা চক দিয়ে। যা দেখে ভয় পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে থাকে। এই কাকতাড়ুয়াকে ফসলি জমির মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

তিনি আরো জানান, অনেকের বিশ্বাস বাড়ন্ত ফসলের দিকে পথচারীর কু-দৃষ্টি থেকে কাকতাড়ুয়া রক্ষা করে। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে ক্ষেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না। চলতি মওসুমে কৃষকের আবাদকৃত পটল,বেগুন, মরিচ, আলু, পেঁয়াজ, শসা, টমেটো ইত্যাদি ফসলি জমিতে বেশি ঐ কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করতে দেখা যায়।

উপজেলার জামাইল গ্রামের কৃষক নবী হোসেনসহ অনেকেই জানান, কাকতাড়ুয়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে দাঁড় করা মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। যা ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশে জমিতে এটা রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ, যা ভয় দেখানোর উদ্দেশে তৈরি করা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবুও উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার অনেক কৃষি জমিতে এমনি কাকতাড়ুয়া দেখা যায়। অনেকের ধারণা তাদের ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া দাঁড়ানো থাকলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না, এমন বিশ্বাস থেকেই কৃষকরা এটি জমিতে স্থাপন করে থাকতে পারেন।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন