চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস করছিল তিন ভাই!

  12-02-2018 01:23AM

পিএনএস ডেস্ক: এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেই, কেউ তাদের ধরতে পারবে না- এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল আপন তিন ভাই আহসান উল্লাহ (১৯), আমান উল্লাহ (২৪) ও বরকত উল্লাহ (২৬)।

উল্লাহ বাহিনীর শুধু ঘোষণাই ছিল না; তারা এবারের এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে এবং তা বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা। তবে নিজেদের প্রযুক্তিবিশারদ ভাবলেও তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি।

প্রশ্নপত্র বিক্রি করা দুই লাখ দুই হাজার চারশ' টাকাসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে তারা গ্রেফতার হয়েছে। গত তিন ভাইসহ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত মোট ১৪ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি ও থানা পুলিশ।

গ্রেফতার অপর ১১ জন হলো- সালাউদ্দিন, কদমতলীর ধনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহাত ইসলাম, জাহিদ হোসেন, হাজারীবাগের শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র আবির ইসলাম নোমান, শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী সুজন, তিতুমীর সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র আল আমিন ও সুফল রায় ওরফে শাওন, সাইদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফাহিম ইসলাম ও এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিব রহমান।

রোববার আদালতে হাজির করে তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। পরে আদালতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে ব্যবহূত ২৩টি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এতে প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, আহসান, আমান ও বরকত উল্লাহ আপন ভাই। আহসান মগবাজার এলাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং আমান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার এনায়েত নগরে। তবে তিন ভাই রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় থাকে। তারা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে গ্রুপ খুলে অ্যাডমিন পরিচালনা করত। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে তারা ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘোষণা দেয়।

তিনি জানান, এর আগে তারা আইডি খুলে প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে শত শত শিক্ষার্থীকে নিজেদের গ্রুপের সদস্য করে। প্রশ্নপ্রতি পাঁচশ' টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। গ্রেফতারের পর এসএসসি পরীক্ষার গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা পাঁচটি গ্রুপের অ্যাডমিন। তাদের একাধিক ফেসবুক পেজ রয়েছে। তিন ভাইসহ গ্রেফতার ১৪ জনই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। অপর ১১ জনেরও অর্ধশত গ্রুপ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আবদুল বাতেন আরও বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা সঠিক। তবে পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট আগে তা ফাঁস করা হয়। কারণ প্রশ্নপত্র প্যাকেটে সিলগালা করে সংরক্ষিত থাকে ডিসি অফিসে। সেখান থেকে পরীক্ষার দিন যায় কেন্দ্রে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের সিলগালা করা প্যাকেটটি খোলা হয়। সেখান থেকেই মোবাইল ফোনে কেউ প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপের অ্যাডমিনদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এমসিকিউ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ কাজ বেশি হয়। কিন্তু সেই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের দেখার সুযোগ থাকে না। কারণ এর আগেই তারা পরীক্ষার কক্ষে চলে যায়। বেশিরভাগ সময় পরীক্ষার দিন সকালে, কখনও কখনও পরীক্ষার আগের দিন রাতে একেক গ্রুপ একেক ধরনের প্রশ্নের সেট বিক্রি ও সরবরাহ করতে থাকে, যা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

তিনি জানান, কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র খোলা ও কক্ষে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে যেসব শিক্ষক, অফিস সহকারী ও পিয়ন জড়িত, তাদের মোবাইল ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা বোর্ডের কারও সম্পৃক্ততা এ পর্যন্ত পাননি বলেও জানান আবদুল বাতেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় রাজধানীর চারটি থানায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী ও শেরেবাংলানগর থানায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ। নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ থানায় পৃথক দুটি মামলার বাদী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কর্তৃপক্ষ।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন