রেমিট্যান্সে সুখবর

  02-02-2018 07:09AM


পিএনএস ডেস্ক: নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৩ লাখ ডলার; যা প্রায় ৩৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রবাসী আয় বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে জনগণও বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এরই প্রভাব পড়েছে সার্বিক রেমিট্যান্সে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, রেমিট্যান্স আয় পাঠাতে বেশকিছু ডিজিটাল অবৈধ পথ তৈরি হয়েছিল। এসব জায়গায় আমরা কাজ করেছি। আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করেছি। রেমিট্যান্স আসার কয়েকটি অবৈধ চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, টাকার মূল্যমান কমে যাওয়াও রেমিট্যান্স বাড়ার অন্যতম কারণ। টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্যোগী হচ্ছেন। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রেমিট্যান্স এসেছে ৮৩১ কোটি ২১ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৭১৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। সাত মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ধরেই নিম্নমুখী ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকলেও সেপ্টেম্বরে পুনরায় কমে যায় প্রবাসী আয়। অক্টোবর থেকে প্রবাসী আয় আবার বাড়তে থাকে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী প্রবণতায় সরকারের সর্বমহলে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। রেমিট্যান্স বাড়াতে মাশুল না নেয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সর্বশেষ হুন্ডি রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বিতরণের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ জন এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রবাসীরা ৮৩১ কোটি ২১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে জুলাইয়ে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ, আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ, নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ এবং সর্বশেষ জানুয়ারিতে ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে মাত্র এক কোটি ১৩ লাখ ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০২ কোটি ৪১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ২৭ লাখ ডলার।

প্রসঙ্গত, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিট্যান্স কমে যেতে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে গিয়ে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে আসে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলার, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন