ফাটল আতঙ্কে ঢাবির শিক্ষার্থীরা

  29-12-2017 04:16PM

পিএনএস ডেস্ক:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনেক হলের শিক্ষার্থীরা ফাটল আতঙ্কে ভুগছেন। অনেক ভবনের ভগ্নদশা। ভেঙে পড়েছে ছাদ, দরজা ও বারান্দার রেলিং। প্রায় হলের এমন কোনো কক্ষ নেই যেখানে ফাটল নেই। এমতাবস্থায় আবাসিক শিক্ষার্থীরা সবসময় ফাটল অাতঙ্কে ভুগছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব হলে থাকেন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পের ঘটনায় এসব আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই হল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

সরেজমিন দেখা যায়, শামসুন্নাহার হলের তিনটি ভবনের প্রতিটিই ধুকছে। পলেস্তারা খসে পড়তে দেখা গেছে। প্রতিটি ভবনেরই করুণ দশা। হলের এমন কোনো কক্ষ নেই, যেখানে ফাটল নেই।

দর্শন বিভাগের ছাত্রী সায়মা হাসান বলেন, দুই বছর ধরে হলে আছি। তেমন কোনো সংস্কার করতে দেখিনি। যদিও বহু আগে থেকেই এমন অবস্থা চলছে। দিনদিন অবনতি হচ্ছে।

কয়েক দিন আগে ওই হলের ভবনের নিচতলায় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমিন জিনাত খুশবু। পলেস্তারাটি তার ডান হাতে পড়লে আঘাত পান তিনি। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষ সংস্কারের কথা বললেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এরকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা শুধু শামসুন্নাহার হলে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলেরও।

জহুরুল হক হলের প্রধান ভবনের তিনটি ব্লকের সব কয়টি দেয়ালে ফাটল ধরেছে। আবার কোথাও ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে। তা ছাড়া হলের বারান্দা এবং পুরোনো ভবনগুলোর ছাদের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে দেয়াল ও ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। হলের টিনশেড থেকে মূল ভবনে আসার বারান্দার ছাদের অনেক স্থান খসে পড়ছে।

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রধান ভবন। ছয়তলা এ ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভবনটিতে লিফট থাকলেও সেটি নষ্ট হয়ে আছে বহুদিন ধরে।

শহীদুল্লাহ হলের টয়লেটগুলোর অবস্থাও বেহাল। কোনোটার পলেস্তারা খসে পড়েছে। আবার কোনো কোনো টয়লেটের ওপরের পাইপলাইন থেকে পানি পড়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মূল ভবন থেকে ক্যান্টিনে যাওয়ার বারান্দার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং পিলারগুলো ফেটে গেছে।

২০১৪ সালের ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের টিভিকক্ষের ছাদের অংশ ধসে পড়ে। জগন্নাথ হলের পুরোনো ভবনের অবস্থাও নড়বড়ে। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে জগন্নাথ হলে ঘটে যায় ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা। ওই দিন প্রাণ হারান হলের ছাত্র ও কর্মচারীসহ ৩৯ জন। শিক্ষার্থীদের মতে এগুলো খুব তাড়াতাড়ি সংস্কার করা না হলে আবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

পলেস্তারা খসে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শিক্ষার্থী শুভ্রা দাস ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপে লেখেন, আমার উপর কয়েক ইঞ্চি নিচে প্লাস্টার খুলে পড়েছিল। এতে আমার এক সেকেন্ডে বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মো. আক্রাম হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। প্রধান প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন। আমি বাইরে আছি।

প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম আফজালুল হককে একাধিকবার ফোন দিলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, পুরোনো ভবনগুলোতে এমন সমস্যা আছে। এগুলো দ্রুতই সংস্কার করা হবে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন