‘ঘুমের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসার বাড়ছে’

  19-03-2024 02:36AM

পিএনএস ডেস্ক : সুস্থ ও ভালো জীবনযাপনে জন্য ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিকভাবে ঘুম না হওয়ায় একজন মানুষের চাকরি ও যৌন জীবন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাজে প্রভাব ফেলে। ঘুমের সমস্যার কারণে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যানসারের মতো রোগও বাড়ছে বলে জানিয়েছন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি ঘুমজনিত স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগের কারণে মৃত্যু হতে পারেন বলে জানিয়েছেন তারা।

সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবের হাউজি রুমে অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ আয়োজিত 'ঘুম ও নাক ডাকা' বিষয়ক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

আলোচকরা বলেন, ভালো থাকার জন্য ভালো ঘুম হওয়া একান্ত প্রয়োজন। অনেকেই আছেন যাদের ভালো ঘুম হয় না। আমেরিকার জাতীয় নিদ্রা ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে বড়দের মধ্যে শতকরা ৬০ জনই সপ্তাহে দুইরাত বা তার বেশি সময় ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগেন। শতকরা ৪০ জনের বেশি লোক মাসে অন্তত দুইদিন অতিদিবা নিদ্রালুতায় আক্রান্ত হয়ে দৈনন্দিন কাজে বাধাগ্রস্ত হন। সপ্তাহে দুদিন এ ধরনের সমস্যায় পড়েন, এমন আছেন শতকরা ২০ জন।

আমেরিকায় অন্তত ৪ লাখ লোক নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভোগে। বড়দের ৫ ভাগ স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত। শিশুদের ভেতর এ হার ২-৩ ভাগ। তবে যেসব শিশুরা নাক ডাকে, তাদের ভেতর স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগী আছে ১০-২০ ভাগ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

তিনি বলেন, স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর প্রকার ও তীব্রতার ওপর। এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ও সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রমণের ওপর নির্ভর করে। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া ব্রেন বা মস্তিষ্কের কারণে হয়। এর মূল কারণ সাধারণত হার্ট ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর এবং এ ধরনের অ্যাপনিয়ার চিকিৎসার মানে ওই সব রোগের চিকিৎসা করা।

এজন্য অভ্যাসগত জীবনযাত্রার কিছু দিক পরিবর্তন করতে হবে। যেমন, শোয়ার স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, চিত হয়ে শুয়ে থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়ে। সে জন্য একপাশে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যদি সাইনাস বা ফুসফুসের ফ্লেমের কারণে নাক বন্ধ থাকে তাহলে যেদিক দিয়ে বন্ধ থাকে তার বিপরীত দিকে কাত হয়ে শোয়া ভালো।

বালিশ দিয়ে ঘুমালেও খুব বেশি নরম বা ফোম জাতীয় তুলার বালিশ দিয়ে না শোয়া ভালো এবং বুকে জড়িয়ে ধরার বালিশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে-শোয়ার বালিশ চার ইঞ্চি উঁচু থাকা ভালো। ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে। মেদ ভুঁড়ি বেশি থাকলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। শরীরের ১০ ভাগ ওজন কমাতে পারলে ২৫ ভাগ স্লিপ অ্যাপনিয়া এমনিতেই কমে যায়।

এ ছাড়া অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকা ও ঘুমের ওষুধ সেবন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। টনসিলের প্রদাহ থাকলে তা যাতে রাতের বেলায় একটু স্থিতি হয়ে থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন নিয়মিত ব্যায়ামের মধ্যে হাঁটা, সাঁতারকাটা এবং সাইকেল চালানোই সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম বলে জানান অধ্যাপক মনিলাল।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এমিরেটস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিকমতো ঘুম না হলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে সন্ধ্যার পর চা কফি খান। এতে তাদের ঘুম হয় না। আবার অনেকে না খেলে ঘুম হয় না। অনেকের এ ধরনের বিপরীতমুখী আচরণ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ ওষুধের মাধ্যমে ঘুমের চেষ্টা করেন। আমাদের স্বাভাবিক চেষ্টার মাধ্যমে ঘুমের চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য দিনে ঘুমানো যাবে না।

সন্ধ্যার পর চা-কফি খাওয়া যাবে না। বিষন্নতা, মেনিয়ার চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সঠিকভাবে ঘুম না হওয়ায় ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপসহ নানা রোগের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘুমের নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাচ্চাদের তিন ধরনের সমস্যা হয়। স্লিপ টেরর, স্লিপ ওয়াকিং, স্লিপ টকিং। ঘুমের মধ্যে বোবা ধরা একটা কমন সমস্যা। অনেকের ধারণা বুকের উপর জ্বিন-পরী এসে বসে নাক চেপে ধরে, ধরতে গেলে দৌড় দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান একে স্লিপ প্যারাইসিস বলে।

ধর্মীয় আচার মেনে চলা ও মেডিটেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘুমের জন্য মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধিবিধান উপকারী হতে পারে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা ঘুমের আগে নামাজ পড়ে ঘুমাতে পারেন। অন্য ধর্মের লোকজন তাদের মতো করে ধর্মীয় আচার পালন করবেন। এতে মন প্রশান্ত থাকে। ঘুম ভালো হয়। মেডিটেশনও এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশে সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম খোরশেদ আলম মজুমদার। সেমিনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্লিপ অ্যাপনিয়া ও ঘুমের সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তিরা নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চান।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন