‘হিজাব প্রতি মুহূর্তে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়- আমি একজন মুসলিম’

  30-09-2017 11:26AM


পিএনএস ডেস্ক: আট মাস আগে আমি একদিন জেগে উঠলাম এবং হিজাব পরা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি বুঝতে পারি আমার এই সিদ্ধান্ত আমার জীবনের প্রতিটি দিককে অনিবার্যভাবে প্রভাবিত করবে। কিন্তু আমি এর তোয়াক্কা করিনি। আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম যে আমি ‘শুধুই অনুশীলন করছি’।

কিন্তু আমি জানতাম, আমি এটি আর খুলছি না। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য স্বাভাবিক চুলের ভিডিও তৈরি করছিলাম। আমাকে যারা চেনে তাদের কাছে এটি একটি অভিঘাত হিসাবে এসেছিল। কিন্তু আমার এই পছন্দ নিয়ে আমি কখনো কোন অনুশোচনা করিনি। হিজাব পরা এবং জীবনধারার সঙ্গে তা খাপ খাইয়ে নেয়া নিজের সম্মতিতেই হয়েছে। এটি এমন কিছু বিষয় যা আমি সবসময় নিজের জন্য চেয়েছি কিন্তু কখনো কল্পনাও করা হয়নি যে এটি এতো শিগগিরই আসছে।

আপনি যখন পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশে বাস করেন, তখন এটি অনেকটাই একটি ভিন্ন জগৎ। এখানে লোকজন হিজাব দেখে অবাক হচ্ছেন, দোকানগুলোতে এসব বিনয়ী পোশাক পাওয়া যায় না বললেই চলে এবং আমাকে ক্রমাগত এটি ব্যাখ্যা করতে হয়, ‘না, আমি আমার মাথায় স্কার্ফ পরে গোছল করি না’। এর অর্থ হচ্ছে এটা আমার বিশ্বাসের মধ্যে দৃঢ় এবং অটল হচ্ছে।

আপনাকে স্বস্তি দিতে আমি আমার পথ থেকে সরে যাব না। কেননা আমি সন্ত্রাসী নয়। আক্ষরিক অর্থে ইসলাম হচ্ছে শান্তি। কিন্তু টিভি অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র এবং এমনকি সংবাদ কভারেজগুলোতে তা খুব কমই দেখানো হয়। যে কারণে এই গৎবাঁধা বিষয়গুলো জন্ম নিয়েছে। ২১ বছর বয়সে হিজাব পরিধান করা আমার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ ছিল; যা সম্পূর্ণই নিজের জন্য গ্রহণ করেছি। কিন্তু সমগ্র জগতের সামনে তা ছিল একটি মনস্তাত্ত্বিক রণকৌশল।


আমি আমার এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরেই। কেননা নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা আমাকে প্রচণ্ড আঘাত করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়টা ছিল আমার জন্য একটি ধাক্কা। আমার হিজাব পরার সিদ্ধান্তটি ছিল ট্রাম্পের ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং মুসলিম বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সচেতন চেতনা।

আমি প্রায় প্রতি দিনই শুনতে পেয়েছি যে অনেক তরুণীরা ভয়ের কারণে তাদের হিজাব খুলে ফেলেছে। আমরা ঘৃণা-অপরাধের গল্প শুনেছি এবং দুর্ভাগ্যবশত হিজাবি মহিলারা ছিল এর সাধারণ শিকার এবং যখন আমি হিজাব পরিধানে গর্বিত, তখন আমি আমার সম্পর্কে কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে পরিবর্তন দেখেছি।

হিজাব পরিধানের মাধ্যমে আমার ভিতর মুক্তির অভিজ্ঞতা হয়েছে। এটি প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমি একজন মুসলিম এবং আমার কর্মের মাধ্যমে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত। মানুষের সঙ্গে কথা বলা এবং পারস্পারিক যোগাযোগের মাধ্যমে তা দেখানো সুযোগ রয়েছে।

গত কয়েক মাসে আমি আমার নিজের সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি; যা আমি আমার সমগ্র জীবনেও তা শিখতে পারি নাই। বাস্তবিক পরিপ্রেক্ষিতে এটা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, এটা আসলে আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার নিজেকে অনেক বেশি ভালবাসি যেমনটি ভালবাসি আমার হিজাবকে। নারীরা যখন আমার কাছে পরামর্শের জন্য আসে কিংবা যখন তারা বলে, তাদের হিজাব পরা শুরু করার জন্য আমি তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছি, তখন আমার ভিতরে সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতি জাগায়। এমনকি যারা বছরের পর বছর ধরে হিজাব পরিধান করে আসছে- এমন নারীরা যখন আমাকে বলে যে তারা আমকে দেখে এক্সসাইটেড-এটা সত্যিই আমার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

লেখক: মার্কিন পপ গায়িকা


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন