তীরে এসে কেন মাশরাফিদের তরি ডোবে, জানালেন মনোবিদ

  18-10-2018 08:42PM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দুটি সেশন বসেছেন কানাডাপ্রবাসী মনোবিদ আলী আজহার খান। দুই দিনের অভিজ্ঞতা পরে তিনি ভাগাভাগি করেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। দুই সেশনে ক্রিকেটারদের মনোজগত পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। তবে মনোবিদের সঙ্গে এমন সেশন অবশ্যই অনুপ্রাণিত করে ক্রিকেটারদের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মনোবিদের আগমন নতুন কিছু নয়। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচজন মনোবিদ কাজ করে গেছেন বাংলাদেশ দলে। গত দুই দিন ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করছেন কানাডাপ্রবাসী মনোবিদ আলী আজহার খান। তিনি অবশ্য ২০১৪ সালে টানা হারের দুঃসময়ের পরও কাজ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ছয় ঘণ্টার দুটি সেশন শেষে আজ নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন আজহার। মুশফিকদের নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, গত চার বছরে অনেক বদলে গেছেন ক্রিকেটাররা।

কতটা বদলেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা, আজহারের মুখেই শুনুন, ‘আগের সঙ্গে যদি এখনকার তুলনা করি বলব, তারা অনেক বেশি বদলে গেছে। এখন তাদের ভেতর অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মানসিক দিক থেকেও অনেক শক্ত হয়েছে তারা।’ বদলটা অবশ্যই ইতিবাচক। খেলোয়াড়েরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে বদলেছে বলেই তো বাংলাদেশ ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে। দেশে কিংবা দেশের বাইরে সিরিজ জিতছে। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো করলেও কেন চূড়ান্ত সাফল্য মানে একটা ট্রফি জিততে পারছেন না মাশরাফিরা? বারবার কেন তীরে এসে তরি ডোবার যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় বাংলাদেশকে? এই বছরই খুব কাছে গিয়ে বাংলাদেশ ফাইনাল হেরেছে তিনবার।

মনোবিদ আজহারের কাছে এর একটি ব্যাখ্যা আছে। খুব কাছে গিয়ে হারের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটা তিনি করছেন এভাবে, ‘আত্মবিশ্বাসটা আমরা (জয়ের) খুব কাছে এসে ধরে রাখতে পারি না। আমরা একে বলি তীরে এসে তরি ডোবা। এই তীরে আসতেও অনেক গুণ লাগে। তাঁরা যখন ওই চ্যালেঞ্জে আসছে, তীরে আসার পর নৌকার ওজন যখন বেশি হয়ে যাচ্ছে, তখন আর আত্মবিশ্বাসটা ধরে রাখতে পারছে না। আমাদের সুপ্ত প্রতিভাকে আরও বেশি বিকশিত করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে আমরা সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে সবকিছু ধরে রাখতে পারি। অবশ্যই এটা একটা স্কিল। এটা জাদু বা অন্য কিছু নয়। এটা অর্জন করার জন্য চর্চা করতে হবে। আমরা যখন মনস্তাত্ত্বিক স্কিল ট্রেনিং করব প্রতিদিন, তখন মস্তিষ্কের পেশি (মেন্টাল মাসল) উন্নত হবে। এখন পর্যন্ত এটাই আমার মনে হয়েছে।’

বারবার তীরে এসে যেন তরি না ডোবে, সেটিরও কিছু সূত্র জানিয়েছেন মনোবিদ, ‘আমরা প্রায় সব দলকেই হারাচ্ছি, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এই বিশ্বাসটা যখন আরও শক্ত হবে, তখন ধারাবাহিকতা আরও বাড়বে। আমরা টুর্নামেন্টগুলোয় যখন চূড়ান্ত সাফল্যের কাছাকাছি চলে আসি, তখন কিন্তু প্রত্যাশার চাপ অনেক বেড়ে যায়। তখন মানসিকভাবে শক্ত না হওয়ায় আমরা সেটাকে (ছন্দ) ধরে রাখতে পারি না। যদি আমরা মস্তিষ্কের পেশি উন্নত করতে পারি তাহলে এটা সম্ভব।’

কঠিন মুহূর্তে মানসিক শক্তি বাড়াতে মনোবিদের পরামর্শ, শরীরী ভাষায় পিছিয়ে থাকা যাবে না। নিজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। হারলে কী হবে, সেটি ভেবে নিজের ওপর অহেতুক চাপ নেওয়া যাবে না। মোদ্দা কথা মানসিকভাবে কখনো পিছিয়ে পড়া চলবে না। ক্রিকেটে যতটা না স্কিলের খেলা, তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক—সেটিই যদি হয়, কঠিন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে শক্ত থাকাই হচ্ছে সাফল্যের সূত্র।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন