ঝিনাইদহে পাটালি গুড়ের হাট

  24-01-2019 01:03PM


পিএনএস ডেস্ক : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এলাকায় খেজুরের রস বেশি হওয়ায় গাছিরা খেজুরের গুড় পাটালি উৎপাদন করে।

আর এ গুড় পাটালির হাট শহরের নিমতলা বাসস্ট্যাণ্ডে শীত মৌসুমের সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবারে বসে। হাটের দিনে প্রচুর খেজুরের গুড় পাটালি দেখা যায় এই হাটে। তাই বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে কালীগঞ্জ গুড়ের হাট নামেও ব্যাপক পরিচিতি।

বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে এটি এখনো টিকে আছে। এই হাট এখানকার একটি ঐতিহ্য। দেশের অন্য গুড়ের হাট থেকে এই হাটে ভাল মানের গুড় ও পাটালি পাওয়া যায়। দামে তুলনামূলক কম থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের গুড় ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে ঢাকা, বরিশাল, বৃহত্তর চট্টগ্রাম, ফরিদপুর নোয়াখালী, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীসহ প্রায় ২০ জেলায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। তাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা তাদের উৎপাদিত গুড় ও পাটালি বাজারে বিক্রির জন্য আনেন।

সদর উপজেলার গান্না গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, ৩৫ বছর ধরে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। নিজের রয়েছে প্রায় ৮২টি খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে ৮-৯ কলস (মাটির তৈরি) রশ পেলে মাটির এক কলস (৮-১০) কেজি ভাল গুড় হয়। এক কলস ভাল গুড় বর্তমানে ৬৫০ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ঝোল (তরল) গুড় বিক্রি হচ্ছে এক কলস ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়। রস থেকে তৈরিকৃত পাটালি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, জেলায় উৎপাদিত খেজুরের গুড়ের ব্যাপক কদর রয়েছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে গুড় কিনে নিয়ে অন্যস্থানে বিক্রি করেন।

কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা তোবারক আলী মণ্ডল বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে হাটে আসা মোকামিদের তিনি গুড় কিনে দেন। বড় বড় মোকামীরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে ড্রামে ভরে নিয়ে যান।

রাজশাহীর গুড় ব্যবসায়ী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এখানের গুড় ও পাটালিতে রসের গন্ধ যেন লেগে থাকে। তাই প্রতি হাটে রাজশাহী থেকে কালীগঞ্জে গুড় ও পাটালি কিনতে আসি।

অন্য ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, কালীগঞ্জের খেজুরের গুড়ের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা কিনতে আগ্রহ বোধ করে। কালীগঞ্জ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ ট্রাক গুড় সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়।

ব্যবসায়ী মহির উদ্দীন বলেন, তিনি ৩৫ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে সাতমাইল, বারবাজার, ডাকবাংলা ও কালীগঞ্জে খেজুর রসের বড় গুড়ের হাট বসে। এখন কালীগঞ্জ ছাড়া অন্যান্য স্থানে তেমনভাবে খেজুর গুড় উঠে না। কালীগঞ্জের মোকামটি এখনো বড়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, জেলায় তিন লাখের মত খেজুরের গাছ রয়েছে। তবে ইটভাটার কারণে স্থানীয়ভাবে প্রতিদিনই খেজুরের গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কৃষি অফিস উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের খেজুর গাছ রোপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন