ভারতের সব ডিম এক ঝুড়িতে, বিএনপি'র প্রত্যাবর্তন ঝামেলায় ফেলতে পারে

  12-11-2023 12:40PM


পিএনএস ডেস্ক: ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগের তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। প্রথম প্রশ্ন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে কি? দ্বিতীয় প্রশ্ন- প্রধান বিরোধী দল, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কি শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে (নির্বাচনে) অংশ নেবে?

গত সপ্তাহে (আমার) ঢাকা সফর এটা স্পষ্ট করেছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাসিনা কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক শাসনকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম, যা বিএনপির জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অসম্ভব করে তুলেছে। যাদের সাথেই আমি কথা বলেছি তাদের একটি অংশ বলেছে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে বিএনপি জিতবে। তাদের মধ্যে বড়লোক (ধনী মানুষ), ভদ্রলোক (বুদ্ধিজীবী) এবং সাংবাদিকরাও ছিলেন।

আমার অবস্থানকালে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলছিল। তার সাথে ছিল কারখানায় মজুরি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ওয়াকআউট। বাংলাদেশ যে ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে তার ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক থেকে আসে। ভঙ্গুর অর্থনীতিতে (দেশটি) আরও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে। বিএনপির (সমাবেশের) মধ্যে সংঘর্ষ এবং আ.লীগের পাল্টাপাল্টি হামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ক্ষমতাসীনের বিরোধিতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছে। দুই বেগমের মধ্যে লড়াই আসলে তাদের ছেলেদের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ।

লন্ডনে তারেক রহমান এবং নিউ ইয়র্কে সজীব ওয়াজেদ, যথাক্রমে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের উত্তরাধিকারী। টাইম (ম্যাগাজিন) তার ২০ নভেম্বরের সংখ্যায় হাসিনাকে কাভার বানাবে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা তিনি সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছিলেন। ৩-৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম চাণক্য প্রতিরক্ষা সংলাপে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের চৌধুরী বলেছিলেন, (বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা) যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নয় হাসিনাকে রাজনৈতিক পছন্দ বাছাই করার জন্য চাপ দেওয়া। বিএনপির সাথে সংলাপ করতে অস্বীকার করেছেন হাসিনা। দলটিকে তিনি 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: "জো বাইডেন ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সংলাপে বসুক।"

হাসিনার অভিযোগ, বিএনপি ও তার মৌলবাদী মিত্র জামায়াতে ইসলামী (যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষিদ্ধ) শুধুই অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেছেন, বিরোধীদের টার্গেট করলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, ভিন্নমতকে কঠোর হাতে দমন করাটা অবৈধ। ভারত এই বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তারা বলছে- এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতো ঢাকাতেও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক ভারত। এ বিষয়ে নীরব রয়েছে চীনও।

নির্বাচনের তপশিল শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার আগেই হাসিনা বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ত্বরান্বিত করছেন।

ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল (যার জন্য আওয়ামী লীগ কৃতজ্ঞ)। চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন সত্ত্বেও সেখানে ব্যাপক ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে। নেপালের মনোনীত প্রার্থীকে অসন্তুষ্ট করে ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক হিসেবে হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে ভোট দিয়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কার মতো, এখানেও নীতিনির্ধারকরা বলেছেন: "আমরা নিরাপত্তার জন্য ভারত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের উপর নির্ভর করি।" ঢাকাও এসব বক্তব্য দিয়ে থাকে।

১৯৭৫ সালে মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করা সামরিক বাহিনী বর্তমানে বেসামরিক রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে তার দুই পলাতক ভাইকে সহায়তা করার অভিযোগ সহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসে।

সবমিলিয়ে মনে হচ্ছে, সেনাবাহিনী এখন দেশ শাসনে হস্তক্ষেপ করবে না। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সোহরাওয়ার্দী (অব.) কে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করাটা ছিল অস্বাভাবিক, যে রকম ছিল ২৮ অক্টোবর হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের সময় সেনা ইউনিটগুলোকে নিরস্ত্র করার রিপোর্টটাও।

আশেপাশের বেশিরভাগ দেশের মতো বাংলাদেশেও ভারত তার সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখেছে। বিএনপি'র আশ্চর্যজনক প্রত্যাবর্তন (তাকে) ঝামেলায় ফেলতে পারে।

[লেখাটি ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ট্রিবিউনে (১১ নভেম্বর) প্রকাশিত দেশটির সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক কে মেহতা'র নিবন্ধ থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত। অনুবাদ করেছেন তারিক চয়ন]


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন